চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে পাম অয়েলের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে না। উল্লেখযোগ্য পরিমাণে আমদানি বৃদ্ধি এবং সরকারকর্তৃক দাম সমন্বয়ের পরেও পাইকারি বাজারে পাম অয়েলের দাম বেড়েই চলেছে।
চলতি বছরের ১২ আগস্ট লিটারপ্রতি ১৯ টাকা কমিয়ে পাম অয়েলের দাম ১৫০ টাকা নির্ধারণ করে সরকার। এর আগে দাম ছিল ১৬৯ টাকা। তবে বাজারে সুপার পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকায়, যা আগের ১৫০ টাকার চেয়ে বেশি।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম আট মাসে দেশে ১৮ লাখ ৯৮ হাজার ২২২ টন পাম অয়েল আমদানি হয়েছে। গত বছরের একই সময়ে আমদানি ছিল ১৬ লাখ ৬৯ হাজার ৬০৪ টন। অর্থাৎ এক বছরে আমদানি বেড়েছে দুই লাখ টনের বেশি।
ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের তথ্যমতে, এক বছরে পাম অয়েলের দাম বেড়েছে ১২ দশমিক ১৯ শতাংশ। পাইকারি ব্যবসায়ীদের মতে, দাম বাড়ার পেছনে মূল কারণ মালয়েশিয়াসহ আন্তর্জাতিক বাজারে বুকিং রেটের ওঠানামা।
জুনে মালয়েশিয়ার বাজারে বুকিং রেট ছিল ৪ হাজার ৫০ রিংগিত, তখন খাতুনগঞ্জে মণপ্রতি দাম ছিল ৫ হাজার ৬৫০ টাকা। পরে বুকিং বেড়ে ৪ হাজার ৬০০ রিংগিত হলে দাম হয় ৬ হাজার ১০০ টাকা। আবার বুকিং কমে ৪ হাজার ৩৫০ হলেও বাজার দাঁড়ায় ৫ হাজার ৯৮০ টাকায়।
খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের আইনবিষয়ক সম্পাদক ও চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, “বিশ্ববাজারে বুকিং রেট বাড়ায় এর প্রভাব খাতুনগঞ্জেও পড়েছে। তবে সরবরাহ ভালো আছে। এখন বাজারে চাহিদা কম। ডলারের দাম না বাড়লে আপাতত ভোজ্যতেলের দাম বাড়ার সম্ভাবনা নেই।”
খাতুনগঞ্জের এক ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার অজুহাতে একটি সিন্ডিকেট বাজারে দাম বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে কমলে খাতুনগঞ্জে তা আর কমানো হয় না। বড় ব্যবসায়ীরা রেট ধরে রাখে, যার প্রভাব পাইকারি ও খুচরা বাজারে পড়ে।”
প্রধান আমদানিকারক কারা
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যে দেখা গেছে, চলতি বছরের প্রথম আট মাসে দেশের সর্বোচ্চ পাম অয়েল আমদানিকারক ছিল টিকে গ্রুপ। তাদের চার প্রতিষ্ঠান—বে-ফিশিং করপোরেশন লিমিটেড, শবনম ভেজিটেবল অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ, সুপার অয়েল রিফাইনারি লিমিটেড ও সামুদা এডিবল অয়েল লিমিটেড—মোট ৭ লাখ ১ হাজার ৯ টন পাম অয়েল আমদানি করেছে।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আমদানিকারক ছিল আবুল খায়ের গ্রুপের স্মাইল ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেড, যারা আমদানি করেছে ৫ লাখ ৫৯ হাজার ২৪২ টন। তৃতীয় স্থানে রয়েছে সিটি গ্রুপের সিটি এডিবল অয়েল লিমিটেড ও ভুট অয়েল রিফাইনার্স লিমিটেড, যাদের আমদানি দুই লাখ ৫২ হাজার ৭৮৬ টন। চতুর্থ অবস্থানে মেঘনা গ্রুপ, আমদানি করেছে এক লাখ ৭৯ হাজার ৯৯০ টন।
আলোচিত এস আলম গ্রুপ এ বছর কোনো পাম অয়েল আমদানি করেনি। তবে একই সময়ে মীর বনস্পতি প্রোডাক্টস আমদানি করেছে ৩৫ হাজার ৯৯৯ টন। নতুন বিনিয়োগে সিকম গ্রুপ আমদানি করেছে ৪৫ হাজার ৭০২ টন, আর প্রাণ গ্রুপ আমদানি করেছে ১৫ হাজার ৯৫৬ টন।
এছাড়া আকিজ ব্রেকার্স, বম্বে সুইটস, কোকোলা ফুড, ডাবর বাংলাদেশ, ইফাদ মাল্টি প্রোডাক্টস, কাজী ফুড, ম্যাথাডোর, নেসলে বাংলাদেশ, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ ও স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড তাদের কারখানার কাঁচামাল হিসেবে পাম অয়েল আমদানি করেছে।
বড় আমদানিকারকরা ক্রুড পাম অয়েল আমদানি করে নিজেদের কারখানায় পরিশোধন করে বাজারে সরবরাহ করেন। টিকে, সিটি, আবুল খায়ের, মেঘনা ও মীর গ্রুপ পাইকারি বাজারে পরিশোধিত পাম অয়েল বিক্রি করছে। খাদ্যপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা পাম অয়েল কিনে নিজেদের উৎপাদনে ব্যবহার করছে।
প্রদা/ডিও