বিজয়ার শুভেচ্ছা জানিয়ে পূজামণ্ডপে তোলা একটি ছবি পোস্ট করেছিলেন তরুণ তারকা ইয়াশ রোহান। সেই থেকে ট্রলের শিকার এই অভিনেতা। ফেসবুকে ওই ছবিতে অনেকেই বিরূপ মন্তব্য করেছেন। মন্তব্য দেখে যে কেউ বুঝে ফেলবে, মন্তব্যকারীরা ইয়াশকে এতকাল মুসলমান ধর্মের অনুসারী ভেবেছিলেন। তবে এক ভক্তের প্রেমময় মন্তব্য স্পর্শ করেছে সবাইকে।
ছবিটিতে ইয়াশ দূর্গামূর্তির সামনে দাঁড়িয়েছেন। তার কপালে সিঁদুরের তিলক। পোস্টে মন্তব্য করে কেউ কেউ লিখলেন, ‘তোমার নাটক আর দেখবো না।’ আরেকজন লিখেছেন, ‘ভাই, আপনার নাটক অনেক দেখেছি, আজ থেকে আর দেখা হবে কি না জানি না। কারণ ভাবছিলাম মুসলিম… নাটকগুলো ভালোই লাগতো।’ কেউ সরাসরি লিখেছেন, ‘তোকে তো মুসলিম মনে করছিলাম!’
ব্যক্তিজীবনে বেশ ঠোঁটকাটা ইয়াশ। ট্রলের শিকার হয়ে মুখে বন্ধ রাখেননি তিনি। একের পর এক বাঁকা মন্তব্যের জবাব দিয়েছেন দৃঢ়ভাবে। তবে ইয়াশের ওই পোস্টের সব প্রতিক্রিয়াই যে নেতিবাচক ছিল, তা নয়। এক অনুরাগী লিখেছেন, ‘আমি ধর্ম দেখে নাটক দেখি না। ভালো লাগে বলেই দেখি। ধর্ম নিয়ে কিছু বলতে চাই না। বাংলাদেশের মানুষ ধর্ম দিয়ে একটু বেশিই বিচার করে, তাদের চিন্তা ছোট। তুমি অসাধারণ একজন মানুষ, তোমার প্রতিটি চরিত্রই মনোমুগ্ধকর। ভালোবাসা অফুরন্ত।’
এদিকে অভিনেতা মোস্তাফিজুর নূর ইমরান ওই পোস্টে মন্তব্য করেছেন, ‘ইয়াশ রোহান আমার ভাই। আমার বন্ধু। একজন সম্মানিত শিল্পী। আমি ক্ষমা চাই তার কাছে। শুধু এই ছবিতে মন্তব্যকারীরা নয়, এই দূষিত মানসিকতার প্রতি ঘৃণা জানাই। সুশিক্ষা, শিল্প, সংস্কৃতি, ক্রীড়া, সাংস্কৃতিক এবং পর্যটন চর্চার অভাবে একটি জাতি কীভাবে বেয়াদব এবং অসভ্যে পরিণত হতে পারে, সেটাই দেখছি দীর্ঘদিন ধরে। যারা এভাবে বলছে, তারা কোনোভাবেই মুসলমান তো হতে পারেই না, আর মানুষ তো অবশ্যই না।’
মোস্তাফিজুর নূর ইমরান, মেহজাবীন চৌধুরী ও আরশ খান মন্তব্য করেছেন ইয়াশের পক্ষে
তিনি আরও লিখেছেন, ‘সুশাসন, ন্যায়বিচার, সাংস্কৃতিক ঐক্য এবং পারস্পরিক সম্মান চর্চার অভাবে আজ আমরা এমন জায়গায় এসে পৌঁছেছি। শক্ত আইনানুগ ব্যবস্থা যদি অ্যাসোসিয়েশন থেকে নেওয়া হয় এবং এই অসভ্যরা শাস্তির আওতায় আসে, তাহলেই ধীরে ধীরে এটা কমতে পারে। সবচেয়ে বড় দুঃখ, যারাই দায়িত্বে আসুক, কেউই জাতিকে সভ্য করার প্রয়াস করেনি। বরং প্রত্যেকে তার সাধ্যমতো ধ্বংস করেছেন।’
অভিনেতা আরশ খান ফেসবুকে পোস্ট করে লিখেছেন, ‘ইয়াশ রোহান বাংলাদেশের অন্যতম অভিনেতা। যার অভিনয়, ব্যক্তিত্ব উভয়ই আমার প্রিয়। অভিনেতা ইয়াশকে তার ধর্ম বা সে কোন অঞ্চলের মানুষ তা রিপ্রেজেন্ট করে না, বরং নিজের শৈল্পিক গুণাবলী দিয়ে সে এদেশের মানুষকে, বাংলাদেশকে রিপ্রেজেন্ট করেন। ধর্ম যার যার, দেশ সবার।’
নাম উল্লেখ না করে অভিনেত্রী মেহজাবিন চৌধুরী লিখেছেন, ‘কারও পোস্টে বাজে মন্তব্য করা, স্ল্যাং ব্যবহার করা, অথবা ভুয়া প্রোফাইল দিয়ে কথা বলা আপনাকে সাহসী করে তোলে না। বরং এটা আপনার নীচ মানসিকতাকে প্রকাশ করে এবং আপনি আসলে কেমন মানুষ সেটাই দেখায়। এত ঘৃণা আর অপরাধবোধ নিয়ে কীভাবে রাতে ঘুমাতে যান?’
ইয়াশ রোহান টিভিনাটকের নিয়মিত অভিনয়শিল্পী। গিয়াস উদ্দিন সেলিমের পরিচালনায় পরীমনির বিপরীতে ‘স্বপ্নজাল’ দিয়ে শুরু হয় তার চলচ্চিত্রযাত্রা। তার বাবা-মা নরেশ ভূইয়া ও শিল্পী সরকার অপু দীর্ঘদিন ধরে অভিনয় করছেন। শিল্পী পরিবার হিসেবে প্রায় সব শ্রেণির দর্শকের কাছে সমাদৃত তারা।
প্রদা/ডিও