উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশে যাওয়ার বিষয়টি কিছুটা বিলম্বিত হচ্ছে। তার বর্তমান শারীরিক অবস্থা এবং দীর্ঘ বিমানযাত্রার ধকল সামলানোর সক্ষমতা বিবেচনা করে এখনই তাকে বিদেশে না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মেডিকেল বোর্ড। চিকিৎসকরা তার শারীরিক সুস্থতা ও নিরাপত্তাকেই এই মুহূর্তে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছেন।
শনিবার (৬ ডিসেম্বর) রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শক্রমে খালেদা জিয়াকে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার জন্য সর্বোচ্চ পর্যায়ের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছিলাম। কাতারের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের কারিগরি ত্রুটির কারণে আসতে পারেনি—এটা যেমন সত্যি, অন্যদিকে মেডিকেল বোর্ড মনে করেছে এই মুহূর্তে তার ফ্লাই করা সঠিক হবে না। সেজন্যই বিদেশ নেওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে।’
তিনি বলেন, বিদেশে যাওয়ার ব্যাপারে আমাদের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি রয়েছে। তবে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টার বিমানযাত্রায় হাই অল্টিটিউডে [উচ্চ উচ্চতায়] একজন অসুস্থ মানুষের শরীরে যে পরিবর্তন হয়, তার সঙ্গে খাপ খাওয়ানো সবসময় সম্ভব হয় না। তাই মেডিকেল বোর্ড মনে করছে, তাকে নিরাপদে স্থানান্তর করার মতো শারীরিক পরিস্থিতি নিশ্চিত হলেই বিদেশে নেওয়া হবে।
‘ভবিষ্যতেও হয়তো শারীরিক অবস্থাই বলে দিবে যে উনাকে কখন বিদেশে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া যাবে, অথবা নিয়ে যাওয়া হবে। আমাদের মেডিকেল অ্যাম্বুলেন্স সবসময়ই প্রস্তুত আছে। কিন্তু প্রস্তুত থাকলেও সর্বোচ্চ পর্যায়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা এবং উনার সেফটি এন্ড সিকিউরিটি—অর্থাৎ চিকিৎসাগত দিক থেকে—এটি অত্যন্ত প্রাধান্য পাচ্ছে সর্বত্রই’, বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের মেডিকেল বোর্ডের সম্মানিত সদস্যরা—যারা ইউকে, আমেরিকা, বাংলাদেশ এবং সুদূর চায়না থেকে অংশ নিচ্ছেন—সবাই কিন্তু উনার ফিজিক্যাল কন্ডিশন বা শারীরিক অবস্থার ওপরই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।’
ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও চীনের চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত বোর্ড কাজ করছে। চিকিৎসার সার্বিক সমন্বয়ের জন্য ডা. জোবায়দা রহমান লন্ডন থেকে ঢাকায় এসেছেন এবং তিনি মেডিকেল বোর্ডের প্রতিটি বৈঠকে সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছেন। এছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসার খোঁজখবর রাখছেন এবং চিকিৎসকদের মতামতকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য না ছড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন ডা. জাহিদ। তিনি বলেন, ‘দয়া করে গুজব ছড়িয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করবেন না। দেশনেত্রীর প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার নিদর্শনস্বরূপ সঠিক তথ্যের বাইরে কিছু প্রচার করবেন না।’
এছাড়া হাসপাতালে নেতাকর্মীদের ভিড়ের কারণে অন্য রোগী ও তাঁদের স্বজনদের সাময়িক অসুবিধার জন্য তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন এবং সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
ডা. জাহিদ হোসেন আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও আল্লাহ তাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। আমরা আশাবাদী, সবার দোয়ায় ও আল্লাহর রহমতে তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন। বিদেশ নেওয়ার ব্যাপারে আমাদের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি রয়েছে, চিকিৎসকরা যখনই সবুজ সংকেত দেবেন, তখনই তাকে নেওয়া হবে।’
উল্লেখ্য, গত ২৩ নভেম্বর থেকে অসুস্থ অবস্থায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।







