দক্ষিণ আমেরিকা ও পূর্ব আফ্রিকা থেকে কোকেন এনে বাংলাদেশ হয়ে ভারত ও থাইল্যান্ডে পাচার করছিলো নাইজেরিয়ানদের নেতৃত্বে গড়া একটি আন্তর্জাতিক চক্র। চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কোকেন জব্দের ঘটনায় চার বিদেশির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) চট্টগ্রাম মেট্রো।
অভিযোগপত্রে অভিযুক্তরা হলেন—গ্র্যান্ড বাহামা দ্বীপের নাগরিক স্টাটিয়া শান্টিয়া রোল (৫৩), নাইজেরিয়ার আফিজ ওয়াহাব (৩৮), ইকেচুকু নওয়াগউ (৩১) এবং মূল হোতা জ্যাকব ফ্র্যাঙ্ক ওরফে ডন ফ্র্যাঙ্কি ওরফে জন ল্যারি। বর্তমানে তিনজন কারাগারে থাকলেও জ্যাকব ফ্র্যাঙ্ক অবস্থান করছেন নাইজেরিয়ায়।
২০২৪ সালের ১৫ জুলাই শাহ আমানত বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার হন গ্র্যান্ড বাহামা দ্বীপের নাগরিক স্টাটিয়া শান্টিয়া রোল। তিনি কম্পিউটার ইউপিএসের ভেতরে লুকানো ৩ কেজি ৯ গ্রাম কোকেন বহন করছিলেন। তদন্তে উঠে আসে আন্তর্জাতিক চক্রের সক্রিয় ভূমিকা এবং মূল হোতা জ্যাকব ফ্র্যাঙ্কের নাম।
ডিএনসি জানায়, একই চক্র এর আগে ২০২৪ সালের ২৪ জানুয়ারি ঢাকার বিমানবন্দর দিয়ে মালাউইয়ের নাগরিক নারী নোমথানদাজো টাওয়েরা সোকোর মাধ্যমে ৮ কেজি ৩ গ্রাম কোকেন পাচার করেছিল। সেটিই ছিল দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় কোকেন জব্দ। সেবারও মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন জ্যাকব ফ্র্যাঙ্ক।
তদন্ত কর্মকর্তা লোকাশিষ চাকমা জানান, বাংলাদেশে কোকেনের বাজার নেই। এগুলো মূলত বাংলাদেশকে ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করে ভারত ও থাইল্যান্ডে পাচার করা হতো। স্টাটিয়া শান্টিয়া রোলকে ব্রাজিল থেকে পাঠানো লাগেজ পৌঁছে দিতে ৫০ হাজার মার্কিন ডলার দেয়ার কথা ছিল। তার হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটে জ্যাকব ফ্র্যাঙ্কের সঙ্গে যোগাযোগের প্রমাণও মিলেছে।
তদন্তে আরও দুই নাইজেরিয়ান—আফিজ ওয়াহাব ও ইকেচুকু নওয়াগউ এর সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। ঢাকায় বসবাসরত এ দু’জন স্টাটিয়ার লাগেজ পরিবহন ও তদারকিতে ভূমিকা রাখেন। আফিজ ওয়াহাব দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে বসবাস করছেন এবং একজন বাংলাদেশি নারীকে বিয়ে করেছেন।
ডিএনসি সূত্র বলছে, আন্তর্জাতিক এই চক্রটি অত্যন্ত সংগঠিত। সদস্যরা পরস্পরকে সরাসরি চেনেন না, বরং ওপর থেকে নিয়ন্ত্রণকারী হোতা আলাদা আলাদা নির্দেশ দেন। এতে মূল পরিকল্পনাকারী ধরা না পড়লেও স্থানীয় পর্যায়ের সদস্যরা আটক হচ্ছেন।
মামলার বাদী ডিএনসির পরিদর্শক জিল্লুর রহমান বলেন, কোকেনের বাংলাদেশে কোনো বাজার নেই। ইউরোপ ও আমেরিকাই মূল গন্তব্য। বাংলাদেশকে ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তৈরি পোশাকসহ বৈধ ব্যবসার আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে এই আন্তর্জাতিক মাদক চক্র সক্রিয় রয়েছে।
প্রদা/ডিও