চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ থানায় চার বছর বয়সী এক শিশুকে অপহরণের অভিযোগে মাত্র সাত বছরের আরেক শিশুর নামে মামলা গ্রহণ এবং তাকে আইনের সংস্পর্শে নেওয়ার ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়েছে। শিশু আইন অনুযায়ী ৯ বছরের কম বয়সী কোনো শিশুকে গ্রেপ্তার বা আসামি করার সুযোগ নেই, তবুও পুলিশ শিশুটিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায়। আদালতের আদেশে সে বর্তমানে গাজীপুরের টঙ্গীর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছিল এবং তিন দিন ধরে সেখানে ছিল।
ঘটনার সূত্রপাত গত ১৩ এপ্রিল। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা আনোয়ারা বেগমের চার বছরের ছেলে রামিম সেদিন হারিয়ে যায়। দীর্ঘ খোঁজাখুঁজির পরও তাকে না পেয়ে সাত মাস পর আনোয়ারা বেগম গত শুক্রবার পাঁচলাইশ থানায় অপহরণ মামলা করেন। মামলায় আসামি করা হয় সাত বছরের শিশু এবং তার ৩০ বছর বয়সী মাকে। অভিযোগে বলা হয়, তারা খেলাধুলার কথা বলে হাসপাতালের বারান্দা থেকে রামিমকে নিয়ে যায়।
মামলার পরপরই পুলিশ সাত বছরের শিশু ও তার মাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে তোলে। শিশুর বয়স এজাহারে সাত উল্লেখ থাকলেও পুলিশ কেন আইন অমান্য করে মামলা নিল এবং গ্রেপ্তার করল—তা ব্যাখ্যা করতে পারেননি থানার তদন্ত কর্মকর্তা। তিনি শুধু বলেন, “নেওয়ার সুযোগ নেই।”
শিশুর মাকে কারাগারে পাঠানো হয়, আর শিশুকে নেওয়া হয় গাজীপুরের শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে। কিন্তু ডিসেম্বর মাসব্যাপী আদালতের অবকাশ চলায় শিশুবিষয়ক ট্রাইব্যুনালে তাকে হাজির করা সম্ভব হয়নি। ফলে মহানগর দায়রা জজ আদালতে অন্তর্বর্তীকালীন আদেশে তাকে টঙ্গীতে পাঠানো হয়।
আজ রবিবার রাষ্ট্রপক্ষ শিশুটির জামিন আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন। বিচারক তাঁর আদেশে বলেন, শিশু আইন ২০১৩-এর ৪৪(১) ধারা অনুযায়ী ৯ বছরের কম বয়সী কোনো শিশুকে গ্রেপ্তার বা আটক করা অবৈধ। তাই শিশুটিকে তার বাবার জিম্মায় মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দেন।
ঘটনা নিয়ে আদালতপাড়া ও পুলিশ প্রশাসনে আলোচনা চলছে। চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আবদুস সাত্তার বলেন, এ ধরনের ভুল গ্রহণযোগ্য নয়। পুলিশ যদি জবাবদিহির মুখোমুখি না হয়, ভবিষ্যতেও এমন ঘটনা ঘটতে থাকবে।
প্রদা/ডিও





