রাশিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ জানিয়েছেন, তিনি মনে করেন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো একটি কূটনৈতিক সমাধানের “দ্বারপ্রান্তে” পৌঁছে গেছে। সোমবার এবিসি নিউজকে দেওয়া একটি একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি একথা বলেন।
এসময় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সরকারের অবস্থান তুলে ধরে রিয়াবকভ বলেন, “আমরা একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে প্রস্তুত।” তিনি আরও জানান, “দেরি না করে যত দ্রুত সম্ভব” একটি সমঝোতা হবে—এমনটাই তিনি আশা করছেন।
সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের কর্মকর্তারাও ইঙ্গিত দিয়েছেন, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে শান্তিচুক্তি আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে কাছাকাছি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা সাংবাদিকদের জানান, দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান ইস্যুগুলোর “আক্ষরিক অর্থেই ৯০ শতাংশ” ইতোমধ্যে সমাধান হয়ে গেছে।
তবে একই সঙ্গে রিয়াবকভ মস্কোর দীর্ঘদিনের কিছু দাবিও পুনর্ব্যক্ত করেছেন, যেগুলো কিয়েভ বলছে—কোনো শান্তিচুক্তির অংশ হিসেবে তারা মেনে নিতে পারে না। এর মধ্যে রয়েছে ২০১৪ সালে দখল করা ক্রিমিয়ার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ এবং ইউক্রেনের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলের চারটি আংশিকভাবে দখলকৃত অঞ্চল—দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, জাপোরিঝঝিয়া ও খেরসনকেও রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত হিসেবে মেনে নেওয়া।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি একাধিকবার স্পষ্ট করে বলেছেন, রাশিয়ার কাছে ভূখণ্ড ছাড় দেওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না।
রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণাধীন এসব অঞ্চলের প্রসঙ্গে রিয়াবকভ বলেন, “মোট পাঁচটি অঞ্চল রয়েছে এবং এ বিষয়ে আমরা কোনোভাবেই কোনো ধরনের আপস করতে পারি না।”
এবিসি নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রিয়াবকভ এসব মন্তব্য করেন এমন এক সময়ে, যখন মস্কো ও কিয়েভ—উভয় পক্ষই হোয়াইট হাউসের সর্বশেষ শান্তি উদ্যোগের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। এই উদ্যোগের লক্ষ্য হলো ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার সামরিক আগ্রাসনের অবসান ঘটানো।
মস্কোর জন্য আরেকটি বড় বাধা হলো যুদ্ধোত্তর সময়ে ইউক্রেনে ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর সেনা মোতায়েনের সম্ভাবনা।
রিয়াবকভ বলেন, এমন কোনো চুক্তিতে রাশিয়া সম্মত হবে না, যেখানে ইউক্রেনের মাটিতে ন্যাটো সেনাদের উপস্থিতি থাকবে—সেটি নিরাপত্তা নিশ্চয়তার অংশ হিসেবেই হোক বা ইউরোপীয় নেতাদের তথাকথিত ‘কোয়ালিশন অব দ্য উইলিং’-এর সদস্য হিসেবে হোক।
তিনি বলেন, “ইউক্রেনের ভূখণ্ডে ন্যাটো সেনাদের কোনো উপস্থিতির বিষয়ে আমরা কখনোই স্বাক্ষর করব না, সম্মত হব না, এমনকি সন্তুষ্টও থাকব না।”
রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই প্রভাবশালী কর্মকর্তা ২০০৮ সাল থেকে উপপররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ২০০৪ সাল থেকে দায়িত্বে থাকা পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের অধীনে কাজ করছেন এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে নিয়মিত বক্তব্য দিয়ে থাকেন।
ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার আগ্রাসনের আগে পরিস্থিতি হালকা করে দেখানো রুশ কর্মকর্তাদের মধ্যে রিয়াবকভও ছিলেন। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ইউক্রেন সীমান্তে রুশ সেনা জড়ো হওয়ার সময় তিনি বলেছিলেন, মস্কোর “ইউক্রেনে হামলা, আক্রমণ চালানো বা আগ্রাসনের কোনো ইচ্ছা নেই।”
সোমবার এবিসি নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রিয়াবকভ রাশিয়ার চলমান সামরিক অভিযানের জন্য ‘যুদ্ধ’ শব্দটি ব্যবহার করতে অস্বীকৃতি জানান। বরং তিনি ক্রেমলিনের ব্যবহৃত পরিভাষা—”বিশেষ সামরিক অভিযান”—শব্দবন্ধই ব্যবহার করেন।
তিনি বলেন, “আমরা যা করছি, তা করছি। আমরা এটি বন্ধ করতে চাই। আর এটি বন্ধ হবে কি না, তা অনেকটাই নির্ভর করছে কিয়েভের কর্তৃপক্ষকে সমর্থনকারীরা আমাদের সাফল্যের অনিবার্য পরিণতি কতটা স্বীকার করে নেয় তার ওপর।”
রুশ কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরেই এই আগ্রাসনকে ইউক্রেনে বসবাসরত জাতিগত রুশদের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ হিসেবে তুলে ধরছেন। এ যুদ্ধে ওই জনগোষ্ঠীর ভোগান্তি ও প্রাণহানির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে রিয়াবকভ বলেন, তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সহানুভূতিশীল।
তিনি বলেন, “আমরা সেখানে যা করছি তার পুরো উদ্দেশ্যই হলো—অন্তত কিছু মানুষ, বলা যায় অধিকাংশ মানুষ যেন ভালোভাবে থাকতে পারে এবং তারা যেখানে অন্তর্ভুক্ত, অর্থাৎ রাশিয়ায়, সেখানে থাকা তাদের জন্য আরও উপযুক্ত হয়ে ওঠে।”
চলমান যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র–রাশিয়া সম্পর্কের নানা দিক নিয়ে রিয়াবকভ নিয়মিত মন্তব্য করে আসছেন। এর মধ্যে পারমাণবিক ও অস্ত্র নিয়ন্ত্রণসংক্রান্ত দ্বিপক্ষীয় চুক্তিগুলো পুনরুজ্জীবিত করার আহ্বানও রয়েছে।
তবে চলতি মাসে তিনি বলেন, এসব বিষয়ে অগ্রগতি তখনই সম্ভব হবে, “যখন আমরা নিশ্চিত হব যে ওয়াশিংটনের রাশিয়াবিষয়ক নীতিতে মৌলিক ও অপরিবর্তনীয় উন্নতি হয়েছে।”
ইউক্রেন শান্তি আলোচনা চলমান থাকা অবস্থায় গত মাসে রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত সাময়িকী ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স-এ রিয়াবকভ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও প্রেসিডেন্ট পুতিনের মধ্যে নতুন একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
তিনি বলেন, “আমি কোনো সম্ভাবনাই নাকচ করছি না।”
প্রদা/ডিও





