মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি বক্তৃতা সম্পাদনার ধরনসহ ব্রিটিশ সম্প্রচারমাধ্যম বিবিসির বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ ওঠার পর রোববার সংস্থাটির মহাপরিচালক টিম ডেভি ও বার্তাপ্রধান ডেবোরাহ টার্নেস পদত্যাগ করেছেন।
বিবিসির সাবেক একজন মানবিষয়ক উপদেষ্টার একটি অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদন ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকায় ফাঁস হওয়ার পর সংস্থাটির ওপর চাপ বাড়ছিল। ওই প্রতিবেদনে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ, ট্রান্সজেন্ডার ইস্যু ও ট্রাম্পের একটি বক্তৃতার সংবাদ বিক্রীতভাবে পরিবেশনের কথা উল্লেখ করা হয়েছিল।
ট্রাম্প এই পদত্যাগকে স্বাগত জানিয়েছেন ওই দুজনকে ‘খুবই অসৎ মানুষ’ বলে সমালোচনা করেছেন। বিবিসির অনুষ্ঠান ‘প্যানোরামা’তে ট্রাম্পের একটি বক্তৃতার দুটি ভিন্ন অংশকে এমনভাবে সম্পাদনা করে জুড়ে দেওয়া হয়েছিল, যাতে মনে হচ্ছিল তিনি ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ক্যাপিটল হিলের দাঙ্গায় উসকানি দিচ্ছেন।
২০২০ সাল থেকে ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনের (বিবিসি) নেতৃত্ব দিয়ে আসা টিম ডেভি সংস্থাটির পক্ষে বলেন, বিশ্বজুড়ে বিবিসির সাংবাদিকতাকে ‘গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড’ হিসেবে দেখা হয়। তবে তিনি স্বীকার করেন, কিছু ভুল হয়েছে এবং এর চূড়ান্ত দায়ভার তাকেই নিতে হবে।
বিবিসি নিউজের সিইও ডেবোরা টারনেসও পদত্যাগ করেছেন। কর্মীদের কাছে পাঠানো এক ইমেইলে তিনি বলেন: ‘আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, বিবিসি নিউজ প্রাতিষ্ঠানিকভাবে পক্ষপাতদুষ্ট বলে সম্প্রতি যেসব অভিযোগ তোলা হয়েছে, সেগুলো ভুল।’
বিশ্বজুড়ে সমাদৃত হওয়ার পাশাপাশি যুক্তরাজ্যেও সবচেয়ে বিশ্বস্ত সংবাদমাধ্যম হিসেবে জরিপগুলোতে এখনও বিবিসির নাম শীর্ষে থাকে। দেশে সংবাদ, বিনোদন ও খেলাধুলার ক্ষেত্রে সংস্থাটির ব্যাপক প্রভাব রয়েছে।
কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি কিছু জাতীয় সংবাদপত্র ও সোশ্যাল মিডিয়ার সমালোচকদের কড়া নজরদারিতে থাকে। এই সমালোচকরা সংস্থাটির অর্থায়ন পদ্ধতি ও এর ‘উদারপন্থি’ হিসেবে বিবেচিত অবস্থানের বিরোধিতা করেন।
গত কয়েক বছরে রাজনৈতিক বিভাজনের উভয় পক্ষের সমালোচকরাই বিবিসির বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশনের অঙ্গীকার রক্ষায় ব্যর্থতার অভিযোগ তুলেছেন।
ফাঁস হওয়া অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিবিসি অ্যারাবিক গাজায় যুদ্ধের সংবাদ পরিবেশনে ইসরায়েল-বিরোধী পক্ষপাত দেখিয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিবিসি একাধিক কেলেঙ্কারিতে জড়িয়েছে। এমনই এক ঘটনায় সংস্থাটির সাবেক সর্বোচ্চ বেতনভোগী ক্রীড়া উপস্থাপক গ্যারি লিনেকারকে সরকারের অভিবাসন নীতির সমালোচনা করার জন্য বরখাস্ত করা হয়েছিল।
গ্লাস্টনবারির আসরে পাঙ্ক-র্যাপ জুটি বব ভায়লান-এর ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে স্লোগান দেখানোর জন্যও বিবিসি পশ্চিমা দুনিয়ায় সমালোচিত হয়েছিল।
গত বছর প্রচারিত সেই ‘প্যানোরামা’ ডকুমেন্টারিতে দেখা যায়, ট্রাম্প তার সমর্থকদের বলছেন, ‘আমরা ক্যাপিটলের দিকে হেঁটে যাব’ এবং ‘প্রচণ্ড লড়াই করব’। কিন্তু শেষের মন্তব্যটি তিনি তার বক্তৃতার অন্য একটি অংশে করেছিলেন।
ট্রাম্প আসলে বলেছিলেন, তার সমর্থকরা ‘আমাদের সাহসী সিনেটর এবং কংগ্রেসম্যান ও কংগ্রেসউইমেনদের উৎসাহিত করবে’।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ‘প্যানোরামা’ তথ্যচিত্রে ট্রাম্পের বক্তব্যের দুটি অংশ এমনভাবে জোড়া লাগানো হয়েছিল, যাতে মনে হয় তিনি ২০২১ সালে ক্যাপিটল হিলে হামলায় সমর্থককে উৎসাহিত করেছেন। সম্পাদনার পর ট্রাম্পের বক্তব্য দাঁড়ায়: ‘আমরা ক্যাপিটলের দিকে যাচ্ছি এবং আমি সেখানে আপনাদের সঙ্গে থাকব এবং আমরা প্রচণ্ড করব।’ ট্রাম্পের ভাষণে এসব কথা থাকলেও সেগুলোর মধ্যে আরও অনেক কথা ছিল।
ট্রাম্প রোববার এক সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে অভিযোগ আনেন, ওই দুই নির্বাহী মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রভাব খাটানোর চেষ্টার করেছিলেন।
এদিকে পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত একজন ব্যক্তি বলেছেন, ডেভির পদত্যাগের সিদ্ধান্তে বিবিসির বোর্ড ‘হতবাক’ হয়ে গেছে। নতুন মহাপরিচালক খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত তিনি আগামী কয়েক মাস দায়িত্বে থাকবেন।
বিবিসিকে ২০২৭ সালে সরকারের সঙ্গে নতুন ‘চার্টার’ বা সনদ নিয়ে আলোচনা করতে হবে, যা সংস্থাটির অর্থায়নের নিশ্চয়তা দেবে। সাম্প্রতিক এই নেতিবাচক খবরের স্রোত সামাল দিতে সংস্থাটিকে হিমশিম খেতে দেখা গেছে।
প্রদা/ডিও







