ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ দুপুর আড়াইটায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার লাখো মানুষের উপস্থিতিতে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে হাদির মরদেহ শাহবাগে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির পাশে তাকে শায়িত করা হবে। সেখানে তাকে দাফনের প্রস্তুতি চলছে।
জানাজায় অংশ নিতে সকাল থেকেই মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ ও এর আশপাশের এলাকায় মানুষের ঢল নামে। জানাজায়, প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ স্থানীয় নেতারা অংশগ্রহণ করেন। নামাজে ইমামতি করেন হাদির বড় ভাই আবু বকর সিদ্দিক।
সকাল থেকে মানিক মিয়া এভিনিউ ও সংসদ ভবন এলাকায় পুলিশ, র্যাব, আনসার, এপিবিএন, বিজিবি, সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের মোতায়েন করা হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, মানিক মিয়া এভিনিউর পূর্ব পাশে খেজুর বাগান ক্রসিং ও পশ্চিম পাশে আড়ংয়ের অংশে বাঁশ দিয়ে প্রবেশপথ তৈরি করা হয়েছে। জানাজায় অংশগ্রহণকারীদের এই পথ দিয়েই প্রবেশ করতে হচ্ছে। প্রথম স্তরে পুলিশ ও এপিবিএন সদস্যরা হ্যান্ড মেটাল ডিটেকটর দিয়ে আগতদের তল্লাশি করছেন। কারো সঙ্গে ব্যাগ থাকলে বা সন্দেহজনক মনে হলে তাদের বাড়তি তল্লাশি করা হচ্ছে।
দ্বিতীয় স্তরে সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় প্রবেশের দুটি গেটেই আর্চওয়ে বসানো হয়েছে। সেখানেও হ্যান্ড মেটাল ডিটেকটর দিয়ে তল্লাশি করা হচ্ছে। এই স্থানে পুলিশ, এপিবিএন, র্যাব ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে।
তৃতীয় স্তরে দক্ষিণ প্লাজার ভেতরের মাঠের পুরোটা বাঁশ দিয়ে ঘিরে ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছে। সেখানে তিনটি প্রবেশপথ তৈরি করে আর্চওয়ে বসানো হয়েছে। পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) সদস্যরা এই আর্চওয়েতে আগতদের পরীক্ষা করছেন। এছাড়া পুরো এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করতে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) মোতায়েন রয়েছে।
সকাল ১০টা থেকে হাদির জানাজায় অংশ নিতে মানুষজন ছোট ছোট মিছিল নিয়ে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জড়ো হচ্ছেন। জানাজা অনুষ্ঠানের সুবিধার্থে ইতোমধ্যে খেজুরবাগান ক্রসিং থেকে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে নগরবাসীকে বেশ কিছু ট্রাফিক নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
নিরাপত্তার বিষয়ে ডিএমপির গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান সাংবাদিকদের পাঠানো এক বার্তায় বলেন, ‘পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং নিরাপত্তাসহ সার্বিক বিষয় মাথায় রেখে শহিদ ওসমান হাদির নামাজে জানাজা উপলক্ষে এক হাজার ‘বডি-ওর্ন ক্যামেরাসহ’ পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করেছে ডিএমপি।’
এছাড়া রায়ট কন্ট্রোল গিয়ারসহ ২০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম গণমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
অন্যদিকে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর উপপরিচালক ও গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. আশিকউজ্জামান জানান, জানাজা উপলক্ষে মানিক মিয়া এভিনিউতে ৮৭০ জন আনসার ও ভিডিপি সদস্য মোতায়েন রয়েছে।
জানাজা উপলক্ষে বিশেষ নিরাপত্তা নির্দেশনা দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। নির্দেশনায় বলা হয়েছে: জানাজায় অংশগ্রহণকারীদের কোনো প্রকার ব্যাগ বা ভারী বস্তু বহন না করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছে। এছাড়া জানাজা চলাকালীন সংসদ ভবন ও এর আশপাশের এলাকায় ড্রোন ওড়ানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে।
এর আগে শুক্রবার সন্ধ্যায় হাদির মরদেহ সিঙ্গাপুর থেকে ঢাকায় পৌঁছায়। ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শনিবার বিকেলে জানাজা শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হবে।
ওসমান হাদির মৃত্যুতে আজ শনিবার দেশে রাষ্ট্রীয় শোক পালিত হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ঘোষণা অনুযায়ী, দেশের সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব সরকারি-বেসরকারি ভবন এবং বিদেশের বাংলাদেশ মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে।
প্রদা/ডিও







