দৈনিক অর্থনীতি
Advertisement
  • প্রচ্ছদ
  • বাংলাদেশ অর্থনীতি
  • আন্তর্জাতিক অর্থনীতি
  • অর্থনীতি সমাচার
  • মহানগর
  • অপরাধ
  • উপজেলা
  • শেয়ার বাজর
  • অর্থ কথা
  • মুদ্রা বাজার
  • বন্দর ও শিল্পনীতি
  • হাটবাজার অর্থনীতি
  • কর্পোরেট আইকন
  • আমদানি রপ্তানি
  • ফিউচার অর্থনীতি
  • ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প নীতি
  • দুর্নীতি
    • সারাদেশে দুর্নীতি
  • বাণিজ্য
  • ব্যংকিং অর্থনীতি
  • বিবিধ
    • জেলা উপজেলার অর্থনীতি
    • চাকরি
    • দেশ বিদেশ অর্থনীতি
    • শীর্ষ অর্থনীতি
    • শ্রমিক অর্থনীতি
    • জাতীয় অর্থনীতি
    • স্বাস্থ্য খাত
    • শিক্ষাখাত
    • খেলাধুলা
    • টেলিকম ও প্রযুক্তি
    • সারাদেশ
  • ভিডিও
  • প্রচ্ছদ
  • বাংলাদেশ অর্থনীতি
  • আন্তর্জাতিক অর্থনীতি
  • অর্থনীতি সমাচার
  • মহানগর
  • অপরাধ
  • উপজেলা
  • শেয়ার বাজর
  • অর্থ কথা
  • মুদ্রা বাজার
  • বন্দর ও শিল্পনীতি
  • হাটবাজার অর্থনীতি
  • কর্পোরেট আইকন
  • আমদানি রপ্তানি
  • ফিউচার অর্থনীতি
  • ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প নীতি
  • দুর্নীতি
    • সারাদেশে দুর্নীতি
  • বাণিজ্য
  • ব্যংকিং অর্থনীতি
  • বিবিধ
    • জেলা উপজেলার অর্থনীতি
    • চাকরি
    • দেশ বিদেশ অর্থনীতি
    • শীর্ষ অর্থনীতি
    • শ্রমিক অর্থনীতি
    • জাতীয় অর্থনীতি
    • স্বাস্থ্য খাত
    • শিক্ষাখাত
    • খেলাধুলা
    • টেলিকম ও প্রযুক্তি
    • সারাদেশ
  • ভিডিও
No Result
View All Result
দৈনিক অর্থনীতি
No Result
View All Result
Home বাংলাদেশ অর্থনীতি

বিনিয়োগ-কর্মসংস্থানে আস্থার ঘাটতি

August 8, 2025
0 0
0
বিনিয়োগ-কর্মসংস্থানে আস্থার ঘাটতি

ক বছর আগে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার সময় দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির পরিস্থিতি ছিল বেশ নাজুক। জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে মন্থরতা, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ডলার সংকট, বিনিময় হারে অস্থিরতা, রিজার্ভের ক্রমাগত ক্ষয়, বৈদেশিক বাণিজ্যের ভারসাম্যে (বিওপি) রেকর্ড ঘাটতি, ব্যাংক খাতে নৈরাজ্যসহ নানা সংকটে হাবুডুবু খাচ্ছিল দেশের অর্থনীতি। গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী এক বছরে সামষ্টিক অর্থনীতির এসব সংকট অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। তবে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগে খরা, কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে পিছিয়ে পড়া, মূল্যস্ফীতি হ্রাস পেলেও কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় না নামা, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল না হওয়ার মতো চ্যালেঞ্জ রয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে।

শেখ হাসিনা ভারত পালিয়ে যাওয়ার পর ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেয়। এ সরকারের এক বছর পূর্ণ হলো আজ। অর্থনীতিবিদ, বিশ্লেষক, ব্যবসায়ী ও ব্যাংক নির্বাহীরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে গণমানুষের প্রত্যাশা ছিল বিপুল, সে তুলনায় প্রাপ্তি সামান্যই। অনেক প্রাণ ও রক্তের বিনিময়ে দেশ গঠনের যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল, সেটি পুরোপুরি কাজে লাগানো যায়নি। ঘুস, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, প্রশাসনিক অদক্ষতাসহ দেশের অনেক মৌলিক সংকট আগের মতোই বিরাজমান। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে রাষ্ট্র সংস্কারের যেসব প্রতিশ্রুতির কথা শোনা গিয়েছিল, তার অনেকগুলোই গত এক বছরে আলোর মুখ দেখেনি।

অর্থনীতিবিদ ও ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইএনএম) নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তফা কে মুজেরী বলেন, ‘শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির সময়ে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির যে নাজুক পরিস্থিতি ছিল, তা কিছুটা কাটিয়ে ওঠা গেছে। কিন্তু যে বিপুল প্রত্যাশা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েছিল, সেটি পূরণ হয়নি। ব্যাংক খাতে কিছু সংস্কার হয়েছে, অর্থনীতির কিছু সূচকে উন্নতি দেখা গেছে, তবে তা প্রত্যাশার তুলনায় খুবই কম। সব মিলিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরের অর্জন উজ্জ্বল বলা যাবে না।’

২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছিল শেখ হাসিনার সরকার। এ বাজেট বাস্তবায়ন শুরুর এক মাস পরই তার সরকারের পতন হয়। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর দাবি উঠেছিল হাসিনা সরকারের বাজেট বাতিল করে বাস্তবভিত্তিক বাজেট প্রণয়নের। কিন্তু অর্থবছরের শেষ দিন পর্যন্ত শেখ হাসিনার বাজেট টেনে নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। যদিও শেষ পর্যন্ত সে বাজেট অবাস্তবায়িত থেকে গেছে। গত অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। এ লক্ষ্য সংশোধন করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা আহরণের লক্ষ্য দেয়া হয়েছিল। যদিও অর্থবছর শেষে সংস্থাটি আহরণ করতে পেরেছে ৩ লাখ ৭০ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ৯২ হাজার ৬২৬ কোটি টাকার কম রাজস্ব আহরণ হয়েছে। আর মূল বাজেটে ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৭০ হাজার ১২৬ কোটি টাকা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, প্রাথমিক হিসাবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে মাত্র ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ। কভিড-সৃষ্ট দুর্যোগে পর্যুদস্থ ২০১৯-২০ অর্থবছর বাদ দিলে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির এ হার গত ২৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

আর্থিক এ বেহাল পরিস্থিতির মধ্যে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। এটি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ঘোষিত বাজেটের চেয়ে ৭ হাজার কোটি টাকা কম হলেও সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ৪৬ হাজার কোটি টাকা বেশি। ঘোষিত বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। আর তিন বছর ধরে ৯ শতাংশের বেশি থাকা মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার ঘোষণাও দেয়া হয়।

যদিও মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরতে এ মুহূর্তে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যকে গৌণ মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এজন্য নীতি সুদহার (রেপো রেট) বাড়িয়ে ১০ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছিল। এর প্রভাবে ব্যাংক ঋণের সুদহার উঠে গেছে ১৫-১৬ শতাংশে। প্রত্যাশা অনুযায়ী মূল্যস্ফীতির লাগামও টানা যায়নি। সর্বশেষ চলতি বছরের জুলাইয়ে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে বলে জানিয়েছে বিবিএস। সংস্থাটির দাবি, গত মাসে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ। জুনে যা ছিল ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ। যদিও বিবিএস ঘোষিত মূল্যস্ফীতির হার নিয়ে অর্থনীতিবিদদের মধ্যে সংশয় রয়েছে। তাদের দাবি, শেখ হাসিনার আমলে মূল্যস্ফীতির ভুয়া তথ্য প্রকাশ করত বিবিএস। এখনো আগের নীতি ও কাঠামোতেই মূল্যস্ফীতির তথ্য প্রকাশ করছে সংস্থাটি।

গত বছরের জুলাইয়ে ছাত্রদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা আন্দোলনের মূল দাবি ছিল কোটা সংস্কারের মাধ্যমে বৈষম্যের বিলোপ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি। কিন্তু গত এক বছরে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেই পিছিয়ে আছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ সময়ে কোনো বিসিএস পরীক্ষা আয়োজন করতে পারেনি পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। বিসিএসের মতো দেশের সরকারি ব্যাংক, বীমা, বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা অন্য কোনো নিয়োগ প্রক্রিয়াও সেভাবে সম্পন্ন করতে পারেনি সরকার। এতে শিক্ষাজীবন শেষ করা বেকার তরুণদের মধ্যে হতাশা আরো তীব্র হয়েছে।

সরকারি চাকরির পাশাপাশি দেশের বেসরকারি খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টির পথও সংকুচিত হয়েছে। গত এক বছরে বেসরকারি খাতে ব্যাংক ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৬ দশমিক ৪০ শতাংশ। বহু বছর এ খাতে এতটা ঋণ খরা দেখা যায়নি। বিশ্লেষকরা বলছেন, ঋণ প্রবৃদ্ধি না হওয়ার অর্থ বেসরকারি খাতের সম্প্রসারণ রুদ্ধ হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির এলসি নিষ্পত্তি ২৫ দশমিক ৪২ শতাংশ কমে গেছে। এর আগে ২০২৩-২৪ অর্থবছরেও মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি ২৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ কমে গিয়েছিল।

ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের কাছে সবচেয়ে বড় প্রত্যাশা ছিল বিদেশী বিনিয়োগ ও অনুদান নিয়ে আসার। কিন্তু গত এক বছরে এক্ষেত্রে দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখা যায়নি। উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান ও দেশের কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত সহায়তা পাওয়া যায়নি। কিছু ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুত অর্থও পায়নি বাংলাদেশ।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন মনে করেন সাফল্য ও ব্যর্থতার পরিমাপ করলে অন্তর্বর্তী সরকার ৫০ শতাংশ নম্বর পেতে পারে। তিনি বলেন, ‘গত এক বছরে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির কিছু সূচকে উন্নতি হয়েছে। ব্যাংক খাতে কিছু দৃশ্যমান সংস্কার হয়েছে। রেমিট্যান্স ও রফতানি আয় প্রবৃদ্ধির ধারায় রয়েছে। ক্ষয় বন্ধ হয়ে রিজার্ভ বাড়ছে। কিন্তু অর্থনীতির মৌলিক সমস্যাগুলোর দুর্বলতা থেকে গেছে।’

ফাহমিদা খাতুনের ভাষ্যমতে, গণ-অভ্যুত্থানের সরকারের কাছে মানুষের প্রত্যাশা ছিল বিপুল। প্রত্যাশা পূরণে সরকার নানা সংস্কার কার্যক্রমের কথা বলেছিল। কিন্তু এক ব্যাংক খাত ছাড়া অন্য কোথাও দৃশ্যমান সংস্কার হয়নি। বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতের যেসব অস্বচ্ছতা ও সংকট ছিল সেগুলো থেকে গেছে। দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, প্রশাসনিক অদক্ষতা—সবকিছুই আগের মতো চলছে।

সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার গবেষণা ও তথ্য বলছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বিনিয়োগ খরা, কর্মসংস্থানের অভাব ও বেকারত্বের প্রভাবে গত এক বছরে দেশে দারিদ্র্য বেড়েছে। এ সময়ে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নেও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি সরকার। দখল ও চাঁদাবাজির মতো ঘটনা প্রতিদিনই সংবাদ হচ্ছে। বরং কিছু ক্ষেত্রে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে আগের চেয়ে বেশি হারে চাঁদা দিতে হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে।

গত এক বছরে অন্তর্বর্তী সরকারের সফলতার মধ্যে বড় করে দেখা হয় ব্যাংক খাত সংস্কার। শেখ হাসিনার টানা দেড় দশকের শাসনামলে অর্থনীতির মেরুদণ্ড হিসেবে পরিচিত এ খাতে নজিরবিহীন অরাজকতা ও লুটপাট হয়েছে। নামে-বেনামে নিজ ব্যাংক থেকে আমানতকারীদের অর্থ লোপাট করেছেন চেয়ারম্যান-পরিচালকরা। আর এক্ষেত্রে সহযোগীর ভূমিকায় ছিল খোদ কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুরকে গভর্নর পদে নিয়োগ দেয়া হয়। দায়িত্ব নিয়ে তিনি বেসরকারি খাতের ১৪টি ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দেন। এর ফলে লুটপাট সাময়িক বন্ধ হলেও ব্যাংকগুলো আমানতকারীদের আস্থা হারায়। তীব্র হয়ে ওঠে পর্ষদ ভেঙে দেয়া ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট। চাহিদা অনুযায়ী আমানত তুলতে না পেরে লাখ লাখ গ্রাহক ব্যাংকের দ্বারে ঘুরতে থাকেন। এ পরিস্থিতিতে টাকা ছাপিয়ে ওই ব্যাংকগুলোকে ধার দেয়া শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ প্রক্রিয়ায় ৫০ হাজার কোটি টাকারও বেশি ধার দেয়া হয়েছে। এতে ব্যাংক খাতে যে তীব্র আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছিল, সেটি অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছে।

দেশের একাধিক ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহী বণিক বার্তাকে বলেছেন, গত দেড় দশকে ব্যাংক খাতে যেভাবে লুণ্ঠন হয়েছে, সেটি এখন বন্ধ। তবে অনিয়ম-দুর্নীতি এখনো পুরোপুরি থামেনি। সুশাসন পরিস্থিতির উন্নতি হলেও এখনো সেটিকে সন্তোষজনক বলা যায় না।

শেখ হাসিনার শাসনামলে দেশের ব্যাংকগুলো কৃত্রিমভাবে খেলাপি ঋণ লুকিয়ে রাখতে পারত। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকাও ছিল বেশ উদার। আহসান এইচ মনসুর গভর্নর হওয়ার পর খেলাপি ঋণ লুকিয়ে রাখার সংস্কৃতি অনেকটাই বন্ধ হয়েছে। এতে ব্যাংক খাতের অতীত ক্ষত ফুটে উঠছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের জুনের শেষে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকা। ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত ঋণের ২৭ শতাংশেরও বেশি এখন খেলাপির খাতায় চলে গেছে। যেখানে ২০০৯ সালে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল মাত্র ২২ হাজার ৪৮২ কোটি টাকা।

খেলাপি ঋণের তথ্যের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা এলেও এ ঋণ আদায়ে এখন পর্যন্ত কার্যকর পদক্ষেপ সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে দেখা যায়নি। ৫০ কোটি টাকার বেশি এমন খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে একটি কমিটি গঠন করে দেয়া হলেও সেটির কার্যক্রম নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে।

দেশ থেকে অর্থ পাচার কমে আসা ও ব্যাংক খাতে লুণ্ঠন বন্ধ হওয়ার প্রভাবে গত এক বছরে দেশে বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রবাহে বড় উল্লম্ফন হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, কেবল ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার। দেশের ইতিহাসে এত পরিমাণ রেমিট্যান্স অতীতে কখনো দেখা যায়নি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশে ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল। সে হিসাবে গত অর্থবছরে রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি ছিল ২৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ। রেমিট্যান্সের উচ্চ প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি গত অর্থবছরে রফতানি খাতও প্রবৃদ্ধি পেয়েছে। গত অর্থবছরে রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ।

রেমিট্যান্স ও রফতানি প্রবৃদ্ধির ওপর ভর করে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট কাটাতে পেরেছে বাংলাদেশ। গত তিন বছর ডলারের যে তীব্র সংকট ছিল, অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরে সেটি অনেকটাই কেটে গেছে। বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়ার পরও ডলারের দর ১২২ টাকায় স্থিতিশীল রয়েছে। একই সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী (বিপিএম৬) গত বছরের ৩১ জুলাই দেশের রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলার। চলতি বছরের ৬ আগস্ট এ রিজার্ভ ২৫ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে।

গত চার অর্থবছরে দেশের বৈদেশিক লেনদেনে সবচেয়ে বড় উদ্বেগ ছিল ব্যালান্স অব পেমেন্টের (বিওপি) ঘাটতি। ২০২১-২২ অর্থবছরে বিওপির ঘাটতি ছিল ৬৬৫ কোটি ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ ঘাটতি বেড়ে ৮২২ কোটি ডলারে ঠেকে। এরপর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ঘাটতি কিছুটা কমে এলেও পরিমাণ দাঁড়ায় ৪৩০ কোটি ডলারে। অর্থাৎ শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির আগের তিন অর্থবছরে বিওপিতে ১৯ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলার ঘাটতি তৈরি হয়েছিল। এ ঘাটতি পূরণ হয়েছে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির মাধ্যমে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর বিওপিতে ঘাটতি না হয়ে উল্টো ৩২৯ কোটি বা ৩ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার উদ্বৃত্ত থেকেছে।

রাষ্ট্রের নাগরিকদের আর্থসামাজিক উন্নয়ন, সুরক্ষা, মৌলিক সেবার নিশ্চয়তা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং সর্বোপরি বৈষম্য প্রশমনের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রণীত বাজেট পরিচিত জনকল্যাণমুখী বাজেট হিসেবে। বাংলাদেশের মানুষ জনকল্যাণমুখী বাজেট থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে বহু বছর ধরে। আওয়ামী শাসনামলে দেশে বাজেট মানেই ছিল উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের নামে জনগণের অর্থের যথেচ্ছ তছরুপ। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের ফলে গণবিরোধী এ বাজেট কাঠামো পরিবর্তনের সুযোগ ছিল। যদিও অন্তর্বর্তী সরকারের দেয়া ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে দেশের অর্থনীতির দর্শন ও ব্যবস্থাপনায় তেমন কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি। বৈষম্য বিলোপের ডাক দিয়ে একটি অভ্যুত্থান সফল হলেও অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় তা দূর করার শক্ত উদ্যোগ নেয়া হয়নি।

শেখ হাসিনার দেড় দশকের শাসনামলে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ১৮৮ শতাংশ। ওয়াসার পানির দাম বেড়েছে ২০০ শতাংশের কাছাকাছি। অস্বাভাবিক হারে বাড়ানো হয়েছে গ্যাস ও জ্বালানি তেলের দামও। জনগণের জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলা এসব গণদ্রব্যের দাম কমানোর সুযোগ ছিল অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে। যদিও বিদ্যুৎ, গ্যাস, জ্বালানি তেল ও পানির মতো গণদ্রব্যের মূল্য নির্ধারণ চলছে আগের পদ্ধতিতে। বিদ্যুৎ খাতের ক্যাপাসিটি চার্জসহ অনৈতিক চুক্তিগুলোও বাতিল কিংবা পুনর্মূল্যায়ন হয়নি।

শেখ হাসিনার আমলে প্রতি বছরই বড় অংকের ঘাটতি বাজেট ঘোষণা করায় সরকারের ঋণের বোঝা কেবলই স্ফীত হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, চলতি বছরের মার্চ শেষে দেশী-বিদেশী উৎস থেকে সরকারের নেয়া ঋণের স্থিতি ছিল ১৯ লাখ ৯৯ হাজার ৯২৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১১ লাখ ৫৭ হাজার ৯৩৬ কোটি টাকার ঋণ নেয়া হয়েছে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে। বাকি ৮ লাখ ৪১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকার ঋণ বিদেশী উৎস থেকে নেয়া হয়েছে। অথচ ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা যখন ক্ষমতা গ্রহণ করেন, তখন সরকারের ঋণ স্থিতি মাত্র ২ লাখ ৭৬ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা ছিল।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেট প্রণয়নের সময় সুযোগ ছিল ঋণনির্ভর বাজেট থেকে বের হয়ে আসার। যদিও তারা সে পথে হাঁটেননি। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা নেয়া হবে তারল্য সংকটে থাকা দেশের ব্যাংক খাত থেকে। ব্যাংক-বহির্ভূত বিভিন্ন খাত থেকে নেয়া হবে আরো ২১ হাজার কোটি টাকার ঋণ। বাকি ৯৬ হাজার কোটি টাকা বিদেশী উৎস থেকে নেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। যদিও কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় রাজস্ব আহরণ না হওয়ায় অর্থবছর শেষে ঘাটতি বাজেটের আকার আরো বেড়ে যেতে পারে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে সুযোগ ছিল লালফিতার দৌরাত্ম্য থেকে বের হয়ে আসার। কিন্তু সেটি না হয়ে গত এক বছরে সরকার যেন আমলাতন্ত্রের ওপর আরো বেশি নির্ভর হয়ে পড়েছে। সরকারের অভ্যন্তরে প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা বেড়েছে। বিপরীতে কমেছে কাজের গতি। সচিবালয়ের পাশাপাশি সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমেও মন্থরতা বিরাজ করছে। ব্যয় সংকোচনের পাশাপাশি অনেক অপব্যয়ও রোধ করতে পারেনি সরকার। গত এক বছরে শিক্ষার মান উন্নয়নে অন্তর্বর্তী সরকার কার্যকর কোনো উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে পারেনি। উল্টো ‘মব’ কালচার বেড়ে যাওয়ার প্রভাবে শিক্ষার্থীরা আরো বেশি ক্লাসবিমুখ হয়েছে। ব্যর্থ হয়েছে সড়কে বিশৃঙ্খলা রোধ ও দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে।

Tags: অর্থনীতিবাণিজ্য
ShareTweetPin
Previous Post

৩.৫ বছর ধরে কমছে প্রকৃত আয়

Next Post

ক্রেতার আগ্রহ বেশি ছোট রুই-পাবদায়

Related Posts

ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের চেয়েও বড় চ্যালেঞ্জের এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন
আন্তর্জাতিক অর্থনীতি

ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের চেয়েও বড় চ্যালেঞ্জের এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন

August 11, 2025
1
চট্টগ্রামের শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে চসিকের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে: মেয়র
লীড স্লাইড নিউজ

চট্টগ্রামের শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে চসিকের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে: মেয়র

August 11, 2025
2
১২০ বার পেছালো সাগর-রুনি হত্যার প্রতিবেদনের তারিখ
অপরাধ

১২০ বার পেছালো সাগর-রুনি হত্যার প্রতিবেদনের তারিখ

August 11, 2025
3
৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার কিনেছে ১১ ব্যাংক থেকে আরো বাংলাদেশ ব্যাংক
মুদ্রা বাজার

৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার কিনেছে ১১ ব্যাংক থেকে আরো বাংলাদেশ ব্যাংক

August 11, 2025
1
নজিরবিহীন লুটপাট ‘সাদাপাথরে’
লীড স্লাইড নিউজ

নজিরবিহীন লুটপাট ‘সাদাপাথরে’

August 11, 2025
2
চাকরির সুযোগ কমছে কম্পিউটার সায়েন্স স্নাতকদের যুক্তরাষ্ট্রে
লীড স্লাইড নিউজ

চাকরির সুযোগ কমছে কম্পিউটার সায়েন্স স্নাতকদের যুক্তরাষ্ট্রে

August 11, 2025
3
Next Post
ক্রেতার আগ্রহ বেশি ছোট রুই-পাবদায়

ক্রেতার আগ্রহ বেশি ছোট রুই-পাবদায়

No Result
View All Result

সাম্প্রতিক

ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের চেয়েও বড় চ্যালেঞ্জের এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন

চট্টগ্রামের শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে চসিকের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে: মেয়র

১২০ বার পেছালো সাগর-রুনি হত্যার প্রতিবেদনের তারিখ

মালেশিয়ায় পৌছেছেন প্রধান উপদেষ্টা

৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার কিনেছে ১১ ব্যাংক থেকে আরো বাংলাদেশ ব্যাংক

নজিরবিহীন লুটপাট ‘সাদাপাথরে’

সম্পাদক ও প্রকাশক

প্রধান সম্পাদক: আহমেদ কবির
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : আহমেদ কবির

প্রধান কার্যালয়

ঢাকা ২৮নং রোড, গুলশান ১, ঢাকা, বাংলাদেশ, ১২১২ বাংলাদেশ

কর্পোরোট কার্যালয়

সানি টাওয়ার, এক্স ব্যুরো অফিস এশিয়ান টিভি ২৯১ সিডিএ অ্যাভিনিউ ২য় তলা, লালখান বাজার, চট্টগ্রাম।

আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক

Copyright © 2018-2025: Dainik Orthoniti II Design By : F.A.CREATIVE FIRM LTD

No Result
View All Result
  • প্রচ্ছদ
  • বাংলাদেশ অর্থনীতি
  • আন্তর্জাতিক অর্থনীতি
  • অর্থনীতি সমাচার
  • মহানগর
  • অপরাধ
  • উপজেলা
  • শেয়ার বাজর
  • অর্থ কথা
  • মুদ্রা বাজার
  • বন্দর ও শিল্পনীতি
  • হাটবাজার অর্থনীতি
  • কর্পোরেট আইকন
  • আমদানি রপ্তানি
  • ফিউচার অর্থনীতি
  • ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প নীতি
  • দুর্নীতি
    • সারাদেশে দুর্নীতি
  • বাণিজ্য
  • ব্যংকিং অর্থনীতি
  • বিবিধ
    • জেলা উপজেলার অর্থনীতি
    • চাকরি
    • দেশ বিদেশ অর্থনীতি
    • শীর্ষ অর্থনীতি
    • শ্রমিক অর্থনীতি
    • জাতীয় অর্থনীতি
    • স্বাস্থ্য খাত
    • শিক্ষাখাত
    • খেলাধুলা
    • টেলিকম ও প্রযুক্তি
    • সারাদেশ
  • ভিডিও

Copyright © 2018-2025: Dainik Orthoniti II Design By : F.A.CREATIVE FIRM LTD

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Create New Account!

Fill the forms bellow to register

All fields are required. Log In

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In