প্রকাশ্যে গুলি করে একের পর এক হত্যাকাণ্ডের পর চট্টগ্রামে আবারও উঠে এসেছে মোহাম্মদ রায়হানের নাম। নিহত ব্যক্তিদের পরিবার তাঁকে আসামি করায় মামলার তালিকাও লম্বা হচ্ছে। পুলিশ তাঁকে ধরতে হন্যে হয়ে ঘুরলেও থামেনি তাঁর অপরাধচক্র। সর্বশেষ শুক্রবার রাতে এক ব্যবসায়ীকে মোবাইলে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে।
হুমকি পাওয়া ব্যবসায়ীর নাম মো. একরাম, তিনি পাথরের ব্যবসা করেন। তিনি জানান, শুক্রবার রাত আটটার দিকে রায়হান তাঁকে ফোন দিয়ে বলেন, ‘তোকে গুলি করে মারব না, ব্লেড দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মারব।’ পরে হোয়াটসঅ্যাপে একই ধরনের বার্তাও পাঠানো হয়।
কেন এই হুমকি—জানতে চাইলে একরাম বলেন, গত ১৫ মার্চ ঢাকার একটি শপিং মলে ঘুরতে দেখে চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেন তিনি। এরপর সাজ্জাদের স্ত্রী তামান্না এবং বিদেশে থাকা বড় সাজ্জাদ তাঁকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন। আগের হুমকির ঘটনায় তিনি পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেছিলেন। নতুন হুমকির বিষয়ে তিনি আবার মামলা বা জিডি করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
একরামের স্ত্রী রুমা আক্তার বলেন, হুমকির খবর জানানো মাত্রই পুলিশ কমিশনার সোয়াত টিমসহ ফোর্স পাঠিয়েছেন। এখন তাঁদের বাড়ির সামনে সার্বক্ষণিক পাহারা রয়েছে। স্বামী ভয়ে বাসা থেকে বের হচ্ছেন না, বের হলে পুলিশ পাহারা দেবে বলেও জানানো হয়েছে।
ছোট সাজ্জাদকে ধরিয়ে দিতে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছিল। ১৫ মার্চ গ্রেপ্তারের পর তাঁর বাহিনীর দায়িত্ব নেন রায়হান। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, হত্যাচেষ্টার একটি মামলায় কারাগারে ছোট সাজ্জাদের সঙ্গে রায়হানের পরিচয় হয়। গত বছরের ৫ আগস্টের পর দুজন জামিনে বের হয়ে আবার সক্রিয় হয়ে ওঠেন। বর্তমানে সাজ্জাদ কারাগারে থাকার পর তাঁর অস্ত্রভাণ্ডারের নিয়ন্ত্রণ নেয় রায়হান।
পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোলাইমান বলেন, আগের হুমকির মামলায় তদন্ত চলছে এবং নতুন অভিযোগের বিষয়েও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (গণমাধ্যম) আমিনুর রশিদ জানান, নগর ও জেলার বেশ কয়েকটি হত্যা মামলায় রায়হানের নাম এসেছে। তাঁকে ধরতে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে।
এর আগেও রায়হানের বিরুদ্ধে হুমকি ও খুনের অভিযোগ রয়েছে।
৫ নভেম্বর চট্টগ্রামে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীর সঙ্গে নির্বাচনী জনসংযোগে থাকা সরোয়ার হোসেন বাবলাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এর তিন দিন আগে রায়হান ফোনে তাঁকে হুমকি দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ।
২৫ অক্টোবর রাউজানের চারাবটতলে যুবদল কর্মী আলমগীর আলমকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এই মামলারও আসামি রায়হান। আলমগীর জীবিত অবস্থায় এক ভিডিওতে রায়হানের নাম উল্লেখ করে নিজের আশঙ্কার কথা বলেছিলেন।
২৫ জুলাই কালুরঘাট এলাকার এক ওষুধ ব্যবসায়ীকে ফোনে প্রাণনাশের হুমকি দেন রায়হান।
১ আগস্ট চান্দগাঁওয়ের মোহরা এলাকায় চাঁদা না পেয়ে এক বালু ব্যবসায়ীকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত ৫ আগস্টের পর শুধু চট্টগ্রাম নগর ও জেলায় রায়হানের বিরুদ্ধে জোড়া খুনসহ অন্তত ১৫টি মামলা হয়েছে, যার সাতটি হত্যা মামলা।







