বিখ্যাত অনেক গানে স্থান পাওয়া কর্ণফুলী নদী এখন দখল আর দূষণে অস্তিত্ব সংকটে। চট্টগ্রামের প্রাণরেখা হিসেবে পরিচিত এই নদী ধীরে ধীরে হারাচ্ছে তার সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্য।
দুই তীরে গড়ে ওঠা কল-কারখানা, নগরের ময়লা-আবর্জনা ও শিল্পবর্জ্যে প্রতিদিন গড়ে পাঁচ হাজার মেট্রিক টনের বেশি দূষণকর পদার্থ কর্ণফুলীতে গিয়ে মিশছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, নদীর পানি ও পলিতে মাইক্রোপ্লাস্টিক কণার উপস্থিতি রয়েছে। এগুলো শুধু পানিদূষণই ঘটাচ্ছে না, বরং ক্ষতিকর রাসায়নিক বহন করে মাছ, কাঁকড়া, শামুকের দেহে জমছে এবং খাদ্যশৃঙ্খলের মাধ্যমে মানুষের শরীরেও পৌঁছে যাচ্ছে। ফলে পরিবেশের পাশাপাশি মানুষের স্বাস্থ্যও মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে।
দূষণের পাশাপাশি নদী দখলও অব্যাহত রয়েছে। কোথাও দখল করে তৈরি হয়েছে ট্রাকস্ট্যান্ড, কোথাও স্তূপ করে রাখা হচ্ছে বালি, আবার চাক্তাই খালের অংশজুড়ে গড়ে উঠেছে অবৈধ স্থাপনা। এভাবে ক্রমেই সঙ্কুচিত হচ্ছে কর্ণফুলী।
একসময় কর্ণফুলীতে রাম ফাঁইস্যা, মধু ফাঁইস্যা, পোপা, বাটা, চেউয়া, টেংরা, চিড়িং, আইড়সহ অসংখ্য প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত। কিন্তু গত এক দশকে এসব মাছ প্রজাতি ব্যাপক হারে হ্রাস পেয়েছে। স্থানীয় জেলেরা জানান, কলকারখানার বর্জ্য ও নদী থেকে বালু তোলার কারণে মাছ আর আগের মতো পাওয়া যায় না। সারাদিন জাল ফেলেও হাতে ফেরে শূন্যতা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, একসময় কর্ণফুলীতে পাওয়া যেত ৫৯ প্রজাতির স্বাদুপানির মাছ ও ৬৫ প্রজাতির ব্রাকিশ ওয়াটার মাছ। বর্তমানে এই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৪-৫টিতে। ১৯৬৪ সালে কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে নদীর স্রোত বাধাগ্রস্ত হওয়ায় এ সংকট আরও প্রকট হয়েছে।
তাদের আশঙ্কা, যদি এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে কর্ণফুলীর অবস্থা ঢাকার বুড়িগঙ্গার মতো হবে। অথচ কর্ণফুলী নদীর সঙ্গে জড়িয়ে আছে জেলেদের জীবন-জীবিকা, এবং বাংলাদেশের অর্থনীতিরও একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাই দেশের টেকসই উন্নয়নের স্বার্থেই কর্ণফুলীকে রক্ষা করা এখন সময়ের দাবি।
প্রদা/ডিও