চট্টগ্রাম মহানগরীতে গণপরিবহনে ভাড়া নৈরাজ্য চরমে উঠেছে। সিএনজিচালিত টেক্সির ভাড়াও অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। সরকারনির্ধারিত ভাড়া মানছেন না বাসের চালক–হেলপাররা। টেক্সিচালকেরাও নিজেদের মর্জিমাফিক ভাড়া নিচ্ছে। যাত্রীদের এক প্রকার জিম্মি করে ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। নগরীতে শুধু ভাড়া নৈরাজ্যের শিকার হওয়া সাধারণ মানুষকে কোটি টাকার বেশি গচ্ছা দিতে হচ্ছে। ভাড়া নৈরাজ্য ঠেকানোর কোনো উদ্যোগই নেয়া হচ্ছে না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে যাত্রীদের পক্ষ থেকে।
যাত্রীদের অঘোষিতভাবে জিম্মি করে টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
তারা বলেন, বহদ্দারহাট থেকে আগ্রাবাদ পর্যন্ত মিনিবাসে একসময় ভাড়া ছিল ৯ টাকা। এই ভাড়া এক লাফে তা ৬ টাকা বাড়ানো হয়েছিল। এরপর আরও দুই দফায় ভাড়া বাড়িয়ে বর্তমানে নেওয়া হচ্ছে ২০ টাকা বা সুযোগ বুঝে আরো বেশি নেয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির চট্টগ্রাম মহানগর শাখা জানিয়েছে, নগরীর অধিকাংশ রুটেই বাস, মিনিবাস, হিউম্যান হলার ও টেম্পো পারমিটের শর্ত লঙ্ঘন করে চলাচল করছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা পুরো পথের পরিবর্তে অর্ধেক পথ পর্যন্ত গিয়ে যাত্রী নামিয়ে দিচ্ছে, অথচ ভাড়া আদায় করছে পুরো পথের সমান। যেমন ১০ নম্বর রুটের বাস পতেঙ্গা থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত যাওয়ার কথা থাকলেও বিকালে কারখানা ছুটির সময়ে ইপিজেড থেকে আগ্রাবাদ পর্যন্ত যাত্রী নিয়ে ৪০ টাকা আদায় করে। এরপর আগ্রাবাদ থেকে বহদ্দারহাট পর্যন্ত আবার ৪০ টাকা নেয় এবং বহদ্দারহাট থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত ২০ টাকা করে আদায় করে। ফলে এক রুটের ভাড়া ৫৫ টাকা হলেও যাত্রীদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে প্রায় ১০০ টাকা। এই ধরনের নৈরাজ্যের কারণে যাত্রীরা যেমন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
নগরীর শাহ আমানত ব্রিজ থেকে মইজ্জ্যারটেক পর্যন্ত রুটেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরকার নির্ধারিত ভাড়া ১০ টাকা হলেও মাহিন্দ্রা, টেম্পো ও বাসে আদায় করা হচ্ছে ২০ টাকা।
ভুক্তভোগীরা বলেন, তাদের কাছ থেকে ৪০–৫০ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। যাত্রীরা প্রতিবাদ করলে তাদের অপমানিত ও হুমকি দেওয়া হয়। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ১১ নম্বর গাড়ির রুট পারমিট সিটি গেট থেকে সি–বিচ পর্যন্ত। অথচ সি–বিচ থেকে তারা কখনো সিটি গেট যায় না, কবিলাধাম এলাকায় যাত্রীদের নামিয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে ফেলে। অপরদিকে কারখানা ছুটির সময় সি–বিচ না গিয়ে ইপিজেড থেকে গাড়ি ঘুরিয়ে দেয়।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির একজন নেতা বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরীতে চলাচলকারী অধিকাংশ যানবাহনই মিনিবাস। মিনিবাসে সর্বনিম্ন ভাড়া ৮ টাকা হলেও সেখানে আদায় করা হচ্ছে ১০ টাকা। আগে প্রতি কিলোমিটারে বড় বাসের ভাড়া ছিল ২ টাকা ১৫ পয়সা, যা বাড়িয়ে ২ টাকা ৫০ পয়সা করা হয়েছে। মিনিবাসের ভাড়া ২ টাকা ৫ পয়সা থেকে ৩৫ পয়সা বাড়িয়ে করা হয়েছে ২ টাকা ৪০ পয়সা। কিন্তু বাস্তবে এই ভাড়ার হারও মানা হচ্ছে না।
যাত্রীদের অভিযোগ, পরিবহন শ্রমিকরা নিজেদের ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করছে আর তারা বাধ্য হয়ে তা মেনে নিচ্ছেন। ফলে চট্টগ্রামের গণপরিবহন ব্যবস্থায় ভাড়া নৈরাজ্য যাত্রীদের জন্য বড় এক ভোগান্তিতে পরিণত হয়েছে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক চৌধুরী ভাড়া নৈরাজ্যের কথা উল্লেখ করে বলেন, নগরীতে ভাড়া আদায়ের কোন নিয়ম কানুন নেই। গণপরিবহনের চালক এবং হেলপারেরা নিজেদের মর্জিমাফিক ভাড়া আদায় করে প্রতিদিনই সাধারণ মানুষের পকেট কাটছে।
শুধু গণপরিবহনই নয়, সিএনজি চালিত টেঙির ভাড়া নৈরাজ্যও চরমে পৌঁছেছে। নিয়ম কানুনের কোন তোয়াক্কা না করে দুই তিন কিলোমিটার দূরত্বে যাওয়ার জন্য দেড়শ’ টাকা ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। কখনো কখনো এক দেড় কিলোমিটার জায়গার জন্য ভাড়া আদায় করা হচ্ছে একশ’ টাকা। বাড়তি ভাড়া ছাড়া সিএনজিচালিত একটি টেঙিও চলে না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ যাত্রীরা।
নগরীর গণপরিবহন এবং সিএনজিচালিত টেঙির ভাড়া নৈরাজ্য ঠেকানোর কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য যাত্রী কল্যাণ সমিতি থেকে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলা হয় যে, পুলিশ চাইলে এই ভাড়া নৈরাজ্য ঠেকাতে পারে। সিএমপির ট্রফিক বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, বিআরটিএ অভিযান চালালে আমরা সর্বাত্মক সহায়তা দিতে পারব এর বিরুদ্ধে।
প্রদ/ডিও






