রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটে যুক্তরাজ্যে চলতি সপ্তাহে পেট্রল ও ডিজেলের দাম রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় জীবনযাত্রার ব্যয়ও বৃদ্ধি পেয়েছে।
পেট্রল ও ডিজেলের দাম বাড়ার পাশাপাশি দেশটিতে বড় বড় খুচরা বিক্রেতারাও এ সুযোগে নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়েছে। ফলে জীবনযাত্রার বাড়তি ব্যয় সামাল দিলে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
এদিকে যুক্তরাজ্যের চলমান মূল্যস্ফীতি মধ্যেই জ্বালানির এ দাম বৃদ্ধি মোটরচালক ও অন্যান্য ব্যবসা বাণিজ্যের ওপর চাপ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারি) যুক্তরাজ্যে প্রতি লিটার পেট্রলের দাম ১৪৯ দশমিক ১ পাউন্ডে এবং ডিজেলে দাম ১৫২ দশমিক ৬ পাউন্ডে পৌঁছেছে। যার অর্থ, একটি ৫৫ লিটারের পারিবারিক ব্যবহারের গাড়ির জ্বালানি ট্যাংক ভর্তি করতে পেট্রলের জন্য ৮১ দশমিক ৯৫ পাউন্ড ব্যয় করতে হবে। একই পরিমাণ ট্যাংকে ডিজেলের জন্য প্রায় ৮৪ পাউন্ড ব্যয় করতে হয়।
জ্বালানির এ দাম বৃদ্ধির জন্য পেট্রলের খুচরা বিক্রেতাদের দায়ী করেছেন যুক্তরাজ্যের গাড়িচালকদের সংগঠন রয়্যাল অটোমোবাইল ক্লাব (র্যাক)। সংগঠনটির মুখপাত্র সাইমন উইলিয়ামস বলেন, জ্বালানির লাগামহীন ক্রমবর্ধমান দাম বাড়ার জন্য পেট্রলের খুচরা বিক্রেতারা দায়ী। তারা বেশি মুনাফার আশায় দাম বাড়িয়েছেন। জ্বালানির এ দাম বৃদ্ধির জীবনযাত্রার ব্যয়কে আরও বাড়িয়ে তুলছে।
রাশিয়া বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী দেশ। দেশটির ইউক্রেন আক্রমণের হুমকি জীবাশ্ম জ্বালানির দামে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে চলেছে, যা ইতোমধ্যে করোনভাইরাস মহামারি প্রভাব থেকে পুনরুদ্ধার করছে।
তবে র্যাক বড় বড় খুচরা বিক্রেতাদের অপ্রয়োজনীয়ভাবে মূল্যবৃদ্ধির জন্য অভিযুক্ত করেছে।
উইলিয়ামস বলেছেন, যদিও তেলের দাম এখনও ১০০ ডলার প্রতি ব্যারেলের কাছাকাছি তবে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের পাইকারি দামের তুলনায় যুক্তরাজ্যের খুচরা বাজারে অনেক বেশি দাম রাখা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ছোট খুচরা বিক্রেতারা ঘন ঘন জ্বালানি কেনেন না। ফলে দাম বাড়ায় তাদেরও বিক্রির জন্য উচ্চ পাইকারি দামে জ্বালানি কিনতে হচ্ছে। তবে বড় বড় খুচরা বিক্রেতা যারা সবসময় জ্বালানি কিনে মজুত রাখেন, তাদের দাম বাড়ানো উঠিত নয়। এই কঠিন সময়ে আমরা তাদের কাছে চালকদের সঙ্গে ন্যায্য আচরণ করার আহ্বান জানাই।
তিনি আরও জানান, রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে উত্তেজনা এখনো তেলের দামের ওপর প্রভাব ফেলছে। তবে আশার ঝলক দেখা যাচ্ছে যে নিষেধাজ্ঞার অবসান ঘটাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি সম্ভাব্য পারমাণবিক চুক্তির কারণে ইরান থেকে আরও তেল বাজারে আসতে পারে।
বর্ধিত জ্বালানির দাম জীবনযাত্রার সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে, যা উচ্চ জ্বালানির দাম এবং কর বৃদ্ধির দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে। দেশটিতে বর্তমানে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৫ শতাংশ, যা ৩০ বছরে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। চলতি বছরের এপ্রিলে তা বেড়ে ৮ শতাংশে পৌঁছানো সম্ভাবনা রয়েছে।