শেয়ার বাজর

বাজেট ঘোষণার পর সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস

বাজেট ঘোষণার পর সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার (৬ জুন) দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম...

Read more

আগস্ট পর্যন্ত চীনের দেড় কোটি টিকা আসবে – স্বাস্থ্যমন্ত্রী

জুন, জুলাই এবং আগস্টে প্রতি মাসে ৫০ লাখ করে ডোজ চীনা টিকা আসবে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। আজ সোমবার সচিবালয়ে...

Read more

ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন ২০২১ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন

ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন ২০২১ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।  সভা পরবর্তি ব্রিফিং এ তথ্য জানিয়েছেন শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার...

Read more

বৈষম্যমূলক পুনরুদ্ধার এড়াতে প্রয়োজন নীতিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার

কভিড-১৯ অতিমারীর প্রথম ধাক্কায় অর্থনীতিতে অভূতপূর্ব বিপর্যয় নেমে আসে। মানুষের জীবন ও জীবিকা বড় ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে। অধিকাংশ মানুষ কাজ হারিয়েছে। ১৯৯২ সালের পর এই প্রথম নতুন করে দারিদ্র্য বেড়েছে। স্বাস্থ্য খাতের সঙিন দশা আরো স্পষ্ট হয়েছে। শিক্ষা খাত পিছিয়ে পড়ছে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি সবার জন্য না থাকায় অধিকাংশ মানুষের দুর্ভোগ আরো বেড়েছে। নিম্ন আয়ের মানুষ, দরিদ্র, মধ্যবিত্ত, বৃদ্ধ, শিশু, নারীসহ সমাজের দুর্বল ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মধ্যবর্তী শ্রেণীগুলো ভাঙনের শিকার হয়েছে। প্রথম ধাক্কাই তারা সামলাতে পারেনি। সঞ্চয়, আয় যা ছিল সব ফুরিয়েছে। খানাগুলোর দ্বিতীয় ধাক্কা মোকাবেলা করার মতো সক্ষমতা অবশিষ্ট নেই। মূলত যেকোনো অভিঘাতে অধিকাংশ মানুষের ঝুঁকি প্রশমনের সক্ষমতা অনেক কম বলেই দারিদ্র্য বাড়ছে। সরকার অর্থনীতির সংকোচন রোধে প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। তবে প্রতিটি ব্যক্তি হাতে ও কারবারে নগদ অর্থ আশানুরূপ পৌঁছতে পারেনি। রফতানিমুখী ও বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানে প্রণোদনার বরাদ্দকৃত অর্থ বাস্তবায়নের অগ্রগতি দ্রুত হয়েছে। কিন্তু কুটির, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাত এবং কৃষি খাতে খুবই মন্থর। অথচ এসব খাতেই সবচেয়ে বেশি মানুষ নিয়োজিত। ফলে অধিকাংশ মানুষ বঞ্চিত থেকে গেছে। বিপরীতে সম্পদ কিছু মানুষের হাতে কেন্দ্রীভূত হচ্ছে। এ কারণে অর্থনীতি বৈষম্যমূলক পুনরুদ্ধারের পথে এগোচ্ছে। পুনরুদ্ধার নীতি-কাঠামোর অনুমিতি নির্ধারণে কিছু ঘাটতি দৃশ্যমান। ফলে অর্থনীতির কাঙ্ক্ষিত পুনরুদ্ধার সম্ভব হচ্ছে না। এখানে ২০২০-২১ অর্থবছরে কভিড-১৯-এর প্রথম ও দ্বিতীয় ধাক্কায় অর্থনীতির সংকোচনের স্বরূপ উন্মোচনের পাশাপাশি প্রচলিত নীতি-কাঠামোর সীমাবদ্ধতাগুলো বিশ্লেষণ করা হয়েছে। তারই আলোকে একটি সমতাভিত্তিক ও টেকসই পুনর্বাসন ও পুনরুদ্ধার নীতি-কাঠামোর রূপরেখা তুলে ধরা হয়েছে। গতানুগতিক নীতি-কাঠামো থেকে বেরোতে হবে বিশ্বব্যাপী কভিড-১৯ অতিমারীর অভিঘাত থেকে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সামগ্রিক চাহিদা বৃদ্ধির জন্য সম্প্রসারণশীল নীতি-কাঠামো নেয়া হয়েছে। রাজস্ব ও মুদ্রানীতির মাধ্যমে ব্যক্তি হাতে ও কারবারে সরাসরি নগদ অর্থ সরবরাহ করা হচ্ছে। উন্নত দেশগুলো গড়ে মোট দেশজ উৎপাদনের ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ প্রণোদনা অর্থ সরবরাহ করেছে। বাংলাদেশে লক্ষ করা গেছে, কভিড-১৯ অভিঘাতের মধ্যেও সরকার গতানুগতিক নীতি-কাঠামো থেকে বের হতে পারেনি। সবাই যখন সম্প্রসারণশীল রাজস্ব নীতির আশ্রয় নিচ্ছে, বাংলাদেশে তখন রাজস্ব ব্যয় আরো কমেছে। সরকার মনে করেছে অর্থনীতি খুব দ্রুতই অতিমারীর রেশ কাটিয়ে আগের অবস্থানে ফিরে যাবে। কিন্তু দ্বিতীয় বা তৃতীয় ঢেউয়ের তীব্র আঘাত আসতে পারে এবং তাতে অর্থনীতি আরো বেশি সংকুচিত হতে পারে এ রকম অনুমান করা হয়নি। ধরে নেয়া হয়েছিল এক বছরের মধ্যেই অতিমারী নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে। তাই স্বল্পমেয়াদি নীতিমালাই গ্রহণ করা হয়েছে। যদিও টেকসই পুনরুদ্ধারে প্রয়োজন ছিল মধ্যমেয়াদি নীতিমালা ও সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা। ঘোষিত প্রণোদনা বিশেষ পরিস্থিতিতে অ্যাডহক ভিত্তিতে মুদ্রানীতির মাধ্যমে নেয়া হয়েছে। বেশির ভাগ ঋণভিত্তিক। প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার ঘাটতির কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত খানা ও কারবারগুলোতে অর্থ যায়নি। ফলে তাদের দুর্ভোগ কমেনি এবং অধিকাংশ মানুষ দারিদ্র্যের কাতারে চলে যাচ্ছে। বৈষম্যমূলক পুনরুদ্ধার নীতি-কৌশলের বৈষম্যমূলক প্রভাবের কারণে উল্লম্ব দিকে আর করোনার মতো মহামারী, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদি অভিঘাতে অনুভূমিক দিকে সামাজিক পার্থক্য বাড়ছে। পিছিয়ে পড়া, দুর্বল, ঝুঁকিপ্রবণ দরিদ্র জনগোষ্ঠী, মধ্যবিত্ত, নিম্ন-মধ্যবিত্তরা ক্রমেই প্রান্তিক হয়ে পড়ছে। সম্পদ ওপরের দিকের কিছু ব্যক্তির হাতে কেন্দ্রীভূত হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, মহামারীর মধ্যেই কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে ৩ হাজার ৪১২ জন। এক দশকে ধনকুবেরের সংখ্যা বৃদ্ধির হারে শীর্ষে বাংলাদেশ। বিপরীতক্রমে দারিদ্র্য হার ও বৈষম্য বাড়ছে এবং মেরুকরণ ত্বরান্বিত হচ্ছে। প্রণোদনা প্যাকেজের বেশির ভাগই গিয়েছে রফতানিমুখী আর বৃহৎ কিছু শিল্পের হাতে। অন্যদিকে অনানুষ্ঠানিক খাত, কুটির, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাত (সিএমএসএমই) আর কৃষি খাত উপেক্ষিত রয়ে গেছে। ফলে বৈষম্য বাড়ছে। পুনরুদ্ধারের গতিপথ ইংরেজি কে অক্ষরের চেহারা ধারণ করছে। অর্থাৎ একদিকে সম্পদ কিছু মানুষের হাতে যাচ্ছে, অন্যদিকে অধিকাংশ মানুষের আয় কমছে। মধ্যবর্তী শ্রেণীগুলোর একটি অংশ ক্রমেই প্রান্তিক হয়ে পড়ছে এবং দরিদ্রের কাতারে চলে যাচ্ছে। আরেকটি অংশ রাষ্ট্রক্ষমতার (অপ)ব্যবহার করে বা কাছাকাছি থেকে যেকোনো প্রক্রিয়ায় অর্থোপার্জনে নিয়োজিত এবং উচ্চবিত্তের কাতারে যাচ্ছে। অন্য ক্ষুদ্র অংশটি কোনো রকমে টিকে আছে। এ ভাঙনের কারণে সামাজিক কাঠামোয় বড় ধরনের পরিবর্তন হচ্ছে। রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তাদের বলিষ্ঠ অবদান ও নেতৃত্ব ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছে। রাজনৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ায় তারা নীতি-কৌশল প্রণয়নে তেমন প্রভাব রাখতে পারছে না।  রাজস্ব ব্যয় বিগত বছরের তুলনায় কম ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট পরিমাণে বাড়লেও প্রধান খাতগুলোতে বিগত বাজেটের তুলনায় কম বরাদ্দ পেয়েছে। বিগত বছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৩ শতাংশ হ্রাস পেলেও বাজেটে জিডিপির তুলনায় এডিপি বা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূাচতে বরাদ্দ কমেছে ৫ শতাংশ। এর সঙ্গে রয়েছে সরকারের অতি নিম্ন বাজেট বাস্তবায়নের হার। ২০২১ সালের এপ্রিল পর্যন্ত সরকার বাজেট বাস্তবায়ন করতে পেরেছে মাত্র ৪৪ শতাংশ। আর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের হার মাত্র ২৯ শতাংশ। বাজেট বাস্তবায়নের গড় হার ৮৫ শতাংশ অর্জন করতে হলে সরকারকে অর্থবছরের শেষ দুই মাসে প্রায় ৪০ শতাংশ অর্থ ব্যয় করতে হবে, যা অসম্ভব। বোঝাই যাচ্ছে অর্থ ছিল পর্যাপ্তই কিন্তু তা ব্যবহার করা যায়নি। বাংলাদেশে প্রবৃদ্ধির একটি বড় অংশই এসেছে সরকারি ব্যয় থেকে। কিন্তু করোনাকালের অভিঘাত মোকাবেলায় যেখানে সরকারি ব্যয় কয়েক গুণ বাড়ানোর কথা সেখানে তা আগের তুলনায় কমেছে। ফলে অর্থনীতি আরো সংকুচিত হয়েছে। প্রবাসীদের পাঠানো অভিবাসী এবং কৃষি খাতের অপেক্ষাকৃত ভালো উৎপাদন অর্থনীতির চাকাকে এখনো ধরে রেখেছে। এ দুই উেসর অবস্থা খারাপ হলে অর্থনীতি আরো বেশি সংকোচনের শিকার হতো। অত্যধিক তারল্য সত্ত্বেও ঋণপ্রবাহ সামান্য সরকার ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে ঋণপ্রবাহ বাড়াতে অর্থের সরবরাহ বাড়িয়েছিল। করোনার মধ্যেই দেশে অধিক পরিমাণ অভিবাসী আয় এসেছে। বিদেশী সাহায্য পেয়েছে। ফলে তারল্য বেড়েছে। কিন্তু অধিক তারল্য থাকা সত্ত্বেও ঋণপ্রবাহ বাড়ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণপ্রবাহের লক্ষ্যমাত্রা ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ ঘোষণা করলেও অর্জন হয়েছে মাত্র ৮ শতাংশ। বড় প্রতিষ্ঠাণ ঋণ পেলেও নানা বাধার কারণে ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ পাচ্ছে না। দেখা যাচ্ছে অর্থ থাকা সত্ত্বেও নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে না। ফলে কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে না। ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগের হার কমেছে। অন্যদিকে রাজস্ব ব্যয়ও কমেছে। এ কারণে অর্থনীতির সংকোচন থেকে আশানুরূপ উত্তরণ হচ্ছে না। প্রণোদনা অর্থ বণ্টনে বৈষম্য সব অর্থনৈতিক খাতের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হলেও খুব অল্পসংখ্যক খাতই সঠিকভাবে তা পেয়েছে। সরকার মোট ১ লাখ ২৮ হাজার ৫৩ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে মার্চ ২০২১ পর্যন্ত সরবরাহ করা হয়েছে ৭৭ হাজার ৪৭১ কোটি টাকা। সর্বমোট বাস্তবায়ন অগ্রগতির হার ৬০ দশমিক ৩ শতাংশ। এ প্রণোদনার ৮০ দশমিক ৭ শতাংশই ঋণভিত্তিক। মাত্র ১৯ দশমিক ৩ শতাংশ রাজস্ব প্রণোদনা। রফতানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিলের পুরোটাই তারা পেয়েছে। অথচ কৃষিকাজ যান্ত্রিকীকরণে বরাদ্দকৃত ৩ হাজার ২২০ কোটি টাকার মধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে মাত্র ২৪৩ কোটি টাকা। কৃষি ভর্তুকির ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকার মধ্যে সরবরাহ হয়েছে মাত্র ৩ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা। এসএমই খাতের জন্য ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম ২ হাজার কোটি টাকা, বয়স্ক ভাতা ও বিধবা ভাতা ১৫০টি উপজেলায় সম্প্রসারণে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে লক্ষ্যভিত্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে নগদ অর্থ বিতরণে ৯৩০ কোটি টাকা বরাদ্দের মধ্যে মার্চ ২০২১ পর্যন্ত এক টাকাও সরবরাহ করা হয়নি। অন্যদিকে তৈরি পোশাক ও চামড়া খাতের শ্রমিকদের সহায়তার জন্য বরাদ্দকৃত ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার মধ্যে সরবরাহ হয়েছে মাত্র ৬ কোটি টাকা। প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বরাদ্দকৃত ১ হাজার ৫০০ কোটির টাকার মধ্যে সরবরাহ হয়েছে মাত্র ৫৭০ কোটি টাকা। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর কাছে প্রণোদনার অর্থ পৌঁছতে পারেনি। ফলে তাদের দুর্ভোগ কমানো যায়নি। বরং দারিদ্র্যের দুষ্টচক্রে আটকে যাচ্ছে। নতুন দারিদ্র্য ও বৈষম্য বৃদ্ধি অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করা প্রায় ২১ দশমিক ৪ শতাংশ জনগোষ্ঠী আয় হ্রাস ও বেকারত্বের শিকার হয়েছে। অন্য খাতের শ্রমিকরা একই পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়। বিভিন্ন হিসাব বলছে, কভিডের কারণে দারিদ্র্য বেড়ে ৪০ শতাংশের ওপরে উঠেছে। উন্নয়ন অন্বেষণের হিসাব বলছে, লকডাউন পরিস্থিতি আরো বাড়তে থাকলে দারিদ্র্য বৃদ্ধি পেয়ে ৪৭ শতাংশে দাঁড়াবে। একই সঙ্গে আয়বৈষম্য বেড়েছে সমাজের ওপর আর নিচতলার মানুষের। সিপিডির হিসাব বলছে, জনসংখ্যার সর্বনিম্ন আয়ের ১০ শতাংশ মানুষের আয়ের অংশ কভিডের আগে ছিল ৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ। কভিডের কারণে তা নেমে দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশে। নতুন দারিদ্র্য ও বৈষম্য বৃদ্ধির কারণে ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনও হুমকিতে পড়বে। স্বাস্থ্য খাতে ব্যক্তিগত খরচ অত্যধিক কয়েক বছর ধরে স্বাস্থ্য খাতের মাত্র ২৭ শতাংশ খরচ আসে বাজেট থেকে আর বাকি টাকা আসে জনগণের পকেট থেকে। ২০১৬ সালের খানা জরিপ অনুযায়ী স্বাস্থ্যসেবায় উচ্চমাত্রার ব্যক্তিগত খরচ ২ দশমিক ৬৯ শতাংশ মানুষকে চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে এবং ৪ দশমিক ৫০ শতাংশ মানুষকে দারিদ্র্যসীমার নিচে ঠেলে দেয়। বেসরকারি হাসপাতালে রোগীর সেবা এবং নিবিড় পরিচর্যার খরচ সরকারি হাসপাতালের চেয়ে যথাক্রমে ৮৯ ও ২৫ শতাংশ বেশি। সরকারি হাসপাতালগুলোতে একজন কভিড রোগীর পেছনে গড়ে ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ২৮ হাজার ১১৯ টাকা। বেসরকারি হাসপাতালে প্রতি রোগীর পেছনে খরচ হয় ২ লাখ ২২ হাজার ৭৪ টাকা। সরকারি হাসপাতালের প্রায় দ্বিগুণ। সরকারি হাসপাতালে ধারণক্ষমতা কম থাকার কারণে অনেককেই বাধ্য হয়ে বেসরকারি হাসপাতালের অধিক খরচ বহন করতে হয়। এভাবে দারিদ্র্য পরিস্থিতি আরো ঘনীভূত হচ্ছে। অন্যদিকে সময়মতো টিকা প্রাপ্তির বিষয়টি এখনো অনিশ্চিত। এ পর্যন্ত বাংলাদেশের ৫ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ টিকা গ্রহণ করেছে। ভারতে এ হার ১২ দশমিক ৭ শতাংশ এবং নেপালে ৮ দশমিক ৭ শতাংশ। শিক্ষা জীবন অপচয়ে উৎপাদনশীলতা হ্রাস দীর্ঘ ছুটির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো অনলাইনে ক্লাস নেয়া শুরু করে। বাংলাদেশের শুধু ১৩ শতাংশ মানুষ ইন্টারনেটের আওতায় আছে। ইউনিসেফের মতে, ৩ কোটি ৬৮ লাখ শিক্ষার্থী সব অনলাইন ক্লাস ও নির্দেশনা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। শিক্ষার্থীরা শিক্ষা জীবনের ৫ দশমিক ৫ মাস বা প্রায় অর্ধেক বছর হারাচ্ছে। এ পরিমাণ শিক্ষা জীবন অপচয়ের কারণে দীর্ঘমেয়াদে একজন শ্রমিকের উৎপাদনশীলতা হ্রাস পাবে প্রায় ১৩ শতাংশ। দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতির ক্ষতি হবে জিডিপির প্রায় ৩৩ শতাংশ। বিশ্বব্যাংক বলছে, সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে ১১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতি হবে। আর পরিস্থিতি উন্নতির দিকে গেলেও দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতি হবে ৬৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অনলাইন শিক্ষায় বঞ্চনার অন্যতম কারণ দুর্বল নেটওয়ার্ক ও উচ্চমূল্যের ইন্টারনেট খরচ। বাংলাদেশে ১ গিগাবাইট ইন্টারনেটের মূল্য প্রায় ১ ডলার। ভারতে এর মূল্য মাত্র দশমিক ২৬ ডলার। ইন্টারনেট খরচ নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন হলেও তা করা হচ্ছে না। আবার পর্যাপ্ত টিকার ব্যবস্থা করতে না পারায় এখনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেয়ার সম্ভাবনা কম।...

Read more

মুনাফা কমেছে আমান কটনের

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি আমান কটন ফাইবার্স লিমিটেড চলতি ২০২০-২১ হিসাববছরের নয় মাসের (জুলাই-মার্চ) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। আলোচ্য সময়ে...

Read more

মুনাফা কমেছে মুন্নু সিরামিকের

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি মুন্নু সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড চলতি ২০২০-২১ হিসাব বছরের নয় মাসে (জুলাই-মার্চ)অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। আলোচ্য সময়ে...

Read more

প্রথম প্রান্তিকে জি২০ গ্রুপের রেকর্ড বাণিজ্য

গত বছরের শেষ দিক থেকে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে বৈশ্বিক অর্থনীতি। কভিড-১৯ মহামারীর বিধ্বস্তপূর্ণ অবস্থা থেকে এরই মধ্যে কিছুটা পুনরুদ্ধার হয়েছে বড় অর্থনীতিগুলো। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) জি২০-ভুক্ত দেশগুলোয় আন্তর্জাতিক পণ্য বাণিজ্যে রেকর্ড হয়েছে। কভিডের পর বিশ্বের শীর্ষ ধনী দেশগুলোর এ জোট প্রথমবারের মতো কোনো প্রান্তিকে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির দেখা পেয়েছে। যদিও কিছু দেশে এখনো ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব ও বিধিনিষেধ বজায় রয়েছে। তবে অর্থনীতিতে সেটার প্রভাব গত বছরের চেয়ে অনেক কম বলে মনে করা হচ্ছে। খবর আনাদোলু এজেন্সি। সম্প্রতি প্রকাশিত অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার (ওইসিডি) প্রতিবেদন অনুযায়ী, জি২০ আন্তর্জাতিক পণ্য বাণিজ্যে বছরের প্রথম তিন মাসে রফতানি ও আমদানিতে প্রবৃদ্ধির রেকর্ড হয়েছে। এ বাণিজ্যের হার আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় যথাক্রমে ৮ শতাংশ এবং ৮ দশমিক ১ শতাংশ। যুক্তরাজ্য বাদে সমস্ত জি২০-ভুক্ত অর্থনীতি কভিডের পর প্রথম কোনো প্রান্তিকে এমন ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির দেখা পেয়েছে। এক্ষেত্রে ডলারের অবমূল্যায়ন ও পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি এ বাণিজ্য পুনরুদ্ধারে ভূমিকা পালন করেছে। পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশগুলোর অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সহায়তা করেছে। ওইসিডি বলেছে, জানুয়ারি থেকে মার্চ সময়কালে শস্য ও উদ্ভিজ্জ তেলসহ কৃষিপণ্যে দাম আগের বছরের তুলনায় ১০ শতাংশ বেড়েছে। অন্যদিকে ধাতবগুলোর দাম ২০১১ সালের স্তরের কাছাকাছি ছিল। আর এসব পণ্যের বড় রফতানিকারক এই জি২০-ভুক্ত দেশগুলো। এছাড়া ২০২১ সালের প্রথম প্রান্তিকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম প্রায় ৩৫ শতাংশ বেড়েছিল। কানাডায় ১০ দশমিক ৮ শতাংশ, রাশিয়ায় ১৩ দশমিক ১ শতাংশ এবং ইন্দোনেশিয়ায় ১২ দশমিক ৪ শতাংশ পর্যন্ত রফতানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জ্বালানি তেলে এমন উচ্চদামের রেকর্ড হয়েছে। ওইসিডি বলেছে, বেশির ভাগ জি২০-ভুক্ত দেশে প্রধান আমদানি হয় জ্বালানি পণ্যগুলো। এজন্য মূল্যবৃদ্ধির ফলে এ সময়কালে দেশগুলোয় উচ্চ আমদানিরও রেকর্ড হয়েছে। পাশাপাশি কভিডের সময় ইলেকট্রনিকস পণ্যের তীব্র চাহিদা মূল্যবৃদ্ধি ও ঘাটতি সৃষ্টি করে। বিশ্বজুড়ে এখনো চিপ ও সার্কিটগুলোর ব্যাপক ঘাটতি চলছে। অন্য বেশ কয়েকটি কারণের পাশাপাশি এসব পণ্য সরবরাহের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে ব্যর্থ হওয়ায় সংকট ও মূল্যবৃদ্ধি বিস্তৃত হয়েছে। চিপের উচ্চবাণিজ্য আংশিকভাবে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে। দেশটিতে রফতানি ও আমদানি যথাক্রমে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ এবং ৫ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়েছিল। চিপ সংকট বিশেষত গাড়ি খাতের সরবরাহ চেইনকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল। জি২০-ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পণ্য বাণিজ্য করা চীনে এ সময়ে ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ রফতানি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। যেখানে একই সময়ে দেশটির আমদানি বেড়েছিল ১৯ শতাংশ। এটি দুই দশকের মধ্যে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে সর্বোচ্চ বাণিজ্যের রেকর্ড ছিল। ধাতব, ধাতব আকরিক ও সার্কিটের ওপর ভর করে চীনের আমদানি প্রবৃদ্ধির এ রেকর্ড হয়। যেখানে ইলেকট্রনিকস পণ্য, যানবাহন ও টেক্সটাইল পণ্যের হাত ধরে দেশটিতে রফতানি বেড়ে যায়। প্রথম প্রান্তিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রফতানি ও আমদানি যথাক্রমে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ এবং ৫ শতাংশ বেড়েছিল। জি২০-ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে কেবল যুক্তরাজ্যেই নেতিবাচক ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির রেকর্ড হয়েছে। প্রথম তিন মাসে দেশটির রফতানি ও আমদানি উভয়ই যথাক্রমে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ এবং ১০ দশমিক ৫ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। প্রথম প্রান্তিকে পরিষেবা বাণিজ্যে মাঝারি প্রবৃদ্ধির দেখা মেলে। জি২০-ভুক্ত কয়েকটি দেশের প্রাথমিক তথ্যে দেখা গেছে, পরিষেবা খাতের রফতানি ও আমদানি প্রবৃদ্ধি ছিল যথাক্রমে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ এবং ২ দশমিক ৫ শতাংশ।

Read more

রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবে ডলার আধিপত্য হারাচ্ছে?

আগামী ১৫ বছরের মধ্যে রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবে ডলারের আধিপত্য আর থাকছে না। চলতি মাসের শুরুর দিকে এমনটাই হুঁশিয়ারি ছুড়ে দিয়েছেন মার্কিন ফান্ড ম্যানেজার ও ধনকুবের স্ট্যানলি ড্রাকেনমিলার। তার ভাষ্যমতে, ইতিহাসে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এখনকার মতো আর কখনই এমন পর্যায়ে যায়নি, যেখানে আর্থিক ও মুদ্রানীতির দিক থেকে কোনো কিছু করার কোনো সুযোগ ছিল না। বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির অর্থনীতিতে এখন চাহিদার পরিমাণ অনেক বেশি। মূল্যস্ফীতিও বাড়ছে। এর বিপরীতে বিনিময় হার কমছে ডলারের। বাজারের এমন পরিস্থিতির কারণে কয়েক সপ্তাহ ধরে পুঁজিবাজারেও এ নিয়ে এক ধরনের উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মুদ্রাবাজারে ডলারের আধিপত্য হারানোর আশঙ্কা নতুন কিছু নয়। অন্তত চার দশক ধরে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে অনেক পূর্বাভাস এসেছে। কিন্তু তাই বলে স্ট্যানলি ড্রাকেনমিলারের আশঙ্কাকে একেবারে উড়িয়ে দেয়াও যায় না। নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে ইউরোপের বিনিময় হার ব্যবস্থা থেকে পাউন্ড স্টার্লিংয়ের দ্রুত বিদায় নেয়ার বিষয়টি তিনি ও হাঙ্গেরীয় ধনকুবের জর্জ সোরোস বেশ ভালোভাবেই অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। ১৯৯২ সালের দিকে এমন অনুমানের ভিত্তিতেই বিনিয়োগ কৌশল সাজিয়েছিলেন তারা দুজনে। ফলে সে সময় তারা প্রচুর লাভবানও হয়েছেন। গোটা বিশ্বেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো এখন একাধিক মুদ্রানির্ভর রিজার্ভ ব্যবস্থার দিকে এগোচ্ছে। অন্যদিকে ডলারও দীর্ঘমেয়াদে অবমূল্যায়িত হচ্ছে। এ প্রেক্ষিতকেই সামনে তুলে এনে রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবে ডলারের আধিপত্য হারানোর শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ড্রাকেনমিলার। মুদ্রাবাজার ও বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞদের কেউই এখন তার এ মতকে উড়িয়ে দিতে পারছেন না। এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন, চলমান করোনা মহামারীর আগে থেকেই একটু একটু করে আধিপত্য হারাচ্ছিল ডলার। কভিডের প্রাদুর্ভাবজনিত অস্বাভাবিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিষয়টিকে আরো জোরালো করে তুলেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সাম্প্রতিক এক জরিপের তথ্যেও এর সমর্থন মিলছে। বিভিন্ন দেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ নিয়ে চালানো ওই সমীক্ষার তথ্য বলছে, ২০২০ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলারের রিজার্ভের মোট পরিমাণ কমেছে ৫৯ শতাংশ। এর মধ্য দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর মোট রিজার্ভে ডলারের পরিমাণ নেমে এসেছে ২৫ বছরের সর্বনিম্নে। এর আগে ১৯৯৯ সালে ইউরো চালুর পর বৈশ্বিক মোট রিজার্ভে ডলারের অংশের পতন হয়েছিল ৭১ শতাংশ। তবে বর্তমান পরিস্থিতিকে যৌক্তিক বলে মনে করছেন ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলের বিশেষজ্ঞ ব্যারি আইশেনগ্রিন। দীর্ঘদিন ধরে এ বক্তব্যের সমর্থনে যুক্তি দিয়ে এসেছেন তিনি। তার ভাষ্যমতে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর পৃথিবীতে সোভিয়েত প্রভাবমুক্ত দেশগুলোর মধ্যে শিল্পোৎপাদনে সবচেয়ে এগিয়ে থাকা দেশ ছিল যুক্তরাষ্ট্র। ফলে সে সময় আমদানিকারক ও রফতানিকারকদের মধ্যে বিনিময়ের প্রধান মাধ্যমও হয়ে উঠেছিল ডলার। একই সঙ্গে তা আন্তর্জাতিক ঋণ সম্প্রসারণ ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ তহবিলেরও প্রধান মুদ্রা হয়ে উঠেছিল। বর্তমানে বৈশ্বিক জিডিপিতে যুক্তরাষ্ট্রের অংশ এক-চতুর্থাংশের নিচে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, অনেকটা এ কারণেও ডলারের ক্রমাবনতিকে অযৌক্তিক ধরে নিয়ে এ বিষয়ে নানা অভিযোগ তুলছেন অনেকে। ষাটের দশকে মার্কিন অর্থনীতির আধিপত্যের সুবাদে ডলারের শক্তিশালী হয়ে ওঠার বিষয়টিকে ‘এক্সরবিট্যান্ট প্রিভিলেজ’ (অতি-আধিক্যের প্রভাবজনিত সুবিধা) হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন তৎকালীন ফরাসি অর্থমন্ত্রী গিকার্ড ডি ইস্টেইং। ওই সময় রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবে ডলারের আধিপত্যের কারণে ঋণ গ্রহণে মুদ্রাটির চাহিদাও ছিল অনেক বেশি। এর বিপরীতে মার্কিন সরকারের জন্য ঋণের ব্যয় (সুদ) ছিল অনেক কম। এ এক্সরবিট্যান্ট প্রিভিলেজের কারণে ফেডারেল রিজার্ভও হয়ে উঠেছিল বৈশ্বিক মুদ্রানীতির নিয়ামক। আইএমএফের জরিপের পরিসংখ্যান বলছে, ডলার এখন এ সুবিধা ক্রমেই হারাচ্ছে। কারণ ইউরো অঞ্চল থেকে ঋণ গ্রহণকারী দেশগুলো এখন রিজার্ভের জন্য ইউরোর দিকেই ঝুঁকছে বেশি। এর সঙ্গে সঙ্গে চীন ও রেনমিনবির (চীনা মুদ্রা ইউয়ানের আরেক নাম) ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটছে। অন্যদিকে ডলারের নিচ থেকে এ মাটি সরে যাওয়ার ঘটনাটি ঘটছে পর্যায়ক্রমে। অন্যদিকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণেও নির্ভরযোগ্যতা হারাচ্ছে ডলার। এর জন্য অনেকে ওয়াশিংটনের মুদ্রানীতিকেও দায়ী করছেন। এ বিষয়ে তাদের মতামত হলো বৈশ্বিক অর্থনীতিতে আধিপত্যকারী দেশ তার অবস্থান হারানোর বিষয়টি অহরহ ঘটে না। অতীতে এ ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে প্রধান অনুঘটক ছিল যুদ্ধবিগ্রহ ও রাজনৈতিক অস্থিরতা। কিন্তু অর্থনৈতিক ও আর্থিক অব্যবস্থাপনার কারণে শান্তির সময়েও এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। ডলারের বর্তমান পরিস্থিতিতে এসে দাঁড়ানোর কারণ হলো মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ফেডের দীর্ঘদিনের নীতি থেকে সরে আসা ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উচ্চাভিলাষী আর্থিক নীতি। বর্তমান পরিস্থিতিতে অর্থনীতিবিদদের বিভিন্ন মহলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, অনিয়ন্ত্রিত মূল্যস্ফীতির কারণে ডলারের অবমূল্যায়ন অব্যাহত থাকবে। এ বিষয়ে সর্বশেষ উদ্বেগ প্রকাশ করে বক্তব্য দিয়েছেন সাবেক মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি ও ডেমোক্র্যাট রাজনীতিবিদ ল্যারি সামার্স। গত মাসে এফটিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, বাইডেন প্রশাসন এখন সামষ্টিক অর্থনীতিতে আর্থিক দিক দিয়ে চার দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম দায়িত্বশীল নীতি অনুসরণ করছে। ব্যাখ্যা করতে গেলে দেখা যায়, ফেড এখন সম্পূর্ণ নতুন পথে হাঁটছে। আমরা এখন এমন এক অধ্যায় দেখতে পাচ্ছি, যার সঙ্গে পল ভোলকার (১৯৭৯-৮৭ পর্যন্ত ফেড চেয়ারম্যান) পরবর্তীকালের সবকিছুরই বিস্তর ব্যবধান রয়েছে। সেটা পরিমাণগতভাবে হোক বা গুণগতভাবে হোক। তিনিসহ অন্যান্য বিশেষজ্ঞের ভাষ্যমতে, গত চার দশকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ফেড যে আস্থার জায়গাটি অর্জন করেছিল, তা এখন প্রশ্নবিদ্ধ। ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, মার্কিন মুদ্রানীতিসৃষ্ট মূল্যস্ফীতির কারণে তাদের ডলারে সংরক্ষিত সঞ্চিতিও মূল্য হারাবে। বিনিয়োগ বিশ্লেষকদের মতে, মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মুদ্রাবাজারে ডলারের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিনিয়োগকারীদের শঙ্কা তৈরির আরো কারণ রয়েছে। মহামারীর কারণে গত বছরের মার্চ থেকে ট্রেজারি মার্কেটও (সরকারি সিকিউরিটিজ মার্কেট) মারাত্মক অস্থিতিশীলতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। মার্কিন ট্রেজারি মার্কেটকে সবচেয়ে বেশি তারল্যযুক্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্র ধরা হলেও বর্তমানে এ বাজারের তারল্য নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। গত বছরের মার্চের শুরুর দিকে কভিড-১৯ আতঙ্কের কারণে শুরুতে মার্কিন ট্রেজারি মার্কেটের দিকে ঝুঁকেছিলেন বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু ৯ মার্চের পর থেকে গোটা পরিস্থিতি বিশৃঙ্খল হয়ে উঠতে থাকে। সে সময় দেশটির ট্রেজারি মার্কেট থেকে (সরকারি বন্ড, বিল ও ট্রেজারি নোট) অনেকটা বিশৃঙ্খলভাবে নগদ মুদ্রার দিকে ঝুঁকে পড়েন বিনিয়োগকারীরা। ব্যাসেলভিত্তিক ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল সেটেলমেন্টের এক বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিনিয়োগকারীরা তড়িঘড়ি করে নগদ মুদ্রার দিকে ঝুঁকে পড়ায় হেজ ফান্ডগুলোও তড়িঘড়ি করে ট্রেজারি বিনিয়োগ থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করে। ফলে ট্রেজারি মার্কেটে এক ধরনের বিক্রয়চাপ তৈরি হয় এবং সরকারি বন্ড, বিল ও ট্রেজারি নোটেরও বাজার পড়ে যায়। অথচ মুনাফার আশায় এসব ট্রেজারি ফান্ড এর আগে বাজার থেকে বিপুল পরিমাণে ঋণ নিয়েছিল। এ অবস্থায় ট্রেজারি ফান্ডগুলোর আর্থিক সক্ষমতা হুমকির মুখে পড়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়। তাদের ঋণদাতারাও ঋণ ফেরত নিতে উদ্যোগী হয়। ফলে ট্রেজারি মার্কেটে বিক্রয়চাপ আরো বেড়ে যায়। নিরাপদ বিনিয়োগের বাজার ক্রমেই অনিরাপদ হয়ে উঠতে থাকে। এ অবস্থায় ধসে পড়া থেকে সুরক্ষা দিতে বাজারটিতে তারল্যের প্রবাহ বাড়াতে থাকে ফেড। একই সঙ্গে ব্যাংক নীতিতেও ছাড় দেয়ার মাধ্যমে ব্যাপক হারে মূলধন সরবরাহ করা হয়। ফেডের হস্তক্ষেপ বাজারটিকে আপাতত রক্ষা করলেও আরেক আশঙ্কা জন্ম নিয়েছে। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের অভিমত হলো, এ হস্তক্ষেপের কারণে বাজারটিতে তারল্য সংকট নিয়মিত বিরতিতে ফিরে আসতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে ফেডারেল ঋণ ও জিডিপির অনুপাত এখন রেকর্ড সর্বোচ্চ এসে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে জনগণের হাতে ট্রেজারি সিকিউরিটির পরিমাণ বাড়তে বাড়তে শিগগিরই তা ডিলার ব্যালান্সশিটকে ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবে ডলারের গুরুত্ব হারানোর পেছনে বড় নিয়ামক হয়ে উঠতে পারে মার্কিন রাজনীতির অকার্যকর ভূমিকা। মার্কিন ব্যবস্থার দুর্বলতাকে অনেক প্রকট করে ফুটিয়ে তুলেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। অন্যদিকে বাইডেন এখন দীর্ঘদিনের মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সহযোগিতার নীতি বাস্তবায়নের পথে ফিরে গিয়েছেন ঠিকই। কিন্তু ট্রাম্পের আমলের সংরক্ষণবাদ থেকে এখনো বেরিয়ে আসতে পারেননি তিনি। রিজার্ভ তহবিলের মুদ্রা হিসেবে ডলারের জন্য বিষয়টিকে দুঃসংবাদ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে বাইডেন প্রশাসন এখন অভূতপূর্ব এক প্রণোদনা প্যাকেজের মাধ্যমে অনেক আগ্রাসী আর্থিক নীতি গ্রহণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। অতীতের অর্থনৈতিক সংকটগুলোর ঠিক পর মুহূর্তে যে ধরনের আর্থিক নীতি নেয়া হয়েছিল, বাইডেনের বর্তমান নীতি তার চেয়েও অনেক বেশি আগ্রাসী। উচ্চপ্রবৃদ্ধির লক্ষ্য সামনে রেখে হাতে নেয়া বাইডেন প্রশাসনের এ আগ্রাসী নীতি ডলারের জন্য কিছুটা স্থিতিশীল পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

Read more

পিরোজপুরে লোকালয় থেকে চিত্রা হরিণ উদ্ধার

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার লোকালয় থেকে দুটি চিত্রা হরিণ উদ্ধার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার উপজেলার বেতমোর ইউনিয়নের উলুবাড়িয়া গ্রামে হরিণ দুটি  উদ্ধার করেন এলাকাবাসী। স্থানীয় জেলে...

Read more

চীন থেকে দেড় কোটি ডোজ টিকা আমদানি করা হবে

আগামী তিন মাসে (জুন-জুলাই ও আগষ্ট) চীন  থেকে ১ কোটি ৫০ লাখ ডোজ টিকা আমদানি করা হবে। চীনের সিনোফার্মা থেকে সরকারিভাবে আমদানি করা হবে  এ টিকা।...

Read more
Page 13 of 14 1 12 13 14

সাম্প্রতিক