বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণের হার ৬০.৯ শতাংশ থেকে কমে ৫৮.৯ শতাংশে নেমেছে। এর অর্থ, দেশে কর্মক্ষম জনশক্তির মধ্যে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ বেকার হয়েছেন, যার মধ্যে ২৪ লাখ নারী। কর্মসংস্থান ও কর্মক্ষম জনসংখ্যার অনুপাত কমে দাঁড়িয়েছে ৫৬.৭ শতাংশে।
বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৪ সালে দারিদ্র্যের হার ছিল ২০.৫ শতাংশ, ২০২৩ সালে ১৯.২ শতাংশ এবং ২০২২ সালে ১৮.৭ শতাংশ। তবে পরিকল্পিত অর্থনৈতিক সংস্কার, ব্যাংক খাত পুনর্গঠন, বিনিয়োগ সম্প্রসারণ, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও নীতিগত স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা গেলে ২০২৬ ও ২০২৭ সালে দারিদ্র্যের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমতে পারে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পিপিআরসি এবং বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোও দারিদ্র্য বৃদ্ধির তথ্য জানিয়েছে। পিপিআরসির সমীক্ষায় দেখা গেছে, দেশের অতিদারিদ্র্যের হার ২০২৫ সালে ৯.৩৫ শতাংশে পৌঁছেছে।
কারণ ও বিশ্লেষণ:
বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, দারিদ্র্য বৃদ্ধির পেছনে প্রধান কারণ হলো উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং প্রকৃত মজুরি হ্রাস। ২০২৫ অর্থবছরে স্বল্প বেতনের শ্রমিকদের প্রকৃত মজুরি ২ শতাংশ কমেছে, যার প্রভাব সবচেয়ে বেশি দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর ওপর পড়েছে।
সিপিডি নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, “বিনিয়োগ কম, চাকরির সুযোগ সীমিত এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতি দীর্ঘ সময় ধরে চলায় মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি ভুগছে। বিনিয়োগ ছাড়া নতুন কর্মসংস্থান তৈরি সম্ভব নয়।”
পিআরআই-এর সহসভাপতি ড. সাদিক আহমেদ সতর্ক করেছেন, “বেকার ও অর্ধবেকার শিক্ষিত তরুণের সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। আর্থিক সীমাবদ্ধতার মধ্যে পরিকল্পিত সংস্কার প্রণয়ন ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে অগ্রাধিকার দিতে হবে।”
বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. ফ্রানজিস্কা ওনসর্জ বলেন, “উন্মুক্ত বাণিজ্য ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ব্যবহার শ্রমিকদের কার্যক্রম পুনর্বণ্টন সহজ করবে, উৎপাদনশীল খাতে সম্পদ প্রবাহ বৃদ্ধি করবে এবং বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়ক হবে।”
ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা:
বিশ্বব্যাংক পূর্বাভাস দিয়েছে, পরিকল্পিত পদক্ষেপ ও নীতিগত সংস্কার বাস্তবায়ন হলে ২০২৭ সালের মধ্যে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হবে এবং দারিদ্র্যের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমতে পারে। ২০২৫ সালে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৪.৮ শতাংশ হিসেবে ধরা হয়েছে।
প্রদা/ডিও