ইরানের জ্বালানি রপ্তানি নেটওয়ার্কে সহায়তার অভিযোগে ৫০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি ও জাহাজের বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে ইরানের পেট্রোলিয়াম ও তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) রপ্তানিতে জড়িত এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কাতেও চালান পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে মার্কিন অর্থ বিভাগীয় সংস্থা অফিস অব ফরেন অ্যাসেটস কন্ট্রোল (ওএফএসি)।
বৃহস্পতিবার ঘোষিত বিবৃতিতে ওএফএসি জানিয়েছে, এই পদক্ষেপ ইরানের অর্থনৈতিক প্রবাহ কমানো ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর অর্থায়ন বন্ধের বৃহত্তর কৌশলের অংশ।
ওএফএসি জানায়, সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক স্লোগাল এনার্জি ডিএমসিসি এবং মারকান হোয়াইট ট্রেডিং ক্রুড অয়েল অ্যাবরোড কোম্পানি এলএলসি দক্ষিণ এশিয়ায় ইরানি এলপিজি সরবরাহে জড়িত ছিল। ২০২৫ সালের শুরুর দিকে পানামা পতাকাবাহী জাহাজ গ্যাস ডিওর বাংলাদেশে ১৭ হাজার টনেরও বেশি ইরানি এলপিজি সরবরাহ করে, যা এখন নিষেধাজ্ঞার আওতায় এসেছে।
এ ছাড়া কোমোরোস পতাকাবাহী জাহাজ আদা (আইএমও ৯০০৮১০৮) — পূর্বে ‘ক্যাপ্টেন নিকোলাস’ নামে পরিচিত — ২০২৪ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশে ইরানি এলপিজি সরবরাহ করে। জাহাজটি বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর করা অবস্থায় রয়েছে এবং মার্কিন তালিকায় ‘অবরুদ্ধ সম্পদ’ হিসেবে যুক্ত হয়েছে।
যদিও কোনো বাংলাদেশি কোম্পানির নাম নিষেধাজ্ঞায় উল্লেখ নেই, তবে চালান বাংলাদেশে পৌঁছানোর বিষয়টি ওয়াশিংটনের নজরদারিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। মার্কিন আইনে বলা হয়েছে, নিষিদ্ধ লেনদেনে জড়িত বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো সেকেন্ডারি স্যাংশন-এর মুখে পড়তে পারে, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক ব্যবস্থায় প্রবেশাধিকার হারানোর ঝুঁকিও রয়েছে।
এটি চলতি বছরে ইরানের তেল ক্রেতা ও মধ্যস্বত্বভোগীদের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চতুর্থ দফা নিষেধাজ্ঞা। এর আগে চীনভিত্তিক বেশ কিছু রিফাইনারির বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
সর্বশেষ নিষেধাজ্ঞায় চীনের শানডং জিনচেং পেট্রোকেমিক্যাল গ্রুপ ও রিজাও শিহুয়া ক্রুড অয়েল টার্মিনালকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, এই প্রতিষ্ঠানগুলো ইরানের কোটি কোটি ব্যারেল তেল গোপনে আমদানি করে ওয়াশিংটনের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেছে।
ওএফএসি জানিয়েছে, তাদের উদ্দেশ্য শাস্তি দেওয়া নয়, বরং অবৈধ বাণিজ্য কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অর্থায়ন বন্ধ করা এবং আন্তর্জাতিক বাজারে স্বচ্ছতা বাড়ানো।
বিশ্লেষকদের মতে, নতুন এই নিষেধাজ্ঞা দক্ষিণ এশিয়ার জ্বালানি বাজারে প্রভাব ফেলতে পারে—বিশেষ করে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মতো দেশগুলোতে, যারা স্পট মার্কেট থেকে এলপিজি আমদানি করে থাকে। এতে সরবরাহ শৃঙ্খলে অনিশ্চয়তা তৈরি হতে পারে এবং ছোট আমদানিকারকদের ওপর চাপ বাড়বে।
প্রদা/ডিও