মামলা, হামলা ও নানা হয়রানিমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবসায়ীরা আস্থার সংকটে ভুগছেন। নতুন বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন, অনেক উদ্যোক্তা পুঁজি ধরে রাখতেই হিমশিম খাচ্ছেন।
ব্যবসায়ী ও বিশ্লেষকদের মতে, ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর কারখানা ভাঙচুর, দখল, অগ্নিসংযোগ ও শ্রমিক অসন্তোষে ভয় ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। শতাধিক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, অনেক ব্যবসায়ী দেশ ছেড়েছেন। এতে উৎপাদনমুখী শিল্প খাত স্থবির হয়ে পড়ছে, কর্মসংস্থানও হুমকির মুখে।
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছাড়া বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়বে না। আর্থিক খাতও সংকটে রয়েছে। নির্বাচিত সরকার ছাড়া আস্থা ফিরবে না।
বিআইআইএস-এর গবেষণা পরিচালক ড. মাহফুজ কবীর জানান, মামলা-হয়রানির কারণে ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগে নিরুৎসাহ হচ্ছেন, অনেক কারখানায় ছাঁটাই চলছে। আস্থা ফেরানো এখন জরুরি।
বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, ব্যবসায়ীদের মিথ্যা মামলায় জড়ানো দুঃখজনক। আইনশৃঙ্খলা উন্নতি, কারখানার নিরাপত্তা, জ্বালানি সংকট ও ব্যাংকের উচ্চ সুদহার দ্রুত সমাধান না হলে বেসরকারি খাতের অবদান প্রত্যাশিত গতিতে বাড়বে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবৃদ্ধি কমেছে, মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির এলসি ২৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি নেমেছে ৩.৯৭ শতাংশে।
অর্থনীতিবিদ ড. মুস্তফা কে মুজেরি বলেন, ঋণপ্রবৃদ্ধি সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে, বিনিয়োগ বাড়ছে না। নির্বাচিত সরকার ছাড়া ব্যবসায়ীদের আস্থা ফেরানো কঠিন।
অন্যদিকে, আইনজীবীরা বলছেন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় ব্যবসায়ীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন, যা অর্থনীতির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
অর্থনীতিবিদ ড. ফাহমিদা খাতুন মনে করেন, মামলা-হয়রানির কারণে উদ্যোক্তারা বড় উদ্যোগ নিচ্ছেন না, ফলে অর্থনীতির পুনরুদ্ধার বিলম্বিত হচ্ছে। বেসরকারি খাত ছাড়া প্রবৃদ্ধি সম্ভব নয়।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, আস্থা ফেরাতে শুধু আশ্বাস নয়, দৃশ্যমান পদক্ষেপ প্রয়োজন। হয়রানিমুক্ত নিরাপদ পরিবেশ, নীতি স্থিতিশীলতা ও সরকার-বাণিজ্য মহলের নিয়মিত সংলাপই বিনিয়োগ ঘুরে দাঁড়ানোর পথ তৈরি করতে পারে।
প্রদা/ডিও