দেশের অর্থনীতির হৃদপিন্ড খ্যাত চট্টগ্রাম বন্দর। এ বন্দরকে ঘিরে কনটেইনার পরিবাহিত পণ্যের আমদানি-রপ্তানি হয়। এতে বেসরকারি খাতের ১৯ ডিপোতে বাড়ছে ব্যবসা। এসব ডিপোতে সেবার মাশুল বাড়ানোর কারণে আগের চেয়ে বাড়ছে আয়। গত ৯ মাসের ব্যবসা পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বেসরকারি ডিপোগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কনটেইনার ম্যানেজমেন্ট করেছে কেডিএস লজিস্টিকস।
বেসরকারি ডিপোতে ব্যবসা করা ১৯ ডিপোর মধ্যে শুধু কেডিএস লজিস্টিকস ১৫ শতাংশ কনটেইনার ম্যানেজমেন্ট করেছে।
জানা যায়, রপ্তানিমুখী পণ্য উৎপাদনকারী কারখানা থেকে রপ্তানি পণ্য এসব ডিপোতে এনে কনটেইনারে বোঝাই করা হয়। এরপর শুল্কায়ন শেষে ডিপো থেকে জাহাজীকরণের জন্য বন্দরে পাঠানো হয়। এ ধরনের প্রায় ৯০ শতাংশ কনটেইনার বেসরকারি ডিপোগুলোতে ম্যানেজমেন্ট হয়। একইভাবে ৬৫ ধরনের আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনার জাহাজ থেকে বন্দরের মাধ্যমে ডিপোতে নেওয়া হয়। এরপর আমদানিকারকরা ডিপো থেকে তাদের পণ্য খালাস নেন। এভাবে আমদানি-রপ্তানি কনটেইনার ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে সেবার বিপরীতে মাশুল হিসেবে আয় করে থাকে ডিপোগুলো। আবার খালি কনটেইনার রাখার জন্যও নির্ধারিত ভাড়া পায় ডিপোগুলো।
গত ১ সেপ্টেম্বর বেসরকারি ডিপো মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশন (বিকডা) রপ্তানি খাতের সাত ধরনের সেবায় সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ পর্যন্ত মাশুল বাড়িয়েছে। পাশাপাশি খালি কনটেইনারের ভাড়াও বাড়ানো হয়েছে।
বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশন (বিকডা) সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রথম ৯ মাসে বেসরকারি ১৯টি ডিপো ৮ লাখ ৩০ হাজার একক কনটেইনার ব্যবস্থাপনা করেছে। গত বছরের একই সময়ে যে সংখ্যা ছিল ৭ লাখ ৮ হাজার একক কনটেইনার। সেই হিসাবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বেসরকারি ডিপোতে ১ লাখ ২২ হাজার কনটেইনার বেশি ম্যানেজমেন্ট হয়েছে।
বিকডার তথ্য মতে, চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে বেসরকারি ডিপোগুলোর মধ্যে কনটেইনার ব্যবস্থাপনায় সবচেয়ে বেশি ব্যবসা করেছে সীতাকুণ্ডে অবস্থিত কেডিএস গ্রুপের কেডিএস লজিস্টিকস। কেডিএস গ্রুপ রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পে চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় গ্রুপ। তাদেরই অঙ্গ-প্রতিষ্ঠান কেডিএস লজিস্টিকস গত ৯ মাসে আমদানি–রপ্তানি মিলিয়ে ১ লাখ ২৬ হাজার কনটেইনার ব্যবস্থাপনা করেছে। ১৯ ডিপোতে ম্যানেজমেন্ট হওয়া মোট কনটেইনারের মধ্যে ১৫ দশমিক ১৮ শতাংশ হয়েছে কেডিএস লজিস্টিকসে।
একই সময়ে ১ লাখ ১৬ হাজার কনটেইনার ব্যবস্থাপনা করেছে পরের অবস্থানে রয়েছে পোর্টলিংক লজিস্টিকস সেন্টার। এ ডিপোটি সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারীতে অবস্থিত অবস্থিত। বিকডার ডিপোগুলোর মধ্যে মোট কনটেইনারের ১৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ ম্যানেজমেন্টে করেছে ডিপোটি। ৯২ হাজার ৬৭০ একক কনটেইনার ব্যবস্থাপনা করে তৃতীয় অবস্থানে ছিল সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট লিমিটেড। নগরীর কাটঘর এলাকার ডিপোটিতে মোট কনটেইনারের মধ্যে ১১ দশমিক ১৭ শতাংশ ম্যানেজমেন্ট হয়েছে।
চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে ইস্পাহানি-সামিট অ্যালায়েন্স টার্মিনাল। ডিপোটি প্রথম ৯ মাসে ৮০ হাজার ১২৯ কনটেইনার ব্যবস্থাপনা করেছে। যা মোট কনটেইনারের ৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ। নগরীর একে খান এলাকায় ডিপোটির অবস্থান। পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে নগরীর এয়ারপোর্ট রোডে কর্ণফুলী নদীর তীরে অবস্থিত ইনকনট্রেড। ডিপোটিতে ৭৮ হাজার কনটেইনার ম্যানেজমেন্ট হয়েছে। যা মোট কনটেইনারের ৯ দশমিক ৪০ শতাংশ।
বিকডার তথ্য অনুযায়ী, ১৯৮৫ সালে দেশে প্রথম বেসরকারি ডিপো ‘সি ফেয়ারাস লিমিটেড’ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮৮ সালে যুক্ত হয় ওশান কনটেইনার। ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত মূলত খালি কনটেইনার ব্যবস্থাপনা করত ডিপোগুলো। ১৯৯৯ সাল থেকে তাদের প্রথমবারের মতো রপ্তানি কনটেইনার ব্যবস্থাপনার অনুমতি দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ২০০৭ সাল থেকে রপ্তানির পাশাপাশি নির্ধারিত আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনার বন্দরের পরিবর্তে ডিপোতে নিয়ে খালাসের অনুমতি দেওয়া হয়।
প্রদা/ডিও