অভিনব উপায়ে বিদেশি জাহাজ, অন্যের জমি নিজের বলে বিক্রয় এবং মূল্যবান ডায়মন্ড এর লোভ দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা লোপাটসহ নিজেকে বিভিন্ন মন্ত্রী মহোদয়ের আত্মীয় পরিচয়দানকারী, ১১টি মামলায় সাজা প্রাপ্ত এবং ১১টি মামলার ওয়ারেন্ট ভুক্ত প্রতারক মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরীকে দীর্ঘ সাত বছর পর আটক করে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম।
রোববার, ১৮ই সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম মহানগরীর পাঁচলাইশ থানাধীন হামজারবাগ সংলগ্ন আজাদ কমিউনিটি সেন্টারের উপর জনৈক মসিউর রহমানের ভাড়া বাসা হতে পলাতক এ আসামীকে গ্রেফতার করা হয়।
জানা যায়, ২০১৫ সালে শত কোটি টাকার পুরানো একটি জাহাজকে স্ক্রাপ হিসেবে বিক্রির জন্য সীতাকুন্ডের কুমিরার সমুদ্র উপকূলবর্তী খাজা শিপইয়ার্ডে আনা হয় । কয়েক মাসের মধ্যে এরকম আরও কয়েকটি জাহাজ আনার প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তিকে ব্যবসার অংশীদারীত্বের প্রস্তাব দেয় প্রতারক মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী। এ কাজে সহযোগী হিসেবে সে আশেপাশের ২০/২৫ জন লোককে মাসিক বেতনে টাকা দিয়ে রাখত যারা তার হয়ে ভিকটিমদের বিভিন্ন তথ্য দিত। এভাবে সে পর্যায়ক্রমে ও ধাপে ধাপে ভুক্তভোগী ভিকটিম আব্দুল হাকিম এর নিকট হতে ২ কোটি ২০ লক্ষ টাকা, আজগর আলীর নিকট হতে ৭০ লক্ষ টাকা, মোঃ রুমন এর নিকট হতে ৬৩ লক্ষ টাকা, শহিদুল ইসলাম এর নিকট হতে ৯০ লক্ষ টাকা এবং শাহজাহান এর নিকট হতে ২ কোটি টাকাসহ জানা অজানা অসংখ্য ভুক্তভোগীর নিকট হতে জালিয়াতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
উক্ত প্রতারক কিছু বাজেয়াপ্ত কন্টেইনার ভিকটিমদের দেখিয়ে প্রচার করে একটি কন্টেইনারে সে প্রচুর পরিমাণ স্বর্ণ পেয়েছে যা প্রায় ৫০০ কোটি টাকায় বিদেশে বিক্রি করেছে কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক উক্ত টাকা সীজ করেছে। এছাড়াও সে ৫টি ডায়মন্ড পেয়েছে যার প্রতিটির মূল্য ২ হাজার কোটি টাকা। ডায়মন্ডগুলোর বিক্রির টাকা পেতে হলে বিভিন্ন মন্ত্রী মহোদয় এবং উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের অংশ প্রদান করতে হবে। প্রতারক মেজবাহ ভিকটিমদের বিশ্বাস অর্জনের জন্য বিভিন্ন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা এবং মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়ের কন্ঠস্বর নকল করে কথোপকথনের রেকর্ড শুনাত এবং তাদের নাম ভাঙ্গিয়ে ব্যবসার শেয়ার দেওয়ার নাম করে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্নসাৎ করত এবং পরবর্তীতে লভ্যংশ দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন ব্যাংকের চেক প্রদান করলেও ভুক্তভোগীরা চেকের বিপরীতে একাউন্টে কোন টাকা পায়নি। পরে ভুক্তভোগীরা পাওনা টাকা চাইলে সে ভুক্তভোগীদের পূর্বে সংরক্ষিত স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে তাদেরকে উল্টো মিথ্যে মামলার ভয় ও মামলা রুজু করে নাজেহাল করতো। এছাড়া উক্ত প্রতারক একই জমি বারবার বিক্রির কথা বলে বিভিন্ন লোকের নিকট হতে টাকা আদায় করত।
পরবর্তীতে আটককৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে এসব প্রতারনার কথা নিজ মুখে স্বীকার করে বলেন এসব অপকর্মে তার পরিবার তাকে সহযোগিতা করতো এবং তাকে যেন ভুক্তভোগীরা সহজে খুজে না পায় সেজন্য সে তার স্থায়ী ঠিকানায় অবস্থান না করে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করত। এছাড়াও সে তার একাধিক মোবাইলে ঘন ঘন সিম পরিবর্তন করত। বর্তমানে তাকে যাতে চিনতে না পাড়ে সেজন্য সে হেয়ার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট করেছে।
র্যাব-৭ এর কর্ণধার জানান, আসামীর বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী এবং কোতয়ালী থানায় বিভিন্ন প্রতারণার ২২টি মামলা পাওয়া যায়, যার মধ্যে ১১টি মামলায় সাজা প্রাপ্ত এবং ১১টি মামলার ওয়ারেন্ট ভুক্ত । গ্রেপ্তারকৃত আসামী ও উদ্ধারকৃত আলামত সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।