বাণিজ্য অংশীদারদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক আরোপের পর যখন আলোচনার মাধ্যমে প্রতিযোগী অন্যান্য দেশের চেয়ে সুবিধাজনক শুল্ক হার নিশ্চিত করে বাংলাদেশ, তখন দেশের রপ্তানিকারকরাও আশা করেছিলেন, এবার হয়তো যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়বে তাদের। কিন্তু বাস্তবে সেই সুবিধা ধীরে ধীরে যেন হাত ফসকে যাচ্ছে। কারণ মার্কিন বায়াররা বাংলাদেশি পোশাক সরবরাহকারীদের ওপরই বাড়তি শুল্কজনিত খরচের একটি অংশ চাপাতে চাইছেন।
গত আগস্ট থেকে মার্কিন বায়াররা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নতুন ট্যারিফের ৫ থেকে ৭ শতাংশ এখানকার রপ্তানিকারকদের ওপর চাপাতে চাইছেন। আবার কেউ কেউ বলছেন, বর্ধিত শুল্কের পুরো বোঝাই টানতে। এ অবস্থায় যারা বর্ধিত চাপ মেনে নিচ্ছেন, তারা ক্রয়াদেশ নিশ্চিত করতে পারছেন। আর যারা নিতে চাইছেন না, তাদের ক্ষেত্রে অর্ডার কনফার্ম হচ্ছে না – ঝুলে আছে। সংশ্লিষ্ট শিল্পের বেশ কয়েকজন প্রতিনিধি এমনটাই জানান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে (টিবিএস)।
দেশের অন্যতম বৃহৎ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক স্প্যারো গ্রুপ বছরে প্রায় ৩০ লাখ পিস পোশাক তৈরি করে, যার অর্ধেকই যায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে। তবে মার্কিন বাজারে আগে যে পোশাক ১০০ ডলারে বিকোত, নতুন শুল্কের কারণে সেটা ১২০ ডলার হয়ে গেছে, আর এই বর্ধিত খরচের ৫ শতাংশীয় পয়েন্ট টানতে হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটিকে।
ক্রেতাদের স্বীকারোক্তি
কিছু মার্কিন ব্র্যান্ডের প্রতিনিধি স্বীকার করেছেন যে, তারা আংশিক খরচ বহনের প্রস্তাব দিয়েছেন। মার্কিন একটি ব্র্যান্ডের বাংলাদেশ অফিসের কান্ট্রি ডিরেক্টর বলেন, “অনেক খুচরা বিক্রেতা বাড়তি শুল্কের অর্ধেকেরও বেশি বহন করছে, তবে লাভ খুবই সীমিত। তাই সরবরাহকারীদের ১ থেকে ৩ শতাংশ পর্যন্ত বহনের অনুরোধ করা হচ্ছে। বাকি অংশ শেষ পর্যন্ত মার্কিন ভোক্তাদের ওপরই পড়বে।”
শুল্কের প্রেক্ষাপট
বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাসে চলতি বছরের এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্র প্রথমে বাংলাদেশের ওপর ৩৫ শতাংশ বাড়তি শুল্ক ঘোষণা করেছিল। পরে আলোচনার সময় সব দেশের ওপর অস্থায়ীভাবে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়। আলোচনার পর আগস্টে চূড়ান্তভাবে বাংলাদেশের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করা হয়। সে তুলনায়, ভিয়েতনামের ওপর ২০ শতাংশ, ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ (পরে তা ৫০ শতাংশে উন্নীত), পাকিস্তানের ওপর ১৯ শতাংশ এবং চীনের ওপর আরও উচ্চ হার ধরা হয়েছে।
প্রতিযোগী কিছু দেশের চেয়ে শুল্ক হার কম হওয়ায় বাংলাদেশ কিছুটা স্বস্তিও পায়। এই অবস্থায় রপ্তানিকারকরা আশা করেছিলেন, ওইসব দেশ থেকে এখানে অর্ডার আসবে। যদিও দুই মাসের ব্যবধানে প্রত্যাশার সঙ্গে বাস্তবতার ব্যবধান টের পাচ্ছেন তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক আগে থেকেই প্রায় ১৬.৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে প্রবেশ করতো। নতুন করে ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্কের পর এই হার দাঁড়াবে ৩৬.৫ শতাংশ, অবশ্য পাল্টা শুল্ক সব দেশের রপ্তানিতেই আগের ট্যারিফের ওপর যুক্ত হবে।
মার্কিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি-জুলাই সময়ে দেশটিতে পোশাক আমদানি দাঁড়ায় ৪৫.৮ বিলিয়ন ডলারে, যা আগের বছরের তুলনায় ৫ শতাংশ বেশি। এই সময়ে চীন থেকে আমদানি ২১ শতাংশ কমলেও বাংলাদেশ থেকে আমদানি বেড়েছে ২২ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে বাংলাদেশ সেখানে রপ্তানি করেছে ৪.৯২ বিলিয়ন ডলারের পোশাকপণ্য।
ভিয়েতনাম, চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও কম্বোডিয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশ বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম শীর্ষ পোশাক সরবরাহকারী দেশ। যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে – ওয়ালমার্ট, ভিএফ করপোরেশন, লিভাইস স্ট্রস, টার্গেট, ফ্রুট অব দ্য লুম, গ্যাপ, টেপেস্ট্রি এবং পিভিএইচ।
প্রদা/ডিও