দুর্নীতি, দুর্বল বিনিয়োগ, মূল্যস্ফীতি অর্থনীতির পিছু ছাড়ছে না বললেন ডিসিসিআইয়ের সেমিনারে বক্তারা।
রোববার (২৪ আগস্ট) ঢাকা চেম্বার অভ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘বেসরকারি খাতের দৃষ্টিতে বাংলাদেশের অর্থনীতির বিদ্যমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ পর্যালোচনা’ শীর্ষক সেমিনারের তারা এসব কথা বলেন। রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা চেম্বারের সম্মেলন কক্ষ্যে আয়োজিত সেমিনারের শুরুতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংগঠনটির সভাপতি তাসকিন আহমেদ।
সরকার পরিবর্তন হলেও দুর্নীতি, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও দুর্বল রাজস্ব আদায় বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ভারাক্রান্ত করে রাখার পাশাপাশি বাজার ব্যবস্থাপনার অদক্ষতার কারণে মূল্যস্ফীতিও চড়া রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতারা।
তাসকিন বলেন, বৈশ্বিক শুল্ক ও বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা বেড়ে যাওয়ায় গত বছরের তুলনায় বেশিরভাগ দেশের অর্থনীতি আরও বেশি মন্থর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশেও কমবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) দুর্নীতি ও হয়রানি বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অভ্যুথানের পর আমরা একটি নতুন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম, তবে সেটি পাইনি। অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা সৃষ্টির উদ্যোগ থাকলেও কর আহরণের পরিমাণ বাড়াতে এনবিআরকে আরো উদ্যোগী হতে হবে। যদিও এ ধরনের কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না, বরং হয়রানি অনেকগুণে বেড়েছে। এনবিআর এখন অর্থনীতির ক্যানসারে পরিণত হয়েছে।’
তবে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মঞ্জুর হোসেন বলেন, দেশের অর্থনীতি এখন স্থিতিশীল। রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলারের উন্নীত হয়েছে। মূল্যস্ফীতি বেশ কমেছে। তবে তবে চালের দাম বাড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, চালের দাম নিয়ন্ত্রণ করা গেলে মূল্যস্ফীতি আরও কমতে পারে।
বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে মঞ্জু হোসেন বলেন, উচ্চ সুদহার ও প্রতিকূল ব্যবসায়িক পরিবেশ এর জন্য দায়ী হতে পারে। তিনি আরও বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত ডলার না কিনে তা বাজারের উপর ছেড়ে দেওয়া। পাশাপাশি সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি মূল্যষ্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সত্যিকারে ভূমিকা রাখছে কি না, তা-ও বিবেচনা করা দরকার।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক এ কে এনামুল হক বলেন, অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা ‘মন্দের ভালো’, অবস্থা উন্নয়ন দেখা যাচ্ছে তবে দীর্ঘ সময়ের জন্য তা কাঙ্ক্ষিত নয়। ‘অর্থনীতিকে বাঁচাতে হলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে এবং দুর্নীতির কারণে শুধু বদলি দিয়ে শাস্তি দিলে হবে না, মানুষের ভেতরকার পরিবর্তন প্রয়োজন।’
তিনি আরও বলেন, ‘রপ্তানির চেয়ে আমদানিতে প্রবৃদ্ধি বেশি, যেটা মোটওে কাম্য নয়। টাকা পাচার পশ্চিমের দেশগুলোতে সহজ বলে আমরা রপ্তানির ক্ষেত্রে পশ্চিমা দেশলোর দিকে বেশি ঝুঁকছি। ব্যাংকিং কার্যক্রমে আমূল পরিবর্তন আনার কোনো বিকল্প নেই।’
সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মূল্যস্ফীতি কমাতে পারলেও মূল্যস্তর বেশ উপরে চলে এসেছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতার অবনমনের এ বিষয়টি বেশ আশঙ্কার।
তিনি উল্লেখ করেন, বন্ডেড ওয়্যারহাউস ও ব্যাংক-টু-ব্যাংক এলসি সুবিধার কারণে তৈরি পোশাক খাত আজ এ পর্যায়ে এসেছে। তাই রপ্তানির সম্ভবানাময় অন্যান্য খাতগুলোর জন্য এ ধরনের সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আরেক পরিচালক নওশাদ মুস্তাফা বলেন, মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমে যাওয়া, জুলাই আন্দোলন এবং গত বছরের বন্যার কারণে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ ছিল না। তিনি জানান, বর্তমান অবস্থায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোসহ উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে নিয়ে পরিস্থিতি উন্নয়নে কাজ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ডিজিটাল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা চালু হলে ঋণ বিতরণের খরচ হ্রাস পাবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এডিবির দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের অর্থনৈতিক কর্মকর্তা মো. রাবিউল ইসলাম বলেন, বাণিজ্য সংযুক্তি বাড়ানো এবং রপ্তানি বাজারের সাথে এসএমইদের সংযোগ বৃদ্ধি ও পণ্য পরিবহন খরচ কমাতে হবে। সেইসঙ্গে পোশাক খাতে ম্যানমেইড ফাইবারের ব্যবহার বাড়নো এবং চামড়া শিল্পে মানদণ্ড মেনে চলাসহ অন্যান্য সম্ভাবনাময় খাতের সক্ষমতা বাড়ানোর পরামর্শ দেন।
প্রদা/ডিও