বিভিন্ন রপ্তানিমুখী শিল্প কারখানার কর্মহীন হয়ে পড়া শ্রমিকদের স্বল্পকালীন নগদ সহায়তার পরিমাণ বাড়িয়েছে সরকার। আগে যেখানে সহায়তা ছিল ৩ হাজার টাকা, তা বাড়িয়ে ৫ হাজার টাকায় উন্নীত করা হয়েছে।
গত জুন থেকে যেসব শ্রমিক কর্মহীন হয়েছেন, তারা এখন থেকে ‘কর্মহীন শ্রমিকদের সুরক্ষা কর্মসূচি’র আওতায় ৫ হাজার টাকা করে নগদ সহায়তা পাবেন। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় গত জুনেই এ বিষয়ে নতুন নীতিমালা জারি করেছে।
নীতিমালা অনুযায়ী, কর্মহীন ও দুস্থ শ্রমিকদের শ্রম অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় তহবিলের কাছে সরাসরি অথবা অনলাইনে আবেদন করতে হবে। ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার, মোবাইল অ্যাপ বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমেও আবেদন করা যাবে। এজন্য কারখানার পরিচয়পত্র, জাতীয় পরিচয়পত্র এবং নিবন্ধিত মোবাইল নম্বর থাকতে হবে।নসম
শ্রমিকদের কারখানার পে-রোলে অন্তত ৬ মাস অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে। এ সুবিধা পেতে চাকরি পাওয়া ও চাকরি হারানোর প্রমাণ দেখাতে হবে।
জানা গেছে, নতুন নীতিমালা অনুযায়ী বিজিএমইএ তাদের সদস্য কারখানাগুলোকে উপকারভোগী শ্রমিকদের তালিকা তৈরি করে শ্রম অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় তহবিলে পাঠাতে নির্দেশ দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, করোনার কারণে তৈরি পোশাক ও চামড়া শিল্পের কর্মহীন শ্রমিকদের আর্থিক সহায়তা দিতে সরকার ২০২০ সালের অক্টোবরে ‘রপ্তানিমুখী শিল্পে কর্মহীন ও দুস্থ শ্রমিকদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম’ চালু করে। ২০২২ সালে পাট, হিমায়িত খাদ্য ও জাহাজ নির্মাণ খাতের শ্রমিকদেরও এ কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বর্তমানে এটি ‘কর্মহীন শ্রমিকদের সুরক্ষা কর্মসূচি’ নামে চালু রয়েছে।
এই কর্মসূচির আওতায় অস্থায়ীভাবে কর্মহীনদের নগদ সহায়তা দেওয়া হবে। এর ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে শ্রম অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় তহবিল। গত মে পর্যন্ত একজন শ্রমিক প্রতিমাসে ৩ হাজার টাকা করে সর্বোচ্চ তিন মাস সহায়তা পেতেন। এ কর্মসূচিতে অর্থায়ন করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জার্মান সরকার।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কারখানা লে-অফ, দুর্ঘটনা ও অসুস্থতার কারণে শ্রমিকরা কর্মহীন হয়ে পড়েন। কোনো শিল্প বা প্রতিষ্ঠানে সরাসরি কিংবা ঠিকাদারের মাধ্যমে মজুরি বা অর্থের বিনিময়ে দক্ষ, অদক্ষ, কায়িক, কারিগরি বা কেরানির কাজে নিযুক্ত ব্যক্তিরা এ সুবিধার আওতায় আসবেন।
এখন সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কর্মহীন শ্রমিকরা মাসিক ৫ হাজার টাকা করে সর্বোচ্চ তিন মাস সহায়তা পাবেন। তবে তিন মাসের মধ্যে নতুন চাকরি পেলে, যে মাসে তিনি কাজে যোগ দেবেন, সেই মাস থেকে আর এ সুবিধা মিলবে না।
অর্থ সহায়তা বাড়ানোর এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল শ্রম মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব এএইচএম শফিকুজ্জামানের সময়ে। তিনি টিবিএসকে বলেন, “অর্থ সহায়তা বাড়ানোর সিদ্ধান্তটি আমার দায়িত্বকালে নেওয়া হয়। শ্রমিকরা যাতে সহজে এই সহায়তা নিতে পারেন, সেজন্য অতীতের কিছু শর্ত ও প্রক্রিয়াও শিথিল করা হয়েছে।”
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত এ তহবিল থেকে মাত্র ৭০০ জন শ্রমিক সহায়তা পেয়েছেন।
কেন এ সংখ্যা এত কম—জানতে চাইলে শ্রম মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে টিবিএসকে বলেন, “তালিকা প্রস্তুতের দায়িত্ব বিজিএমইএকে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা এ ক্ষেত্রে সহায়তা করছে না।”
তিনি আরও বলেন, “বিজিএমইএ বা কারখানার মালিকরা চান না শ্রমিকের চাকরি চলে যাওয়ার তথ্য প্রকাশ পাক। কারণ এতে ব্র্যান্ড বায়ারদের দিক থেকে প্রশ্ন উঠতে পারে।”
প্রদা/ডিও