ট্রাম্প বলেন, ‘আমি শুধু আমেরিকান জনগণকে বলতে চাই—যখন আমরা মধ্যবর্তী নির্বাচনের মুখোমুখি হব, তখন যেন আপনারা এটি ভুলে না যান।’
বক্তব্য দেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি অর্থায়ন বিল স্বাক্ষর করেছেন, যার মাধ্যমে মার্কিন সরকারি কার্যক্রম পুনরায় শুরু হয়েছে এবং দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদি শাটডাউন বা সরকারি অচলাবস্থার অবসান ঘটেছে। খবর বিবিসির।
এই বিলের মাধ্যমে সরকারি কর্মচারীরা কাজে ফিরবেন, ফেডারেল সংস্থা, কর্মসূচি ও বিভাগগুলোর জন্য অর্থ বরাদ্দ পুনরায় চালু হবে এবং যারা ১ অক্টোবর থেকে বেতন পাচ্ছিলেন না—তেমন কয়েকশো হাজার কর্মী তাদের বকেয়া বেতন পেয়ে যাবেন।
এই অচলাবস্থা টানা ৪৩ দিন স্থায়ী হয়েছিল, যা আগের রেকর্ড ৩৫ দিনের চেয়েও বেশি—সে রেকর্ডটিও ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে হয়েছিল।
সরকার অচলাবস্থা (শাটডাউন) নিয়ে ডেমোক্র্যাটদের সমালোচনা করতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভোটারদের আহ্বান জানিয়েছেন, যেন তারা ২০২৬ সালের নভেম্বরের মধ্যবর্তী নির্বাচনে (মিডটার্ম ইলেকশন) কংগ্রেস সদস্যদের ভোট দেওয়ার সময় এই ঘটনাটি মনে রাখেন।
যদিও সেই নির্বাচন হতে এখনো এক বছর বাকি, ট্রাম্প রিপাবলিকানদের উৎসাহ দিচ্ছেন যেন তারা কড়া প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পারে।
তিনি বলেন, ‘আমি শুধু আমেরিকান জনগণকে বলতে চাই—যখন আমরা মধ্যবর্তী নির্বাচনের মুখোমুখি হব, তখন যেন আপনারা এটি ভুলে না যান।’
ডেমোক্র্যাটদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, তারা ‘লাখ লাখ আমেরিকানের দুর্ভোগে খুশি ছিল।’
ট্রাম্প বলেন, সরকারি অচলাবস্থার (শাটডাউন) কারণে ‘মানুষ ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
অর্থায়নের স্থবিরতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এ রকম কিছু আগে কখনও দেখা যায়নি।’
তিনি জানান, শাটডাউনের কারণে ২০ হাজারেরও বেশি ফ্লাইট বিলম্বিত বা বাতিল হয়েছে, খাদ্য সহায়তা বন্ধ হয়ে গেছে এবং বহু ফেডারেল কর্মচারী বাধ্যতামূলক ছুটিতে গেছেন বা বেতন পাননি।
১ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকার অচলাবস্থা (শাটডাউন) শুরু হয়, কারণ রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটরা ওই তারিখের পর সরকারি সেবা চালু রাখতে অর্থায়ন বিল পাসে একমত হতে পারেননি। ওই দিনই আগের ফেডারেল বাজেটের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের স্বাক্ষরের আগে কংগ্রেসকে ব্যয় পরিকল্পনা (স্পেন্ডিং প্ল্যান) অনুমোদন করতে হয়।
রিপাবলিকানরা কংগ্রেসের উভয় কক্ষেরই নিয়ন্ত্রণে থাকলেও সিনেটে তারা ব্যয় বিল পাসের জন্য প্রয়োজনীয় ৬০ ভোট পায়নি। এর ফলে ডেমোক্র্যাটদের কিছুটা প্রভাব বলয় তৈরি হয়, যা তারা নিজেদের অগ্রাধিকার—বিশেষ করে স্বাস্থ্যসেবা খাতে অর্থায়ন—বাড়ানোর প্রচেষ্টায় ব্যবহার করেন।
ডেমোক্র্যাটরা চেয়েছিলেন, ট্রাম্প এ বছর মেডিকেড কর্মসূচিতে যে কাটছাঁট করেছিলেন তা প্রত্যাহার করতে। মেডিকেড হলো সরকারের একটি স্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচি, যা লাখ লাখ প্রবীণ, প্রতিবন্ধী ও স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য ব্যবহৃত হয়।
তারা আরও চেয়েছিলেন ‘আফোর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্ট’-এর আওতায় দেওয়া ভর্তুকি (সাবসিডি) বাড়াতে, যাতে লাখো আমেরিকান তাদের মাসিক স্বাস্থ্যসেবার খরচ কমাতে পারেন।
অন্যদিকে রিপাবলিকানদের অবস্থান ছিল—স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে বিতর্ক থাকার পরেও এটি করা যেতে পারে, তবে আপাতত একটি অস্থায়ী ব্যয় পরিকল্পনা পাস করা জরুরি, যাতে শাটডাউন এড়ানো যায় এবং স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে আলোচনার সময় সরকারী কর্মসূচিগুলো চালু থাকে।
শেষ পর্যন্ত কয়েকজন ডেমোক্র্যাট সিনেটর ও রিপাবলিকানদের মধ্যে যে সমঝোতা হয়, তাতে ডিসেম্বর মাসে মেয়াদোত্তীর্ণ হতে যাওয়া স্বাস্থ্যসেবা ভর্তুকি বাড়ানোর বিষয়ে ভোট আয়োজনের চুক্তি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
প্রদা/ডিও






