বাংলাদেশে এই প্রথমবারের মতো কোনো মেট্রোরেল প্রকল্পে অর্থায়ন করতে যাচ্ছে বিশ্বব্যাংক। এই লাইনের মাধ্যমে পুরান ঢাকা মেট্রো নেটওয়ার্কের আওতায় আসবে।
বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে এই ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) লাইন-২ প্রকল্প গাবতলী, পুরান ঢাকা ও ডেমরাকে যুক্ত করবে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) কর্মকর্তারা বলেন, এর আগে জাপান, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও দক্ষিণ কোরিয়া মেট্রো প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে। এবার এমআরটি-২ প্রকল্প নির্মাণে ঋণ দিতে নীতিগত সম্মতি জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়ন ও পরিচালনার দায়িত্বে থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) ও ইআরডির কর্মকর্তারা জানান, প্রোফর্মার জন্য বিশ্বব্যাংক ২.৫ মিলিয়ন ডলার অনুদান দেবে।
প্রোফর্মা সম্পন্ন হওয়ার পর সংশোধিত প্রকল্পের মোট আনুমানিক ব্যয় ও বিশ্বব্যাংকের ঋণের পরিমাণ নির্ধারণ করা হবে।
এমআরটি-২ প্রকল্পটি কিছুটা সংশোধন করা হয়েছে। এ রুটের দৈর্ঘ্য ৩৫ কিলোমিটার লাইন থেকে কমিয়ে ২৫ কিলোমিটারে নামিয়ে আনা হয়েছে। এই রুটে উড়াল ও পাতাল উভয় অংশই থাকবে।
এ লাইন গাবতলী থেকে মোহাম্মদপুর, নিউমার্কেট, লালবাগ, মিটফোর্ড ও ধোলাইখাল হয়ে ডেমরা পর্যন্ত যাবে। এর সঙ্গে গুলিস্তান থেকে সদরঘাট পর্যন্ত একটি শাখা লাইনও থাকবে।
প্রথম পরিকল্পনায় গাবতলী থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত এ রুট প্রস্তাব করা হয়েছিল, আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছিল ৬০ হাজার কোটি টাকার বেশি।
ইআরডির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘এমআরটি লাইন-২ প্রকল্পে ঋণ দেবে বলেই বিশ্বব্যাংক প্রোফর্মা তৈরিতে অনুদান দিচ্ছে। তবে দ্রুত প্রোফর্মা প্রক্রিয়া শেষ না করলে এই অর্থ ফেরত যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
এ কাজ তরন্বিত করতে আজ বৃহস্পতিবার ইআরডিতে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হবে। ইআরডির অতিরিক্ত সচিব ও ভারপ্রাপ্ত উইং চিফ (বিশ্বব্যাংক) মিরানা মাহরুখ ওই সভায় সভাপতিত্ব করবেন।
এমআরটি-২-এর সংশোধিত রুট
আগে এমআরটি-২ মেইন লাইনটি গাবতলী থেকে নারায়ণগঞ্জ সদর পর্যন্ত নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল। মধ্যবর্তী স্থানে প্রস্তাবিত স্টেশনগুলোর মধ্যে ছিল ঢাকা উদ্যান, মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড, ঝিগাতলা, সায়েন্স ল্যাব, নিউমার্কেট, আজিমপুর, পলাশী, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, গুলিস্তান, মতিঝিল, কমলাপুর, মান্ডা, দক্ষিণগাঁও, দামড়িপাড়া, সাইনবোর্ড, ভূইঘর ও জালকুড়ি।
এছাড়া গুলিস্তান থেকে নয়াবাজার হয়ে সদরঘাট পর্যন্ত এর একটি শাখা লাইন নিয়ে যাওয়ারও প্রস্তাব ছিল।
ডিএমটিসিএলের প্রাথমিক হিসাবে, ৩৪ কিলোমিটার দৈঘ্যের এই লাইন নির্মাণে ৬০ হাজার ৮৩৭ কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে বলে ধারণা করা হয়েছিল।
কিন্তু সরকারের সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনার (আরএসটিপি) খসড়ায় রুটে পরিবর্তন আনার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে ডিএমটিসিএলের কর্মকর্তারা জানান। নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, এমআরটি লাইন-২ এখন গাবতলী থেকে ডেমরা পর্যন্ত নেওয়া হবে; নারায়ণগঞ্জ সদরে যাবে না। এর বদলে নারায়ণগঞ্জকে এমআরটি লাইন-৭ নামক আরেকটি প্রকল্পের মাধ্যমে যুক্ত করা হবে।
এদিকে এডিবি ও কোরিয়ার অর্থায়নে এমআরটি লাইন-৫ (সাউদার্ন রুট) নামে মেট্রোরেলের আরেকটি প্রকল্প চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এই রুটটি গাবতলী থেকে দাশেরকান্দি পর্যন্ত যাবে।
প্রথমে এমআরটি-৫-কে অগ্রাধিকার দেওয়া হলেও পরিকল্পনা কমিশন পরে এমআরটি-২ আগে বাস্তবায়নের সুপারিশ করে। এক্ষেত্রে কমিশনের যুক্তি হলো: দাশেরকান্দি এলাকায় অর্থানৈতি কর্মকাণ্ড অনেক কম। অন্যদিকে ঘনবসতিপূর্ণ পুরান ঢাকাকে মেট্রেরেলে সঙ্গে যুক্ত করা গেলে অনেক বেশি মানুষ এর থেকে উপকৃত হবে।