চট্টগ্রাম নগরীর বর্জ্য সংগ্রহের দায়িত্ব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। ফলে পৌরকর পরিশোধের পরও এখন থেকে নগরবাসীকে এ সেবার জন্য অতিরিক্ত ফি গুনতে হবে।
ইতোমধ্যে টেন্ডারের মাধ্যমে ২৭টি ওয়ার্ডে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই বাকি ওয়ার্ডগুলোতেও একইভাবে প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেওয়া হবে। এসব প্রতিষ্ঠান টাকার বিনিময়ে বাসাবাড়ি, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, শিল্পকারখানা ও হোটেল-মোটেল থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করবে।
এতদিন সিটি করপোরেশনের নিজস্ব ৩,২৬৯ জন কর্মী এ কাজে নিয়োজিত ছিলেন। তবে চসিকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন পৌরকর দেওয়ার পাশাপাশি বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য অতিরিক্ত ফিও গুনতে হবে। তবে এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন অনেকে। তাদের অভিযোগ, পৌরকরের সঙ্গেই পরিচ্ছন্নতা খাতের অর্থ নেওয়া হয়, তাহলে একই সেবার জন্য আবার আলাদা ফি কেন?
চসিকের তথ্যমতে, নগরে প্রতিদিন গড়ে ৩,০০০ টন বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এর মধ্যে নিজেদের ব্যবস্থাপনায় সর্বোচ্চ ২,২০০ টন অপসারণ সম্ভব হয়। বাকি বর্জ্য পড়ে থাকে খাল-ড্রেনে, যা জলাবদ্ধতা, দুর্গন্ধ ও স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে। নগরীকে পুরোপুরি পরিচ্ছন্ন রাখতে এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনতেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
নতুন ফি ও রাজস্ব
চসিকের তথ্যমতে, বর্জ্য সংগ্রহের দায়িত্ব পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো ১০টি খাত থেকে টাকা আদায় করতে পারবে। এর মধ্যে রয়েছে—বাসাবাড়ির প্রতি ফ্ল্যাট থেকে মাসে ৫০ থেকে ৭০ টাকা, আর সেমিপাকা ঘরে ২৫ থেকে ৪০ টাকা; বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান থেকে মাসে ১০০ থেকে ৫০০ টাকা; শিল্পকারখানার আকার, শ্রমিক সংখ্যা ও বর্জ্যের পরিমাণ অনুসারে মাসে ৩,০০০ থেকে ১৫,০০০ টাকা; হোটেল-মোটেল ও রেস্তোরাঁর আকার ও বর্জ্যের পরিমাণ অনুযায়ী ২,০০০ থেকে ৫,০০০ টাকা এবং কমিউনিটি সেন্টার থেকে প্রতি ১০০ অতিথির জন্য ২০০ টাকা।
বিনিময়ে সিটি কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে ওয়ার্ডের ওপর ভিত্তি করে ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা রাজস্ব আদায় করবে।
গত অর্থবছরে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) পরিচ্ছন্ন কর আদায় করেছে ১৩১ কোটি টাকা। এই খাতে ব্যয় হয়েছে তাদের প্রায় ১০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে বেতন-ভাতা খাতে ব্যয় হয়েছে ৬৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। এই কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জাম কেনাকাটায় ব্যয় হয়েছে ৩৫ কোটি টাকার বেশি।
দলীয়করণের অভিযোগ
চসিকের ৪১টি ওয়ার্ডে বর্জ্য সংগ্রহের জন্য দরপত্র আহ্বান করলে এতে অংশ নেয় ১৯২টি প্রতিষ্ঠান। মূল্যায়নের পর প্রাথমিকভাবে ২৭টি প্রতিষ্ঠানের হাতে ২৭ ওয়ার্ডের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বাকি ওয়ার্ডগুলোতেও প্রতিষ্ঠান নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে।
যাচাই-বাছাইয়ে দেখা গেছে, দায়িত্ব পাওয়া ১৬টি প্রতিষ্ঠানের মালিক বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী কিংবা সমর্থক।
তাদের মধ্যে রয়েছেন—৮ নম্বর শুলকবহর ওয়ার্ডের জন্য দায়িত্ব পাওয়া মেসার্স মাতৃভূমি এন্টারপ্রাইজ, যার মালিক নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব জমির উদ্দিন নাহিদ। ৭ নম্বর পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ডের দায়িত্ব পেয়েছে নগর যুবদলের সাবেক সহসভাপতি মোহাম্মদ আলী সাকির প্রতিষ্ঠান এসআরএস এন্টারপ্রাইজ। ৩৪ নম্বর পাথরঘাটা ওয়ার্ডের দায়িত্ব পেয়েছে কোতোয়ালি থানা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন নাবিলের প্রতিষ্ঠান নাবিল এন্টারপ্রাইজ।
এদিকে, ৩৫ নম্বর বক্সিরহাট ওয়ার্ডে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক এন মো. রিমনের প্রতিষ্ঠান মেসার্স রিমন কনস্ট্রাকশন; ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি হুমায়ুন কবির চৌধুরী রুদ্রের প্রতিষ্ঠান অ্যাকুয়া রিয়েল এস্টেট লিমিটেড; ১০ নম্বর উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডে ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আলাউদ্দিনের প্রতিষ্ঠান মেসার্স মদিনা এন্টারপ্রাইজ; ৫ নম্বর মোহরা ওয়ার্ডের দায়িত্ব পেয়েছেন নগর ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি নিয়াজ মোর্শেদ খান; ৩ নম্বর পাঁচলাইশ ওয়ার্ডে যুবদল নেতা মো. ইমতিয়াজুর রহমানের প্রতিষ্ঠান গ্রিন এন্টারপ্রাইজ; ৩৬ নম্বর গোসাইলডাঙ্গা ওয়ার্ডে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সহসম্পাদক ফারহান ফুয়াদের প্রতিষ্ঠান বিন ফুয়াদ এন্টারপ্রাইজ; ৩৭ নম্বর উত্তর মধ্যম হালিশহরে সাবেক ওয়ার্ড ছাত্রদল নেতা শাহিনূর ইসলামের প্রতিষ্ঠান মেসার্স এস এ ট্রেডার্স।
এছাড়া, ৩৯ নম্বর দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডের দায়িত্বে বিএনপি সমর্থিত জামসেদ হোসেনের প্রতিষ্ঠান লাইমেক্স মাল্টি ট্রেড; ৪ নম্বর চান্দগাঁও ওয়ার্ডে মোস্তফা মো. জাবেদের প্রতিষ্ঠান মেসার্স শাহ আমানত ট্রেডিং; ৬ নম্বর পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ডে শাহজাহানের প্রতিষ্ঠান মেসার্স গাউসিয়া ট্রেডার্স এবং ২ নম্বর জালালাবাদ ওয়ার্ডে মো. জিয়া উদ্দীন জাবেদের প্রতিষ্ঠান নগর সেবা এ দায়িত্ব পেয়েছে।
অন্যদিকে, সাবেক নৌবাহিনী কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন (অব.) মহসিনুল হাবিব পেয়েছেন ৩২ নম্বর আন্দরকিল্লা এবং ৪০ নম্বর উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ডের দায়িত্ব।
প্রদা/ডিও
	    	
                                
		    





