দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যিক কার্যক্রম এখন নাজুক সময় পার করছে। আইন-শৃঙ্খলার অবনতিতে ব্যবসায়ী সমাজে তৈরি হয়েছে নিরাপত্তাহীনতা ও আস্থাহীনতা। উচ্চ সুদের হার, ডলারের দাম বৃদ্ধি এবং মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাসের কারণে শিল্পের কাঁচামাল আমদানি কমে গেছে, কমেছে পণ্যের চাহিদাও।
ফলে নতুন উদ্যোগে বিনিয়োগ নেই, বিদ্যমান ব্যবসাও টিকিয়ে রাখাই এখন উদ্যোক্তাদের বড় চ্যালেঞ্জ। এতে রাজস্ব আয় কমছে, বন্ধ হয়ে যাচ্ছে একের পর এক কারখানা, বেড়েছে বেকারত্ব ও দারিদ্র্য।
বিশ্বব্যাংকের পর্যবেক্ষণ: বিনিয়োগে ২২ বছরের নিম্নতম স্তর
বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ ২২ বছরের মধ্যে নেমেছে সর্বনিম্ন পর্যায়ে।
-
বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি: ২২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন
-
খেলাপি ঋণ: বেড়ে ২৪.১%
-
কর-জিডিপি অনুপাত: ৬.৮%
-
বেকারত্ব: বেড়ে ৩.৭%
-
রপ্তানি প্রবৃদ্ধি: আগস্টে -৩%, সেপ্টেম্বরে -৪.৬১%
প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ব্যাংক খাতের দুর্বলতা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমার অন্যতম কারণ।
উদ্যোক্তাদের অভিযোগ: “অর্থনীতি চলছে আইসিইউতে”
উদ্যোক্তারা বলছেন, অর্থনীতি এখন কার্যত শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায়। নতুন বিনিয়োগ দূরের কথা, বিদ্যমান ব্যবসাগুলোও অর্ধেক সক্ষমতায় চলছে।
বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বলেন, “ব্যবসা এখন রোগীর মতো—মরেনি, কিন্তু আইসিইউতে আছে। সরকার শুধু বলছে অর্থনীতি চলছে, কিন্তু অগ্রগতি নেই। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসে সমাধান খোঁজার কোনো উদ্যোগও নেয়নি।”
সরকারি প্রকল্পেও স্থবিরতা
ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি হোসেন খালেদ বলেন, “সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প প্রায় গতিহীন। এক বছর ধরে কাজ না চলায় অর্থনীতিতে প্রত্যাশিত গতি আসছে না। সরকারি ও বেসরকারি উভয় বিনিয়োগই এখন স্থবির।”
নারী উদ্যোক্তারা বলছেন: দায়হীনতা ও অনিশ্চয়তা
উইমেন এন্টারপ্রেনার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডব্লিউইএবি) সভাপতি নাসরিন আউয়াল মিন্টু বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে কেউ দায় নিচ্ছে না। আইন-শৃঙ্খলার অবনতি, লুটপাট, নারী উদ্যোক্তাদের প্রতি সহিংসতা বেড়েছে। সবাই অপেক্ষা করছেন একটি স্থিতিশীল সরকার আসার।”
কারখানা বন্ধে কর্মহীন হাজারো শ্রমিক
বিজিএপিএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ শাহরিয়ার জানান, “অ্যাকসেসরিজ খাতের ৪৩% কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। সুদের হার ৯% থেকে বেড়ে ১৬%-এ পৌঁছেছে, জ্বালানি সংকট তীব্র, ক্রয়াদেশও কমে গেছে। এতে সাড়ে আট হাজার শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন।”
ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা: স্থিতিশীলতা ও সংলাপ
বিনিয়োগকারীরা বলছেন, সরকারের পক্ষ থেকে সংলাপ বা আশ্বাস না থাকায় আস্থা ফেরানো কঠিন হয়ে পড়েছে। অনেক ব্যবসায়ী আইনি জটিলতা ও ব্যাংক হিসাব জব্দের কারণে বেতন দিতে পারছেন না। তাঁদের বক্তব্য, “অর্থনীতি চলছে শুধু টিকে থাকার লড়াইয়ে। নতুন সরকার ও স্থিতিশীল পরিবেশ ছাড়া পুনরুদ্ধারের আশা নেই।”
প্রদা/ডিও