দেশের অর্থনীতি এখন একাধিক কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। বিশেষ করে উচ্চ মূল্যস্ফীতি সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ওপর চরম চাপ সৃষ্টি করেছে, অন্যদিকে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং আর্থিক খাতের দুর্বলতা বিনিয়োগের পরিবেশকে স্থবির করে দিয়েছে।
১. মূল্যস্ফীতি: দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ চাপ
যদিও গত বছরের তুলনায় মূল্যস্ফীতির হার কিছুটা কমেছে, কিন্তু জনগণের ভোগান্তি কমেনি।
- রেকর্ড উচ্চতা: বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি এখনও ৮.৫৫% (জুলাই, ২০২৫), যা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ।
- খাদ্যপণ্যের তীব্র চাপ: খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৭.৩৯% (জুন, ২০২৫) হারে বজায় থাকায় সীমিত আয়ের মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। জীবনধারণের জন্য তাদের আয়ের সিংহভাগই খাদ্য কিনতে চলে যাচ্ছে।
- ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস: মজুরি না বাড়ায় সাধারণ মানুষের প্রকৃত ক্রয়ক্ষমতা কমেছে, ফলে দারিদ্র্য আরও বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিশ্বব্যাংক সতর্ক করেছে, মূল্যস্ফীতির কারণে আরও ৩০ লাখ মানুষ অতিদরিদ্র হতে পারে।
২. বিনিয়োগ স্থবিরতা ও কর্মসংস্থান ঝুঁকি
অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা বেসরকারি খাতে নতুন বিনিয়োগে বাধা সৃষ্টি করছে।
- বিনিয়োগে স্থবিরতা: গ্যাসসংকট, ডলারের উচ্চমূল্য এবং ১৬% পর্যন্ত সুদহারের কারণে নতুন বিনিয়োগ প্রায় বন্ধ। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাও এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
- কারখানা বন্ধের আশঙ্কা: বিনিয়োগ না আসায় এবং চাহিদা কম থাকায় অনেক কারখানা উৎপাদন কমিয়েছে বা আংশিকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে, ফলে হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হওয়ার ঝুঁকিতে আছেন।
- রপ্তানি কমছে: টানা দুই মাস ধরে দেশের রপ্তানি আয় কমেছে, যা অর্থনীতির জন্য আরেকটি উদ্বেগজনক সংকেত।
৩. আর্থিক খাত ও রিজার্ভের মিশ্র চিত্র
আর্থিক খাত সংস্কারের চেষ্টা চললেও দুর্বলতা প্রকট।
- রিজার্ভে স্বস্তি: প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের (বিগত মাসে আড়াই বিলিয়ন ডলারের বেশি) কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কিছুটা স্থিতিশীল হয়ে ৩১.৫০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।
- ব্যাংকিং অস্থিরতা: ব্যাংকগুলোতে বিপুল খেলাপি ঋণ এবং কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্তের পাশাপাশি ইসলামী ব্যাংকের মতো বড় প্রতিষ্ঠানে কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘটনা আর্থিক খাতে অস্থিরতা বাড়িয়েছে।
- বাণিজ্য ব্যয় বৃদ্ধি: আমদানি-রপ্তানির প্রধান কেন্দ্র চট্টগ্রাম বন্দরে ১৪ অক্টোবর থেকে বাড়তি মাশুল (ট্যারিফ) কার্যকর হচ্ছে, যা পণ্যের দাম আরও বাড়াতে পারে।
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, সরকার যদি দ্রুত বাজার ব্যবস্থাপনাকে শক্তিশালী করতে না পারে, অসাধু সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ না করে এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত না করে, তবে এই অর্থনৈতিক স্থবিরতা আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে।
প্রদা/ডিও