সাধারণত উন্নত ক্যামেরা, বড় স্ক্রিন কিংবা বেশি স্টোরেজ সুবিধার কারণেই স্মার্টফোনের দাম বেশি হয়। তবে আগামী বছরে পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন হতে পারে। এবার ফোনের দাম বাড়ার মূল কারণ হয়ে উঠছে মেমোরি চিপ।
শুধু স্মার্টফোনই নয়; ট্যাবলেট, স্মার্টওয়াচসহ মেমোরি ব্যবহারকারী সব ধরনের ডিভাইসের দামই বাড়তে পারে। এর মূল কারণ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই-এর ব্যাপক উত্থান। মেমোরি চিপ নির্মাতারা এখন গ্রাহকদের জন্য সাধারণ পণ্য তৈরির বদলে এআই ডাটা সেন্টারের জন্য চিপ উৎপাদনে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে। ফলে বাজারে সাধারণ পণ্যের জন্য মেমোরি সংকট দেখা দিচ্ছে।
কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের সিনিয়র অ্যানালিস্ট ইয়াং ওয়াং বর্তমান পরিস্থিতিকে ‘ভয়াবহ চাপ’ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে পরিস্থিতিটা এখন বেশ ভয়াবহ এবং সর্বত্র ভয়াবহ চাপ চলছে’
বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘ইন্টারন্যাশনাল ডাটা কর্পোরেশন’ (আইডিসি)-এর তথ্যমতে, মেমোরি সংকটের কারণে ২০২৬ সালে বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজার ০.৯ শতাংশ কমে যেতে পারে।
কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চ গত মাসে জানিয়েছে, ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ (চতুর্থ প্রান্তিকে) মেমোরির দাম ৩০ শতাংশ এবং আগামী বছরের শুরুতে আরও ২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।
মেটা, মাইক্রোসফট এবং গুগলের মতো টেক জায়ান্টরা এআই-চাহিদা মেটাতে ডাটা সেন্টার ও অবকাঠামো দ্রুত সম্প্রসারণ করছে। ‘ম্যাককিনসি অ্যান্ড কোম্পানি’র একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী ডাটা সেন্টার অবকাঠামোয় প্রায় ৭ ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হতে পারে।
এই বিপুল চাহিদার কারণে মাইক্রোন ও স্যামসাংয়ের মতো মেমোরি চিপ নির্মাতারা তাদের উৎপাদন সক্ষমতা ডাটা সেন্টারের দিকে সরিয়ে দিচ্ছে। কম্পিউটার বা স্মার্টফোনে ব্যবহৃত মেমোরির ধরন ডাটা সেন্টারের মেমোরি থেকে আলাদা।
এদিকে গত বুধবার মাইক্রোন ঘোষণা দিয়েছে, তারা সাধারণ গ্রাহকদের জন্য মেমোরি ব্যবসা থেকে সরে আসছে। কারণ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি ডাটা সেন্টারে ‘এআই-চালিত প্রবৃদ্ধি’র কথা উল্লেখ করেছে। স্যামসাংয়ের মেমোরি বিভাগের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট জেজুন কিম জানিয়েছেন, মোবাইল ও পিসি মেমোরির সরবরাহ সংকট সামনে আরও তীব্র হতে পারে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘ট্রেন্ডফোর্স’ ধারণা করছে, মেমোরির দাম বাড়ার ফলে ২০২৫ সালে স্মার্টফোন উৎপাদন খরচ ৮ থেকে ১০ শতাংশ বাড়বে।
আইডিসি-এর সিনিয়র রিসার্চ ডিরেক্টর নাবিলা পোপাল বলেন, আগামী বছরের শুরুতেই কিছু স্মার্টফোনের দাম বাড়তে পারে। এর সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়বে সস্তা অ্যান্ড্রয়েড ফোনগুলোর ওপর, কারণ কম দামের ফোনে লাভের পরিমাণ এমনিতেই খুব কম। তিনি বলেন, ‘অ্যান্ড্রয়েড ফোন নির্মাতাদের পক্ষে দাম না বাড়িয়ে টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে।’
উৎপাদনকারীরা এখন সস্তা ফোনের বদলে তুলনামূলক দামী মডেলের ওপর বেশি জোর দিতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৬ সালে স্মার্টফোনের গড় বিক্রয়মূল্য বেড়ে দাঁড়াবে ৪৬৫ ডলার, যা ২০২৫ সালে ছিল ৪৫৭ ডলার।
তবে বিশ্লেষকদের আশা, আগামী বছরের শেষের দিকে সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হলে দাম আবার কিছুটা কমতে পারে।
ওয়াং বলেন, নতুন প্রযুক্তি আসার সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে চলতে সেমিকন্ডাক্টর শিল্প অভ্যস্ত। কিন্তু এআই–এর চাহিদা এত দ্রুত বাড়বে—এটি তারা কল্পনাও করেনি।
তিনি বলেন, ‘সেমিকন্ডাক্টর খাতে সরবরাহ ও চাহিদার মধ্যে কিছুটা অমিল থাকবেই। কিন্তু এবার বিষয়টি একটু অপ্রত্যাশিতভাবেই ঘটেছে।’
প্রদা/ডিও







