দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থার সংকট রয়েছে। প্রতি বছর প্রচুর অর্থ ব্যয় করে বহু মানুষ চিকিৎসা নিতে বিদেশে যাচ্ছে, যা দেশের অর্থনীতিতে চাপ তৈরি করছে। অথচ বিষয়টা উল্টো হওয়ার কথা ছিল।
দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থার সংকট রয়েছে। প্রতি বছর প্রচুর অর্থ ব্যয় করে বহু মানুষ চিকিৎসা নিতে বিদেশে যাচ্ছে, যা দেশের অর্থনীতিতে চাপ তৈরি করছে। অথচ বিষয়টা উল্টো হওয়ার কথা ছিল। অন্য দেশের মানুষ যাতে বাংলাদেশে চিকিৎসা নেয়, পরিস্থিতি সেটা হওয়া উচিত ছিল। ভবিষ্যতে বাংলাদেশ যেন বিদেশী রোগীদের আকর্ষণ করতে পারে সে প্রত্যাশা করছি।
গ্রামাঞ্চলের হাসপাতালে ডাক্তারদের না যাওয়ার প্রবণতা এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম বা জনবলের অভাবও স্বাস্থ্যসেবার মানকে প্রভাবিত করছে। সরকার এরই মধ্যে উপজেলা পর্যায়ে ডাক্তারদের জন্য উন্নত আবাসন ব্যবস্থা তৈরির প্রকল্প শুরু করেছে। এছাড়া সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে তিন হাজার নতুন চিকিৎসক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে।
স্বাস্থ্য খাতে সরকারি বরাদ্দের সীমাবদ্ধতা থাকায় সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সমন্বয় প্রয়োজন। দেশে সরকারি বড় বড় অবকাঠামো অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। কোথাও অবকাঠামো আছে, কিন্তু ডাক্তার নেই। আবার কোথাও ডাক্তার আছে, নার্স নেই। যন্ত্রপাতি আছে, কিন্তু টেকনিশিয়ান নেই। এগুলোর মধ্যে একটা সমন্বয় দরকার। এক্ষেত্রে বেসরকারি খাতকে সম্পৃক্ত করলে স্বাস্থ্য খাতের আরো উন্নয়ন সম্ভব।
ছোট ছোট স্বাস্থ্য ক্লিনিক বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় দেয়া যায় কিনা সেটিও খতিয়ে দেখা উচিত। এর ফলে একদিকে যেমন সরকারের ওপর চাপ কমবে, অন্যদিকে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ ও দক্ষতা কাজে লাগানো যাবে।
স্বাস্থ্য খাতের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তৈরির ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি খাতের সমন্বয় জরুরি। এছাড়া শিল্প উদ্যোক্তাদের মতামতকেও গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে স্বাস্থ্য খাতে যারা বড় বিনিয়োগকারী তারা সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে ঢাকার বাইরে, জেলা শহরে সাধারণ মানুষের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে ক্লিনিক তৈরি করতে পারেন। এতে দেশের মানুষ কম মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা পাবে।
মানসম্মত মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া নাগরিক অধিকার। কিন্তু স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১ শতাংশেরও কম, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। এ কারণেও সরকারি-বেসরকারি খাতের সমন্বয় জরুরি। স্থাস্থ্য খাতে অনিয়ম-ঘাটতি কোথায় এবং প্রতি বছর কেন মানুষ বিদেশে অর্থ ব্যয় করে চিকিৎসা নিতে যায়, সেটা খতিয়ে দেখা উচিত বলেও মনে করি।
আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র থাকাকালীন এমনকি শিক্ষকতা করাকালীনও দেখেছি, ঢাকা মেডিকেল কলেজে অনেক উচ্চপদস্থ কর্মচারী, ব্যবসায়ী ও মন্ত্রী পর্যন্ত স্বাস্থ্যসেবা নিতেন। এখন সেখানে কারা যায়? কেন এ বিভাজন তৈরি হলো? মূল কথা সরকারি-বেসরকারি খাতের অংশীদারত্বে সমন্বয় দরকার; কোনো বিভাজন নয়।
প্রদা/ডিও