নিয়মিত অভিযান, জরিমানা ও সতর্কতা—সবই চলছে নিয়মমাফিক। তবুও চট্টগ্রামের অধিকাংশ হোটেল-রেস্তোরাঁয় অস্বাস্থ্যকর খাবার পরিবেশন, নোংরা পরিবেশ ও অনিয়ম যেন থামছেই না।
জেলা প্রশাসন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নিয়মিত তদারকি কার্যক্রম চালালেও প্রতিবারই মিলছে নানা অনিয়ম ও স্বাস্থ্যঝুঁকিপূর্ণ খাবারের প্রমাণ। এসব কারণে প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেওয়া হচ্ছে সতর্কতা ও মোটা অঙ্কের জরিমানা।
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের মহানগর অফিস সেপ্টেম্বরে পরিচালনা করেছে ৪০টি অভিযান, আর জেলা অফিস করেছে ২৫টি। বেশিরভাগ অভিযান হোটেল-রেস্তোরাঁয় পরিচালিত হয়। এসব অভিযানে একাধিক প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে এবং তিনটির বিরুদ্ধে বিশুদ্ধ খাদ্য আদালতে মামলা করা হয়েছে।
সংস্থাটি খাদ্যকর্মীদের নিয়ে কর্মশালা, উঠান বৈঠক ও সচেতনতা কর্মসূচিও পরিচালনা করেছে।
অন্যদিকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরও ব্যাপক অভিযান চালিয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জেলা কার্যালয় ২০২টি অভিযান পরিচালনা করে ২৭৬টি প্রতিষ্ঠানকে ৪৬ লাখ ৯৪ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করেছে।
শুধু জুলাই ও আগস্ট মাসে ৫৯টি অভিযানে ১৫ লাখ ৭৪ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়। বিভাগীয় কার্যালয় ১৪ মাসে ৬২৮টি অভিযান চালিয়ে ৬৮৬টি প্রতিষ্ঠানকে ১ কোটি ৭৭ লাখ ৫০০ টাকা জরিমানা করে।
খাবারে কেওড়া জল ও গোলাপজল
চট্টগ্রামের জনপ্রিয় রেস্তোরাঁগুলোতেও অনিয়ম ধরা পড়ছে। সাম্প্রতিক অভিযানে চারটি রেস্তোরাঁয় খাবারে গোলাপজল ও কেওড়া জলের ব্যবহার পাওয়া গেছে।
২৩ সেপ্টেম্বর জিইসি মোড়ের ‘কাচ্চি ডাইন’ রেস্তোরাঁকে ৭০ হাজার টাকা, ১৮ সেপ্টেম্বর ‘হান্ডি’ ও ‘ধাবা’ রেস্তোরাঁকে আড়াই লাখ টাকা, আর ২০ অক্টোবর বহদ্দারহাটের ‘বিসমিল্লাহ ওরশ বিরিয়ানি’ ও ‘মেজ্জান’ রেস্তোরাঁকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
কর্তৃপক্ষ ও মালিকদের অবস্থান
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্যাহ বলেন, “আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। অনেক প্রতিষ্ঠানকে একাধিকবার সতর্ক করার পরও অনিয়ম বন্ধ হয়নি। ভোক্তার অভিযোগের ভিত্তিতেই আমাদের অভিযান হয়, আর এসব অভিযোগের বড় অংশ হোটেল-রেস্তোরাঁ খাত থেকে আসে।”
অন্যদিকে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি ইমতিয়াজ উদ্দিন নওশাদ বলেন, “ভুলত্রুটি থাকলে জরিমানা হতেই পারে, তবে অনেক সময় কিছু বিষয় ভুলভাবে উপস্থাপন হওয়ায় ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এতে অনেক প্রতিষ্ঠান টিকে থাকতে পারছে না।”
অভিযান, জরিমানা ও সচেতনতা—সবকিছু থাকা সত্ত্বেও চট্টগ্রামের হোটেল-রেস্তোরাঁ খাতে অস্বাস্থ্যকর খাবার ও অনিয়মের সংস্কৃতি এখনও রয়ে গেছে। প্রশ্ন রয়ে যায়—এত অভিযানেও কেন পরিবর্তন আসছে না?
প্রদা/ডিও