মশক নিধনসহ পৃথক তিনটি খাতে চট্টগ্রামসহ দেশের ৩২৮ টি পৌরসভার অনুকূলে ১১১ কোটি ৬২ লাখ দুই হাজার ৭০০ টাকা ছাড় করেছে মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে চট্টগ্রামের ১৫ পৌরসভা পেয়েছে চার কোটি ৯৯ লাখ ১৪ হাজার টাকা। যে তিন খাতে অর্থ ছাড় করা হয় সেগুলো হচ্ছে- ডেঙ্গু মশক নিধন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও প্রচার উপ-খাত, উন্নয়ন সহায়তা খাত এবং অনুন্নয়ন খাত।
মশক নিধন ও পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম :
ডেঙ্গু মশক নিধন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও প্রচার উপ-খাতে দেশের পৌরসভাগুলোর জন্য ২০২০-২১ অর্থ বছরের বাজেটে ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ আছে। এরমধ্যে ১৫ শতাংশ অর্থাৎ সাড়ে ২৫ কোটি টাকা সরক্ষিত রেখে তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তি বাবদ ৩২২ টি পৌরসভার অনুকূলে ১০ কোটি ৩১ লাখ ৩৮ হাজার টাকা অবমুক্ত করা হয়। স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব ফারজানা মান্নান একই বিভাগের প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তাকে গত ৮ এপ্রিল ছাড়করণে সরকারি মঞ্জুরি জ্ঞাপনের চিঠি দেন।
মশক নিধন ও পরিচ্ছন্ন সামগ্রী ক্রয় খাতে চট্টগ্রামের ১৩ পৌরসভা পেয়েছে ৪৬ লাখ ৮১ হাজার টাকা। এর মধ্যে পটিয়া, বারইয়ারহাট, সীতাকুণ্ডু, সাতকানিয়া, বাঁশখালী, চন্দনাইশ, হাটহাজারী ও রাউজান পৌরসভা ৩ লাখ ৪৩ হাজার টাকা করে ২৭ লাখ ৪৪ হাজার টাকা পেয়েছে। মীরসরাই, রাঙ্গুনিয়া, সন্দ্বীপ, ফটিকছড়ি ও বোয়ালখালী পৌরসভা ২ লাখ ৮৮ হাজার টাকা করে ১৪ লাখ ৪২ হাজার টাকা পেয়েছে। নাজিরহাট ও দোহাজারী পৌরসভা দুই লাখ ৪৭ হাজার টাকা করে ৪ লাখ ৯৫ হাজার টাকা পেয়েছে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব ফারজান মান্নান জানান, ২০২০-২১ অর্থ বছরের উন্নয়ন বাজেটের মঞ্জুরি থেকে ব্যয় মিটানো হবে। সংশ্লিষ্ট পৌরসভার মেয়র অথবা প্রশাসক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অথবা সচিব যৌথভাবে মঞ্জুরিকৃত অর্থের আয়ন ও ব্যয়ন কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন। ডেঙ্গু মশক নিধন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও প্রচার সামগ্রী ব্যতিত অন্য কোনো কাজে অর্থ ব্যয় করা যাবে না। ছাড়কৃত অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে সর্বশেষ সংশোধনীসহ পিপিআর-২০০৮ অনুসরণসহ যাবতীয় আর্থিক বিধি-বিধান যথাযথভাবে প্রতিপালন করতে হবে।
উন্নয়ন সহায়তা : চলতি অর্থ বছরে উন্নয়ন সহায়তা খাতে পৌরসভাগুলোর জন্য বরাদ্দ আছে ৪৫০ কোটি টাকা। যার চতুর্থ কিস্তি বাবদ গত ৮ এপ্রিল অবমুক্ত করা হয় ৯৪ কোটি টাকা ৪৯ লাখ ৮৬ হাজার ৭০০ টাকা। এরমধ্যে চট্টগ্রামের ১৫ পৌরসভা পেয়েছে ৪ কোটি ২৭ লাখ টাকা।
এর মধ্যে পটিয়া, বারইয়ারহাট, সীতাকুণ্ডু, সাতকানিয়া, বাঁশখালী, চন্দনাইশ, হাটহাজারী, রাউজান ২৯ লাখ ৭৫ হাজার টাকা করে পেয়েছে মোট ২ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। মীরসরাই, রাঙ্গুনিয়া, সন্দ্বীপ, ফটিকছড়ি ও বোয়ালখালী পৌরসভা ২৭ লাখ ৩০ হাজার টাকা করে মোট ১ কোটি ৩৬ লাখ ৫ হাজার টাকা পেয়েছে। নাজিরহাট ও দোহাজারী পৌরসভা পেয়েছে ২৬ লাখ ২৭ হাজার টাকা করে মোট ৫২ লাখ ৫৪ হাজার টাকা।
অনুন্নয়ন বাজেট :
স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থ বছরে দেশের ৩২৮ পৌরসভার জন্য অনুন্নয়ন বাজেটের আওতায় পৌরসভার বেতন বাবদ সহায়তা খাতে ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ আছে। যার চতুর্থ কিস্তি বাবদ ছয় কোটি ২৪ লাখ ৯৮ হাজার টাকা ছাড় করা হয়। এর মধ্যে চট্টগ্রামের ১৫ পৌরসভা পেয়েছে ২৫ লাখ ৩৩ হাজার টাকা।
গত ১৩ এপ্রিল স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব ফারজানা মান্নান চিঠি দিয়েছেন প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তাকে। চিঠিতে বলা হয়, পৌরসভার কর্মচারীদের বেতন ব্যতিত অন্য কোনো কাজে ব্যয় করা যাবে না।
অনুন্নয়ন খাতে পটিয়া, বারইয়ারহাট, সীতাকুণ্ডু, সাতকানিয়া, বাঁশখালী, চন্দনাইশ, হাটহাজারী ও রাউজান পৌরসভা ২ লাখ ৪ হাজার টাকা করে ১৬ লাখ ৩২ হাজার টাকা পেয়েছে। মীরসরাই, রাঙ্গুনিয়া, সন্দ্বীপ, ফটিকছড়ি ও বোয়ালখালী পৌরসভা এক লাখ ৭৯ হাজার টাকা করে ৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকা পেয়েছে। নাজিরহাট ও দোহাজারী পৌরসভা এক লাখ ৫৩ হাজার টাকা করে ৩ লাখ ৬ হাজার টাকা পেয়েছে।
অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে ৮ পৌরসভাকে ‘ক’, ৫ পৌরসভাকে ‘খ’ এবং দুইটি পৌরসভাকে ‘গ’ তিন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে ক শ্রেণির পৌরসভা ২ কোটি ৮১ লাখ ৭৬ হাজার টাকা খ শ্রেণির পৌরসভা এক কোটি ৫৯ লাখ ৩৭ হাজার টাকা টাকা এবং গ শ্রেণির পৌরসভা ৬০ লাখ ৫৫ টাকা পেয়েছে।
চট্টগ্রামের ‘ক’ শ্রেণির পৌরসভাগুলো হচ্ছে- পটিয়া, বারইয়ারহাট, সীতাকুণ্ড, সাতকানিয়া, বাঁশখালী, চন্দনাইশ, হাটহাজারী, রাউজান। ‘খ’ শ্রেণির পৌরসভাগুলো হচ্ছে- মীরসরাই, রাঙ্গুনিয়া, সন্দ্বীপ, ফটিকছড়ি, বোয়ালখালী। ‘গ’ শ্রেণির পৌরসভা দুটি হচ্ছে নাজিরহাট ও দোহাজারী।
স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-সচিব ফারজানা মান্নান জানান, অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে জারিকৃত পৌরসভা উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন সংক্রান্ত নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই পৌরসভার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ব্যতীত অন্য কোনো কাজে ব্যয় করা যাবে না। বিএমডিএফ এর ঋণের কিস্তিও এ অর্থ দিয়ে পরিশোধ করা যাবে না। পৌর এলাকায় স্যানিটেশন সুবিধা শতভাগ নিশ্চিতকরণের উদ্দেশে বরাদ্দকৃত অর্থের ২০ শতাংশ স্যানিটেশন প্রকল্প/স্কীম বাস্তবায়নে ব্যয় করতে হবে।