চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানায় কর্মরত একাধিক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ইয়াবা পাচারচক্রে জড়িত থাকার চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে। অভ্যন্তরীণ তদন্তে সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়ায় ইতোমধ্যে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার, বদলি ও বিভাগীয় তদন্তের মুখোমুখি করা হয়েছে।
ডিবি অভিযানে এসআই মিজানসহ দুজন গ্রেপ্তার
গত ২৪ নভেম্বর চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অভিযানে আট হাজার ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার হন রেলওয়ে থানার এসআই মিজানুর রহমানসহ দুজন। ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় মামলা হলেও মিজানুরের পুলিশ পরিচয় এজাহারে উল্লেখ করা হয়নি। তদন্তে জানা যায়, তাঁর গ্রেপ্তারের ঘটনা ধামাচাপা দিতে রেলওয়ে পুলিশের কিছু কর্মকর্তার চেষ্টা ছিল।
যশোরে ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার আরেক পুলিশ সদস্য
এর আগে গত ১২ অক্টোবর পদোন্নতি পরীক্ষার কথা বলে ছুটিতে গিয়ে যশোরে ১০ হাজার ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার হন চট্টগ্রাম রেলওয়ে জেলা পুলিশের সদস্য মো. মহিবুর রহমান। তাঁকে আটক করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।
ওসি শহিদুলের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ
রেলওয়ে পুলিশের অভ্যন্তরীণ তদন্তে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সম্প্রতি বদলি হওয়া চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানার ওসি এস এম শহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে কয়েকজন পুলিশ সদস্য মিলে ইয়াবা পাচারের নেটওয়ার্ক গড়ে তোলেন।
তদন্তে তাঁর সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হওয়ায় তাঁকে পুলিশ লাইনসে বদলি করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, মাদক ব্যবসার টাকায় চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে পাঁচতলা ভবনসহ আনোয়ারায় বাড়ি ও জমি করেছেন তিনি।
রেলওয়ে পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মো. জিল্লুর রহমান বলেন, “মাদকের সঙ্গে যাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে, কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার জেলার বাসিন্দা পুলিশ সদস্যদের রেলওয়ে জেলায় না রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
আরব আলীর বিরুদ্ধে ইয়াবা ‘কম দেখানোর’ অভিযোগ
চট্টগ্রাম রেলওয়ে ডিবির এসআই আরব আলীর বিরুদ্ধেও গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। ২৫ জুন ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ ট্রেন থেকে ২০ হাজার ইয়াবাসহ এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করলেও আদালতে জমা দেওয়া হয় মাত্র ১ হাজার ২০০ ইয়াবা। বাকি ইয়াবা বিক্রি করা হয়েছে বলে অভিযোগ। তবে আরব আলী অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
এসআই দস্তগিরের ডুপ্লেক্স বাড়ি ও হোটেল নির্মাণ
এসআই দস্তগির হোসেনের বিরুদ্ধেও মাদক পাচার থেকে সম্পদ গড়ার অভিযোগ রয়েছে। তিনি কক্সবাজার সদরের নিজ গ্রামে ডুপ্লেক্স বাড়ি নির্মাণ করছেন এবং ‘সী শার্ক রিসোর্ট’ নামে একটি আবাসিক হোটেলের মালিকানা নিয়েছেন বলে রেলওয়ে পুলিশের একাধিক সূত্র জানায়। যদিও তিনি দাবি করেছেন, বাড়ি তাঁর বাবার, আর হোটেল শ্বশুরের পারিবারিক সম্পদ।
র্যাব-১৫–তে ব্যাপক বদলি
চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ ওঠায় সম্প্রতি র্যাব-১৫-তে কর্মরত অধিনায়কসহ চার শতাধিক সদস্যকে বদলি করা হয়েছে। যদিও র্যাব বলছে, এটি নিয়মিত বদলি কার্যক্রমের অংশ।
নজরদারির ঘাটতি ও স্ক্যানার অচল
মাদক প্রতিরোধে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার রেলস্টেশনে স্ক্যানার স্থাপন করা হলেও জনবল সংকটে তা পুরোপুরি চালু করা যাচ্ছে না। রেলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সন্দেহভাজন যাত্রীদের ব্যাগ স্ক্যান করা হলেও ট্রেনে এখনো মাদক পাচার হচ্ছে। স্ক্যানার পরিচালনায় দায়িত্বশীল কেউ মাদকের সঙ্গে জড়িত কি না, তা নিয়েও তদন্ত চলছে।
কক্সবাজারে রেলওয়ে থানা স্থাপনের সুপারিশ
রেলওয়ে পুলিশের মতে, কঠোর নজরদারি না থাকায় কিছু পুলিশ সদস্য সুযোগ বুঝে মাদকের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ছেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে কক্সবাজার রেলস্টেশনে একটি রেলওয়ে থানা স্থাপনের সুপারিশ পাঠানো হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে।