হোয়াইট হাউসে সোমবার এক বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও ইউরোপীয় নেতারা রাশিয়ার যুদ্ধ থামানোর উপায় নিয়ে আলোচনা করেছেন। বৈঠকটি ছিল সৌহার্দ্যমূলক, তবে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। আলোচনার মূল বিষয় ছিল—ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি বা শান্তি চুক্তিতে রাজি হলে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলো তাকে কী ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দিতে পারে। এ সময় ট্রাম্প রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গেও ফোনে কথা বলেন, যাতে জেলেনস্কি ও পুতিনের সরাসরি বৈঠকের সম্ভাবনা তৈরি হয়। তবে কবে বা আদৌ এমন বৈঠক হবে কিনা তা অনিশ্চিত।
এই বৈঠক থেকে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিচে তুলে ধরা হলো:
আপাত ঐক্য, কিছু মতভেদও
নিরাপত্তা নিশ্চয়তার প্রতিশ্রুতি
ট্রাম্প বলেন, ইউরোপীয় দেশগুলো সমন্বয়ের মাধ্যমে ইউক্রেনকে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেবে এবং যুক্তরাষ্ট্র এতে সহায়তা করবে। তবে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি সেনা পাঠাবে কিনা—এই প্রশ্ন এড়িয়ে যান তিনি। ইউরোপীয় নেতারা ন্যাটোর ধারা ৫–এর মতো নিশ্চয়তা চান, যাতে ইউক্রেন আক্রান্ত হলে তা ন্যাটো সদস্য দেশগুলোর ওপর হামলা হিসেবে গণ্য হয়। এ নিয়ে ট্রাম্প শুধু বলেন, ‘আমরা তাদের খুব ভালো নিরাপত্তা ও সুরক্ষা দেব।’
জেলেনস্কিকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি সংক্ষেপে বলেন, ‘সবকিছু।’
পুতিনের সঙ্গে ‘শাটল কূটনীতি’
প্রেসিডেন্ট বাইডেন পুতিনকে ‘খুনি স্বৈরশাসক’ বললেও ট্রাম্প বরাবরই রুশ প্রেসিডেন্টের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন। বৈঠকের এক পর্যায়ে ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা থামিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সরাসরি পুতিনকে ফোন করেন। পরে ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টাব জানান, ট্রাম্প ওভাল অফিসে ফিরে এসে পুতিনের সঙ্গে তার আলোচনার বিস্তারিত বিবরণ দেন।
সম্ভাব্য জেলেনস্কি-পুতিন বৈঠক
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানান, তিনি পুতিনকে দুই নেতার মধ্যে একটি বৈঠকের আয়োজনের জন্য ফোন করেছেন। তবে এ বিষয়ে সব পক্ষ একমত কি না, তা স্পষ্ট নয়।
পুতিনের পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক উপদেষ্টা ইউরি উশাকভ ফোনালাপকে ‘খোলামেলা ও গঠনমূলক’ বলে উল্লেখ করেন। তবে কূটনৈতিক ভাষায় ‘খোলামেলা’ আলোচনার অর্থ প্রায়শই দাঁড়ায় যে দুই পক্ষের মধ্যে পুরোপুরি ঐক্যমত্য হয়নি। পুতিন যদিও জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি সরাসরি নাকচ করেননি, তবে তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে বৈধ বা নিজের সমকক্ষ মনে করেন না।
রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের নেতারা উচ্চপর্যায়ের আলোচক নিয়োগে সম্মত হলেও পুতিন নিজে জেলেনস্কির সঙ্গে বসবেন কিনা তা অনিশ্চিত।
৯০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র চুক্তির আগ্রহ
ট্রাম্প বলেছেন যে তিনি ইউক্রেনকে আর সহায়তা দিতে চান না, তবে তিনি ইউক্রেনীয়দের রুশ আক্রমণ প্রতিহত করতে সাহায্য করার জন্য অস্ত্র বিক্রি করতে ইচ্ছুক। জেলেনস্কি রাশিয়ার ক্রমাগত ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ক্ষয়ক্ষতি কমাতে আরও প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনার বিষয়ে বিশেষ আগ্রহ প্রকাশ করেন।
জেলেনস্কি সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, নিরাপত্তা নিশ্চয়তার অংশ হিসেবে ইউক্রেন ইউরোপের মাধ্যমে ৯ হাজার কোটি ডলারের আমেরিকান অস্ত্র কিনবে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের কাছ থেকে ড্রোন কিনবে।
তিনি বলেন, একটি আনুষ্ঠানিক চুক্তি এখনও সম্পন্ন হতে বাকি আছে। তবে এই ধরনের একটি বড় চুক্তি ইউক্রেনীয় বাহিনীকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে এবং একটি শান্তি চুক্তি হলে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার দিকে একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হবে।