চীনা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সর্বশেষ হুমকিকে ‘যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিচারিতার একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ’ বলে অভিহিত করেছে চীন সরকার।
চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র আরও বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট যদি তার হুমকি বাস্তবায়ন করেন, তবে চীনও অনির্দিষ্ট ‘পাল্টা ব্যবস্থা’ নিতে পারে। তিনি আরও বলেন, সম্ভাব্য বাণিজ্য যুদ্ধ নিয়ে বেইজিং ‘ভীত নয়’।
বেইজিংয়ের পদক্ষেপের বিরল মৃত্তিকা খনিজ রপ্তানির নিয়ম কঠোর করার প্রতিক্রিয়ায় শুক্রবার ট্রাম্প পাল্টা আঘাত হানেন। চীনের বিরুদ্ধে ‘ভীষণ বৈরী’ হয়ে ওঠার এবং বিশ্বকে ‘জিম্মি’ করার চেষ্টার অভিযোগ তোলেন তিনি।
চলতি মাসের শেষের দিকে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে নির্ধারিত একটি বৈঠক থেকেও সরে আসার হুমকি দেন ট্রাম্প।
তবে রোববার মার্কিন প্রেসিডেন্ট লেখেন: ‘চীনকে নিয়ে চিন্তা করবেন না, সব ঠিক হয়ে যাবে!’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে তিনি আরও বলেন, ‘অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় প্রেসিডেন্ট শি সবে একটা খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে গেছেন। তিনি তার দেশের জন্য মহামন্দা চান না, আমিও চাই না। যুক্তরাষ্ট্র চীনকে সাহায্য করতে চায়, ক্ষতি করতে নয়!!!’ তবে এ বিষয়ে তিনি আর বিস্তারিত কিছু বলেননি।
ট্রাম্পের শুক্রবারের মন্তব্যে আর্থিক বাজারগুলোতে তীব্র ধাক্কা লাগে। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ শেয়ার সূচক ২.৭ শতাংশ কমে দিন শেষ করে, যা এপ্রিলের পর থেকে সবচেয়ে বড় পতন।
সোমবার চীনের শেনজেন কম্পোনেন্ট ইনডেক্সে ২.৫ শতাংশের বেশি পতন হয়।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের কথায় যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধের আশঙ্কা নতুন করে জোরালো হয়েছে।
গত মে মাসে উভয় পক্ষ একে অপরের পণ্যের ওপর শতভাগেরও বেশি শুল্ক প্রত্যাহারে সম্মত হয়েছিল। এ শুল্কে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি করেছিল।
এর ফলে বছরের শুরুর তুলনায় চীনা পণ্যের ওপর মার্কিন শুল্ক ৩০ শতাংশ বাড়ে এবং চীনে প্রবেশকারী মার্কিন পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ হয়।
চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সাংবাদিকদের প্রশ্নের লিখিত জবাবে যে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে, তার ভাষা সাম্প্রতিক বাণিজ্য সংঘাতের চরম মুহূর্তের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
তারা চিপ ও সেমিকন্ডাক্টরের ওপর মার্কিন রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার সমালোচনা করেছে। একইসাথে নিজেদের বিরল মৃত্তিকা রপ্তানি নিয়ন্ত্রণকে জাতীয় ও সব দেশের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য ‘স্বাভাবিক পদক্ষেপ’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।
মুখপাত্র বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে’ যুক্তরাষ্ট্র ‘জাতীয় নিরাপত্তার ধারণাকে অতিরঞ্জিত করেছে, রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার অপব্যবহার করেছে’ এবং ‘চীনের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে’।
তিনি আরও বলেন, ‘শুল্কের হুমকি দিয়ে চীনের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পথ সঠিক নয়। বাণিজ্য যুদ্ধ নিয়ে চীনের অবস্থান বরাবরই স্পষ্ট: আমরা যুদ্ধ চাই না, তবে আমরা যুদ্ধে ভয়ও পাই না।’
গত সপ্তাহে চীন বিরল মৃত্তিকা ও উন্নত প্রযুক্তি তৈরির জন্য গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য উপকরণের ওপর রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ কঠোর করার ঘোষণা দেয়।
একে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে, কারণ বিশ্বে ব্যবহৃত বিরল মৃত্তিকার প্রায় ৯০ শতাংশ প্রক্রিয়াজাত করে চীন, যা সোলার প্যানেল ও স্মার্টফোনের মতো পণ্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের সাম্প্রতিক মন্তব্যগুলোকে অনেকে ভবিষ্যৎ বাণিজ্য আলোচনার আগে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করার কৌশল হিসেবে দেখছেন।
চলতি মাসের শেষের দিকে দক্ষিণ কোরিয়ায় একটি শীর্ষ সম্মেলনে ট্রাম্প ও শি-র মধ্যে প্রত্যাশিত বৈঠকটি আদৌ হবে কিনা, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
প্রদা/ডিও