মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শনিবার বলেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শেষ করতে ইউক্রেনের উচিত চুক্তি করা। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘রাশিয়া অনেক বড় একটা শক্তি, কিন্তু তারা (ইউক্রেন) নয়।’ ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলাস্কায় বৈঠকের পর ট্রাম্প এই মন্তব্য করেন। ওই বৈঠকে পুতিন ইউক্রেনের আরও ভূখণ্ড দাবি করেছেন বলে জানা গেছে।
ট্রাম্পও বলেছেন, শান্তিচুক্তি করার জন্য ইউক্রেন ও তার ইউরোপীয় মিত্রদের দাবি অনুযায়ী কোনো পূর্ব-যুদ্ধবিরতির প্রয়োজন নেই। বৈঠকের আগে অবশ্য তিনি বলেছিলেন, যুদ্ধবিরতিতে সম্মত না হলে তিনি খুশি হবেন না।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া পোস্টে বলেছেন: ‘সবাই-ই একমত যে রাশিয়া ও ইউক্রেনের ভয়াবহ যুদ্ধ শেষ করার সর্বোত্তম উপায় হলো সরাসরি শান্তি চুক্তিতে যাওয়া, যা যুদ্ধের অবসান ঘটাবে—স্রেফ যুদ্ধবিরতি চুক্তি নয়, যা প্রায়ই টেকে না।’
জেলেনস্কি বলেছেন, যুদ্ধ থামাতে রাশিয়ার অনীহা স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাকে জটিল করে তুলবে। তিনি এক্স-এ বলেন, ‘হত্যাকাণ্ড বন্ধ করাই যুদ্ধ থামানোর অন্যতম উপাদান।’
তবে জেলেনস্কি জানিয়েছেন, সোমবার তিনি ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
এর আগে ফেব্রুয়ারিতে হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে হওয়া বৈঠকে ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স প্রকাশ্যে জেলেনস্কির কঠোর সমালোচনা করেছিলেন। ট্রাম্প বলেছেন, এরপর পুতিন ও জেলেনস্কিকে নিয়ে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হতে পারে।
কিয়েভের ইউরোপীয় মিত্ররা ট্রাম্পের প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানালেও ইউক্রেনকে সমর্থন এবং রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোহান ওয়াডেফুল বলেছেন, সোমবার হোয়াইট হাউসের বৈঠকে ইউরোপীয় নেতারাও যোগ দিতে পারেন।
রাশিয়া ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে পূর্ণ-মাত্রার আগ্রাসন শুরু করে। কয়েকমাস ধরে রুশ বাহিনী ধীরে ধীরে অগ্রসর হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, গত ৮০ বছরের মধ্যে ইউরোপের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী এই যুদ্ধে উভয় পক্ষের দশ লাখেরও বেশি মানুষ নিহত বা আহত হয়েছে।
পুতিনের সঙ্গে তিন ঘণ্টার বৈঠক নিয়ে ট্রাম্পের বিভিন্ন মন্তব্য মূলত মস্কোর প্রকাশ্য অবস্থানের সঙ্গেই মিলে যায়। মস্কো বলেছে, পূর্ণাঙ্গ মীমাংসা বেশ জটিল হবে, কারণ দুই পক্ষের অবস্থান ‘সম্পূর্ণ বিপরীত’।
পুতিন রাশিয়ার দীর্ঘদিনের দাবিগুলো থেকে সরে আসার কোনো ইঙ্গিত দেননি। এসব দাবির মধ্যে কিয়েভকে ন্যাটোর সদস্যপদ না দেওয়ার দাবিও রয়েছে।
রুশ প্রেসিডেন্ট প্রকাশ্যে জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক নিয়ে কিছু বলেননি। ক্রেমলিনের সহযোগী ইউরি উশাকভ বলেছেন, কোনো ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের বিষয়ে আলোচনা হয়নি।
ফক্স নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প ইঙ্গিত দেন, তিনি ও পুতিন ভূখণ্ড হস্তান্তর এবং ইউক্রেনের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং এ বিষয়ে ‘মোটের ওপর একমত’ হয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি আমরা চুক্তির খুব কাছাকাছি চলে এসেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘ইউক্রেনকে এতে রাজি হতে হবে। ওরা হয়তো “না” বলে দেবে।’
জেলেনস্কিকে কী পরামর্শ দেবেন—এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘চুক্তি করতেই হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেখুন, রাশিয়া অনেক বড় শক্তি, কিন্তু তারা (ইউক্রেন) নয়।’
জেলেনস্কি ধারাবাহিকভাবে বলে আসছেন, ইউক্রেনের সংবিধানে পরিবর্তন না এনে তিনি ভূখণ্ড ছাড়তে দিতে পারেন না। তাছাড়া দনেৎস্কের স্লোভিয়ানস্ক ও ক্রামাতোরস্কের মতো ‘দুর্গ শহরগুলোকে’ রাশিয়ার ভবিষ্যৎ অগ্রযাত্রার বিরুদ্ধে প্রতিরোধব্যূহ হিসেবে দেখে কিয়েভ।
রাশিয়াকে ফের আক্রমণ থেকে বিরত রাখতে নিরাপত্তা নিশ্চয়তার ওপরও জোর দিয়েছেন জেলেনস্কি। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, তিনি ও ট্রাম্প এই প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণের বিষয়ে ‘ইতিবাচক ইঙ্গিত’ নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং ইউক্রেনের স্থায়ী শান্তি প্রয়োজন।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি শান্তি চুক্তির আওতায় ইউক্রেনকে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেওয়ার বিষয়ে ট্রাম্পের খোলামেলা মনোভাবকে স্বাগত জানিয়েছেন।
বিদেশি স্থল সেনা মোতায়েনের বিরোধিতা করে পুতিন বলেন, ইউক্রেনের নিরাপত্তা ‘নিশ্চিত’ করতে হবে—এ বিষয়ে তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে একমত।
পুতিনের জন্য ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বসাটাই বিজয় ছিল। কারণ যুদ্ধের শুরু থেকেই পশ্চিমা নেতারা তাকে একঘরে করে রেখেছেন। মাত্র এক সপ্তাহ আগেও ট্রাম্প তাকে নতুন নিষেধাজ্ঞার হুমকিও দেন।