রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে ও জনস্বার্থে দরপত্র ছাড়াই সরকারি ক্রয় পদ্ধতিতে ২০২৬ সালে ২৮ লাখ পাঁচ হাজার মেট্রিক টন পরিশোধিত জ্বালানি তেল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে এক কোটি ই-পাসপোর্ট কাঁচামাল, উন্নত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ৫৭ লাখ ই-পাসপোর্ট বুকলেট সুয়াপ সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বুধবার (২২ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কমিটির সভাপতি অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বৈঠকে ভার্চুয়ালি অংশ নেন।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১৬ সাল থেকে জ্বালানি তেলের মোট চাহিদার ৫০ শতাংশ জিটুজি ভিত্তিতে এবং ৫০ শতাংশ উন্মুক্ত আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে আমদানি করে আসছে।
বিক্রয় প্রবণতা ও পর্যাপ্ত মজুত বিবেচনায় ২০২৬ সালের জন্য জিটুজি ভিত্তিতে ১৯ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন গ্যাস অয়েল, ৩ লাখ ৯০ হাজার মেট্রিক টন জেট এ-১, ১ লাখ ৭৫ হাজার মেট্রিক টন গ্যাসোলিন (অকটেন), ৩ লাখ মেট্রিক টন ফার্নেস অয়েল এবং ৩০ হাজার মেট্রিক টন মেরিন ফুয়েলসহ মোট ২৮ লাখ পাঁচ হাজার মেট্রিক টন পরিশোধিত জ্বালানি তেল রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে ও জনস্বার্থে পিপিএ ২০০৬ এর ৬৮(১) ধারা এবং পিপিআর ২০০৮ এর বিধি ৭৬(২) অনুযায়ী সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে আমদানির প্রস্তাব নীতিগত অনুমোদনের জন্য বৈঠকে উপস্থাপন করা হলে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি তা অনুমোদন দিয়েছে। জিটুজি ভিত্তিতে আটটি দেশের ১০টি প্রতিষ্ঠান থেকে জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হয়।
বৈঠকে ‘বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট ও স্বয়ংক্রিয় বর্ডার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা প্রবর্তন’ প্রকল্পে ১ কোটি ই-পাসপোর্ট কাঁচামাল, ৫৭ লাখ ই-পাসপোর্ট বুকলেট সুয়াপ এবং প্রশিক্ষণ সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে কেনার প্রস্তাব নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, এ প্রকল্পটি জার্মানির ভেরিডোস জিএমবিএইচের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্পে বর্তমান মজুত কাঁচামাল দিয়ে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ই-পাসপোর্ট তৈরি করা যাবে। ২০২৭ সালের শুরুতে পাসপোর্ট বুকলেট কাঁচামাল নিশ্চিত করতে কমপক্ষে ১২ মাস আগে চুক্তি সম্পাদন করতে হবে।
এ অবস্থায় রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে প্রকল্পের বিদ্যমান সেবা প্রদানকারী সংস্থা জার্মানির ভেরিডোস জিএমবিএইচের কাছ থেকে এক কোটি ই-পাসপোর্ট কাঁচামাল (আপদকালীন সময়ে প্রয়োজন সাপেক্ষে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ পাসপোর্ট কাঁচামাল থেকে পাসপোর্ট বুকলেট সুয়াপসহ), উন্নত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ৫৭ লাখ ই-পাসপোর্ট বুকলেট সুয়াপ এবং প্রশিক্ষণ সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে কেনার প্রস্তাব নীতিগত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হলে উপদেষ্টা পরিষদ তা অনুমোদন দিয়েছে।
প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনী একনেক থেকে অনুমোদিত হয় ২০২৩ সালের ৯ নভেম্বর। প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৮ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৮ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। প্রস্তাবিত ক্রয় বাবদ খরচ হবে ১ হাজার ৬৯২ কোটি ৩২ লাখ ৭৬ হাজার টাকা।
২০১৮ সালে মূল চুক্তি সম্পাদনকালে পাসপোর্ট বুকলেট ৭.৩৫৯ ইউরো হারে এবং পাসপোর্ট কাঁচামাল ৫.৯৯০ হারে চুক্তি করা হয়েছিল। বর্তমান পাসপোর্ট বুকলেট ৮.৫৪০ ইউরো এবং পাসপোর্ট কাঁচামাল ৬.৯৮০ হারে প্রস্তাব করা হয়েছে।
এরূপ জটিল ও তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সেবা ভিন্ন কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে কিনলে জটিলতা সৃষ্টি হবে বিধায় সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে জার্মানির ভেরিডোস জিএমবিএইচের কাছ থেকে কেনা যুক্তযুক্ত হবে বলে বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে যুক্তি দেওয়া হয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করে অনুমোদন দিয়েছে।
প্রদা/ডিও