রাশিয়া, মরক্কো ও সৌদি আরব থেকে এক লাখ পাঁচ হাজার মেট্রিক টন সার কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এতে ব্যয় হবে ৬৬৪ কোটি ৪০ লাখ ৯৮ হাজার ৪৪০ টাকা। এর মধ্যে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া, ৪০ হাজার টন ডিএপি এবং ৩৫ হাজার টন এমওপি সার কেনার কথা রয়েছে।
বুধবার (২২ অক্টোবর) সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে এ সার আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বরগুনায় ১০ হাজার মেট্রিক টন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন একটি বাফার গোডাউন নির্মাণকাজের ক্রয় প্রস্তাবও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কমিটির সভাপতি অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বৈঠকে ভার্চুয়ালি অংশ নেন।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য সৌদি আরবের সাবিক অ্যাগ্রি-নিউট্রিয়েন্টস কোম্পানি থেকে ৩০ হাজার টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।
জানা গেছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সাবিক অ্যাগ্রি-নিউট্রিয়েন্টস থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টনের ১১টি লটে ৩ লাখ ৩০ হাজার টন এবং আপদকালীন ও জরুরি পরিস্থিতি এবং দেশীয় কারখানায় সারের ঘাটতি মোকাবিলায় আরও ৩ লাখ টনসহ মোট ৬ লাখ ৩০ হাজার টন ইউরিয়া সার আমদানির চুক্তি করা হয়।
সাবিক অ্যাগ্রি-নিউট্রিয়েন্টস কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি মোতাবেক সারের মূল্য নির্ধারণ করে প্রতি টন ৪১৩.৩৩ ডলার হিসেবে ৩০ হাজার টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার ১ কোটি ২৩ লাখ ৯৯ হাজার ৯০০ ডলারে আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ১৫১ কোটি ৭৭ লাখ ৪৭ হাজার ৭৬০ টাকা।
বৈঠকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে মরক্কোর ওসিপি নিউট্রিক্রপস এবং বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির আওতায় ৪০ হাজার মেট্রিক টন ডিএপি সার আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।
জানা গেছে, বিএডিসি কর্তৃক মরক্কো থেকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নবায়িত চুক্তির মাধ্যমে ডিএপি সার আমদানির প্রস্তাব সিসিইএ সভায় নীতিগতভাবে অনুমোদিত হয়। আগের চুক্তির কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ায় গত ২ জুলাই পুনরায় চুক্তি নবায়ন করা হয়।
সার আমদানি চুক্তিতে উল্লিখিত মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি অনুসারে সারের মূল্য নির্ধারণ করে ওসিপি নিউট্রিক্রপস থেকে ৪০ হাজার টন ডিএপি সার বর্তমান আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যে ২ কোটি ৯৪ লাখ ১৩ হাজার ২০০ মার্কিন ডলারে কেনা হবে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৩৬০ কোটি ১ লাখ ৭৫ হাজার ৬৮০ টাকা।
বৈঠকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের আরেক প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে রাশিয়ার জেএসসি ফরেন ইকনোমিক করপোরেশন থেকে ৩৫ হাজার মেট্রিক টন এমওপি সার আমদানির অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।
জানা গেছে, বিএডিসি কর্তৃক রাশিয়া থেকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির মাধ্যমে এমওপি সার আমদানির প্রস্তাব সিসিইএ সভায় নীতিগতভাবে অনুমোদিত হয়। আগের সম্পাদিত চুক্তির কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ায় বিদ্যমান চুক্তির শর্তগুলো অভিন্ন রেখে গত ২৪ জুলাই পুনরায় চুক্তি নবায়ন করা হয়।
সার আমদানি চুক্তিতে উল্লিখিত মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি অনুসারে সারের মূল্য নির্ধারণ করে জেএসসি ফরেন ইকনোমিক করপোরেশন থেকে ৩৫ হাজার টন এমওপি সার বর্তমান আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যে মোট ১ কোটি ২৪ লাখ ৬৮ হাজার ৭৫০ মার্কিন ডলারে আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ১৫২ কোটি ৬১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।
এছাড়া বৈঠকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ‘সার সংরক্ষণ ও বিতরণের সুবিধার্থে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ৩৪টি বাফার গুদাম নির্মাণ (প্রথম সংশোধিত)’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় বরগুনা জেলায় একটি বাজার গুদাম নির্মাণের পূর্ত কাজের অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।
এ প্রকল্পের আওতায় বরগুনায় একটি বাফার গুদাম নির্মাণের পূর্ত কাজ ক্রয়ের জন্য উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে চারটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে দরপ্রস্তাব জমা পড়ে।
তার মধ্যে মাত্র একটি প্রস্তাব আর্থিক ও কারিগরিভাবে রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসির সুপারিশে একমাত্র রেসপনসিভ দরদাতা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে এমবিএল ও আরএফএল-এর কাছ থেকে ৫১ কোটি ৭৩ লাখ ৯৪ হাজার ২৯৫ টাকায় প্রকল্পের আওতায় একটি বাফার গুদাম নির্মাণের পূর্ত কাজের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
প্রদা/ডিও