বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সবজি রফতানি উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।
বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সবজি রফতানি উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। ফলে রফতানির উদ্দেশ্যে যেসব কৃষক সবজি চাষ করে আসছেন তারা বিপাকে পড়েছেন। একই সঙ্গে কমেছে এখান থেকে আসা রফতানি আয়ও। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বলছে, দেশের সবজি রফতানি গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ কমেছে। যেখানে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সবজি রফতানি হয়েছিল প্রায় ১১ কোটি ২৪ লাখ ডলারের, সেখানে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়ায় প্রায় ৮ কোটি ১১ লাখ ডলারে।
বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের সবজির চাহিদা বরাবরই বেশি। তবে স্থানীয় বাজারে দাম বেড়ে যাওয়া, বিমানের কার্গো ও কনটেইনারের খরচ বৃদ্ধি এবং মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক উপাদানের উপস্থিতির কারণে সবজি রফতানি এখন নিম্নমুখী।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্বের ৪০টির বেশি দেশে বাংলাদেশ থেকে তাজা সবজি রফতানি হচ্ছে। এর পরও বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশের সবজির বাজারের ব্যাপ্তি খুবই সীমিত। এর অন্যতম কারণ, দীর্ঘদিন ধরেই সবজি রফতানির সিংহভাগ যাচ্ছে ঘুরেফিরে মাত্র ছয়টি দেশে। বাকি দেশগুলো থেকে যে রফতানি আয় হচ্ছে তা তুলনামূলক খুবই নগণ্য।
ইপিবির তথ্যে দেখা যায়, বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি সবজি রফতানি হওয়া ছয়টি দেশ হচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, কাতার, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব ও কুয়েত। এর বাইরে ইতালি, সিঙ্গাপুর, বাহরাইন, সুইডেন, কানাডা, জার্মানির মতো অন্যান্য ৩৫টির বেশি দেশে যায় মোট সবজি রফতানির মাত্র ২০ শতাংশ।
বাংলাদেশ থেকে সবজি জাতীয় ফসলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রফতানি হয় আলু। কিন্তু চীন, ভারত, রাশিয়ার মতো আলু উৎপাদনকারী দেশ কম মূল্যে আলু রফতানি করায় পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশ। অথচ ২০১৫-১৬ সালের দিকে বাংলাদেশ বিশ্ববাজারে আলু রফতানিতে শীর্ষ তালিকায় ছিল। এছাড়া মিষ্টি কুমড়া, বাঁধাকপি, ফুলকপি, টমেটো, শিম, বেগুন, কাঁকরোল, পটোল, মুখীকচু, লাউ, চাইনিজ ক্যাবেজসহ বিভিন্ন সবজি ও শাক রফতানি হয় বাংলাদেশ থেকে।
রফতানিকারকরা বলছেন, দেশীয় বাজার থেকে ১০-১৫ টাকা বেশি দরে সবজি কিনতে হয় তাদের। অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় হিমায়িত সবজির চাহিদা থাকলেও বিমানের কার্গো খরচ ও রেফার কনটেইনারের ভাড়া বৃদ্ধির কারণে সবজি ও ফল রফতানি কমিয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া প্রতিযোগী দেশগুলো যেখানে অর্গানিক শাক-সবজি ও ফল রফতানি করছে, সেখানে আমাদের উৎপাদিত পণ্যে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক উপাদানের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। অথচ বিদেশীরা রাসায়নিকযুক্ত এসব সবজি ও ফল আমদানিতে আগ্রহী নন।
ফসলি জমি কমলেও গত কয়েক বছরে দেশে বিভিন্ন ধরনের সবজির চাষ ও উৎপাদন বেড়েছে। একসময় দেশের নির্দিষ্ট কিছু জেলায় মৌসুমভিত্তিক সবজির চাষ হতো। এখন প্রায় সারা দেশেই পুরো বছর সবজি উৎপাদন হয়। এখন ৬০ ধরনের ২০০ জাতের সবজি ফলান বাংলাদেশের কৃষকরা। জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার তথ্য অনুসারে, সবজি উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ পাঁচটি দেশের মধ্যে রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, আমেরিকাসহ অনেক দেশেই যায় বাংলাদেশের সবজি। তবে যুদ্ধ ও জ্বালানির প্রতিকূলতায় অন্য অনেক পণ্যের মতো সবজির রফতানিও গতি হারিয়েছে। রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ও প্রকৃত রফতানির মধ্যে ব্যবধান বাড়ছেই।
প্রদা/ডিও