চট্টগ্রামের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে মাত্র এক দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের কেজিপ্রতি দাম কমেছে ৪০ টাকা। বাজারে নতুন পেঁয়াজ উঠতে শুরু করা এবং ভারত থেকে আইপি (আমদানি অনুমতি) দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্ত—এই দুই কারণেই দাম কমেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
তাদের দাবি, বৃহস্পতিবার বা শনিবার যে পেঁয়াজ কেজিতে ১৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, সেই একই পেঁয়াজ এখন বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়। পাশাপাশি বাজারে মেহেরপুরি নতুন পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে ৭০–৮৫ টাকায়।
ব্যবসায়ীরা জানান, চলতি মৌসুমে দেশের উৎপাদিত পেঁয়াজই বাজারের মূল চাহিদা মিটিয়েছে। সারা বছর সরবরাহ স্বাভাবিক থাকায় কৃষক লাভবান হয়েছেন, আর আমদানি না হওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হয়ে জাতীয় অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
রোববার (৭ ডিসেম্বর) সকালে খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাইয়ের আড়তগুলো ঘুরে দেখা যায়, অনেক আড়তে নতুন পেঁয়াজ এসেছে। মেহেরপুরি জাতের এসব পেঁয়াজ আকারে পাবনা ও সিরাজগঞ্জের পেঁয়াজের তুলনায় বড়।
গত কয়েক দিন ধরে দেশি পেঁয়াজের দামে অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতি দেখা দিলে সরকার ভারত থেকে আমদানি করার সিদ্ধান্ত নেয়। শনিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ৩০ টন করে ৫০টি আইপি দেওয়ার তথ্য জানায়। এই ঘোষণার প্রভাব সঙ্গে সঙ্গেই পাইকারি ও খুচরা—দুই বাজারেই পড়ে।
চলতি বছর প্রায় পুরো চাহিদাই দেশীয় পেঁয়াজ দিয়ে মিটেছে। তবে প্রতি বছরের মতো এবারও মৌসুমের শেষ দিকে বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়। স্বাভাবিক সময়ে খাতুনগঞ্জ–চাক্তাইয়ে প্রতিদিন ১৫–১৮ ট্রাক পেঁয়াজ আসে। গত সপ্তাহে কিছুটা কমলেও এখন আবার সরবরাহ স্বাভাবিক হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, দেশে বছরে প্রায় ৩২ লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদা থাকলেও উৎপাদন হয় তার চেয়ে বেশি। কিন্তু সংরক্ষণের সমস্যা থাকায় প্রতি বছরই উৎপাদিত পেঁয়াজের একটি বড় অংশ নষ্ট হয়ে যেত। আগে যেখানে পচনের হার ছিল ৩০–৩৫ শতাংশ, কৃষি বিভাগের দেওয়া নতুন ‘এয়ার ফ্লো’ মেশিন ব্যবহারে তা কমে ৫ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। ফলে চলতি মৌসুমে সংরক্ষণজনিত ঘাটতি দেখা যায়নি।
বাংলাদেশের প্রায় সব জেলায় পেঁয়াজ চাষ হলেও পাবনা, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর, মাগুরা, মাদারীপুরসহ কয়েকটি জেলায় উৎপাদন বেশি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত তিন অর্থবছরে পেঁয়াজ উৎপাদন ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে—
• ২০২২–২৩ সালে: ৩৪ লাখ ১৬ হাজার ৯৯০ টন
• ২০২৩–২৪ সালে: ৩৭ লাখ ৮৯ হাজার ৮৮৭ টন
• ২০২৪–২৫ সালে: ৪২ লাখ ৫০ হাজার টন
২০২৫–২৬ সালে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে ৪২ লাখ ৬৪ হাজার ১০০ টন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এস এম সোহরাব উদ্দিন বলেন, প্রতি বছরই উৎপাদন চাহিদার চেয়ে বেশি হতো, কিন্তু সংরক্ষণ প্রযুক্তির অভাবে পচনের কারণে ঘাটতি তৈরি হতো। এবার নতুন এয়ার ফ্লো প্রযুক্তির কারণে সেই সমস্যা হয়নি, ফলে সারা বছর বাজারে সরবরাহ স্থিতিশীল ছিল। এখনো অনেক কৃষকের হাতে আগের মজুত পেঁয়াজ রয়েছে।