বাংলাদেশের রপ্তানি যুক্তরাষ্ট্রে ২০২৬ সালে প্রায় ১৪ শতাংশ (প্রায় $1.25 বিলিয়ন) কমে যেতে পারে—বিশেষ করে পোশাক খাতের জন্য ক্ষতির পরিমাণ হবে প্রায় $1.08 বিলিয়ন—নতুন “রিসিপ্রোক্যাল শুল্ক” নীতির প্রভাব অনুসারে।
বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রপ্তানি গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাত থেকে সর্বোচ্চ রপ্তানি আয় আসে এই বাজার থেকে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে সম্প্রতি কার্যকর হওয়া নতুন “রিসিপ্রোক্যাল ট্যারিফ” (Reciprocal Tariff) নীতির কারণে বাংলাদেশের রপ্তানিতে বড় ধাক্কা লাগতে চলেছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান RAPID (Research and Policy Integration for Development)-এর এক সমীক্ষা অনুযায়ী, এই শুল্ক নীতি কার্যকর থাকলে ২০২৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রায় ১৪.৩ শতাংশ কমে যেতে পারে, যার পরিমাণ আনুমানিক $1.25 বিলিয়ন। এর মধ্যে কেবল পোশাক খাতেই ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় $1.08 বিলিয়ন।
শুল্ক নীতির পটভূমি
-
যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে আমদানি পণ্যের ওপর ২০% পর্যন্ত বাড়তি শুল্ক আরোপ করেছে।
-
এটি একটি প্রতিক্রিয়াশীল শুল্ক নীতি, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশ করতে চাওয়া দেশগুলোকে তাদের শুল্ক নীতির প্রতিফলন মেনে চলতে হচ্ছে।
-
ফলে বাংলাদেশি পণ্যের মূল্য প্রতিযোগিতা কমে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের রপ্তানির ওপর প্রভাব
১. রপ্তানি আয় হ্রাস
-
বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের বড় অংশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসে।
-
এই নীতির কারণে ২০২৬ সালে রপ্তানি কমে যাবে ১৪.৩%।
-
এর ফলে বছরে প্রায় $1.25 বিলিয়ন ক্ষতি হবে।
২. পোশাক খাতে ধাক্কা
-
পোশাক রপ্তানি বাংলাদেশের মোট রপ্তানির প্রায় ৮৫%।
-
যুক্তরাষ্ট্র এককভাবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় ক্রেতা।
-
নতুন শুল্ক নীতির কারণে পোশাক খাতে $1.08 বিলিয়ন ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
৩. প্রতিযোগিতার চাপ
-
ভারত ও ভিয়েতনামের মতো দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রে শুল্ক সুবিধা পেতে পারে।
-
ফলে তাদের পণ্যের দাম তুলনামূলকভাবে কম হবে, যা বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
৪. বৈদেশিক মুদ্রা সংকট
-
রপ্তানি কমে গেলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার আয় সংকুচিত হবে।
-
এতে ব্যালান্স অব পেমেন্ট ঘাটতি বাড়তে পারে।
সম্ভাব্য প্রভাবিত খাত
-
কর্মসংস্থান: পোশাক শিল্পে কর্মরত প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিকের কর্মসংস্থান হুমকির মুখে পড়তে পারে।
-
উৎপাদনশীলতা: অর্ডার কমে গেলে কারখানার উৎপাদনও সীমিত হবে।
-
অর্থনীতি: রাজস্ব, রেমিট্যান্সের বিকল্পে সবচেয়ে বড় ভরসা রপ্তানি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হলে অর্থনীতির সামগ্রিক প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
করণীয় ও নীতি সুপারিশ
১. বাজার বৈচিত্র্য
-
যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে ইউরোপ, আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা—এই বাজারগুলোতে প্রবেশাধিকার বাড়াতে হবে।
-
নতুন ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট (FTA) ও প্রেফারেন্সিয়াল ট্রেড এগ্রিমেন্ট (PTA) নিয়ে আলোচনা জরুরি।
২. মান ও উৎপাদন দক্ষতা বৃদ্ধি
-
কম খরচে উচ্চ মানের পণ্য উৎপাদনে প্রযুক্তি ব্যবহার বাড়াতে হবে।
-
অটোমেশন, উদ্ভাবনী নকশা ও টেকসই উৎপাদন কৌশল গ্রহণ করতে হবে।
৩. সরকারি নীতি সহায়তা
-
রপ্তানিকারকদের কর রিফান্ড ও প্রণোদনা আরও দ্রুত কার্যকর করতে হবে।
-
বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ বাড়াতে স্বচ্ছ নীতি দরকার।
৪. কূটনৈতিক উদ্যোগ
-
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনায় চাপ সৃষ্টি করতে হবে।
-
WTO ও দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে শুল্ক সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করতে হবে।
বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই শুল্ক নীতি পরিবর্তনের ধাক্কা সামলাতে হলে এখনই পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। সঠিক কৌশল গ্রহণ করলে বিকল্প বাজারে প্রবেশ, প্রযুক্তি উন্নয়ন ও কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে এই সংকট মোকাবিলা সম্ভব। অন্যথায়, রপ্তানি আয় কমে গিয়ে কর্মসংস্থান থেকে শুরু করে সামগ্রিক অর্থনীতি পর্যন্ত বড় ক্ষতির সম্মুখীন হবে বাংলাদেশ।
প্রদা/ডিও