ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের নামে যুক্তরাষ্ট্রে পাওয়া বিলাসবহুল গাড়ি, দুটি বাড়ি ও ১২টি ব্যাংক হিসাব জব্দের প্রক্রিয়া শুরু করতে যাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের নামে যুক্তরাষ্ট্রে পাওয়া বিলাসবহুল গাড়ি, দুটি বাড়ি ও ১২টি ব্যাংক হিসাব জব্দের প্রক্রিয়া শুরু করতে যাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ উদ্দেশ্যে দেশটিতে পাঠানো হচ্ছে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর)।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, সংস্থাটির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৯ সেপ্টেম্বর আদালত এসব সম্পত্তি জব্দের নির্দেশ দিয়েছেন। সেই নির্দেশ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে এমএলএআর পাঠানো হচ্ছে।
বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) বরাতে দুদকের আবেদনে বলা হয়, অভিযুক্ত সজীব ওয়াজেদ যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বিনিয়োগ করেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়াই বিদেশে অর্থ স্থানান্তর করে সম্পত্তি কিনেছেন এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে আয়কর রিটার্নে তা গোপন করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে অবিলম্বে জয়ের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ফ্রিজ ও সংযুক্ত করা জরুরি।
এর আগে গত জুলাইয়ে দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রে জয়ের দুটি বাড়ি জব্দের নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত। দুদকের নথি অনুযায়ী, জয়ের নামে যুক্তরাষ্ট্রে দুটি বাড়ি রয়েছে। এর একটি ভার্জিনিয়ার গ্রেট ফলস এলাকায়, ২০২৪ সালের ৩ জুন এ বাড়ির মূল্য নির্ধারিত হয় ৩৮ লাখ ৭৯ হাজার ৫৬০ ডলার, যা বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ৪৫ কোটি ৪৭ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। আরেকটি বাড়ি ভার্জিনিয়ার ফলস চার্চ এলাকায় অবস্থিত, ২০১৪ সালের ৫ মে বাড়িটির মূল্য ধরা হয় ৯ লাখ ৯৬ হাজার ৮৭৫ ডলার, যা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৭ কোটি ৭৩ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে এ দুই বাড়ির মূল্য প্রায় ৫৩ কোটি ২১ লাখ ৬১ হাজার টাকা।
তদন্তে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দুদক আবেদনে বলেছে, জয়ের নামে যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত ১২টি ব্যাংক হিসাব ও আটটি গাড়ি রয়েছে। দুদকের নথি অনুযায়ী, জয়ের নামে যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত ছয়টি কোম্পানি রয়েছে—গোল্ডেন বেঙ্গল প্রডাকশনস, প্রাইম হোল্ডিং, ওয়াজেদ ইন, অসিরিস ক্যাপিটাল পার্টনার্স, ব্লু হেভেন ভেনচারস ও ট্রুপে টেকনোলজিস। এসব কোম্পানির নামে সাতটি ব্যবসায়িক হিসাব খোলা হয়েছে। পাশাপাশি জয়ের পাঁচটি ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবও রয়েছে, যার একটি তার সাবেক স্ত্রী ক্রিস্টিনা ওয়াজেদের সঙ্গে যৌথ। তবে এসব হিসাব ও কোম্পানির মাধ্যমে কী পরিমাণ অর্থ লেনদেন হয়েছে, তার তথ্য আবেদনে উল্লেখ করা হয়নি। প্রাইম হোল্ডিং এলএলসিতে জয়ের সঙ্গে মুহাম্মদ ফরিদ খান নামে একজনের অংশীদারত্ব রয়েছে। ২০১৮ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে এসব ব্যাংক হিসাব খোলা হয়।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে জয়ের নামে শনাক্ত গাড়িগুলোর মধ্যে রয়েছে—২০১৫ সালের মডেলের মার্সিডিজ-বেঞ্জ এস-ক্লাস, ২০১৬ সালের মডেলের মার্সিডিজ-বেঞ্জ এসএল-ক্লাস, ২০১৫ সালের লেক্সাস জিএক্স ৪৬০, ২০১৬ সালের ল্যান্ড রোভার, ২০১৮ সালের ম্যাকলারেন ৭২০এস, ২০১৮ সালের মার্সিডিজ-বেঞ্জ এমজি জিটি এবং ২০০১ ও ২০০৩ সালের দুটি জিপ গ্র্যান্ড চেরোকি। এর মধ্যে লেক্সাস জিএক্স ৪৬০ গাড়িটি নিবন্ধিত হয়েছে জয়ের সাবেক স্ত্রী ক্রিস্টিনা ওভারমায়ারের নামে। এসব গাড়ির আনুমানিক দাম ধরা হয়েছে প্রায় ৪ লাখ ৪২ হাজার ৯২৪ ডলার। ৯ সেপ্টেম্বর আদালত এসব গাড়ি জব্দেরও অনুমোদন দিয়েছেন।
চলতি বছরের ১৪ আগস্ট জয়ের বিরুদ্ধে ‘অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের’ অভিযোগে মামলা করে দুদক। সেখানে প্রায় ৬০ কোটি টাকার বেশি ‘অবৈধ সম্পদ’ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। তার বিরুদ্ধে ‘সন্দেহজনক লেনদেন, দুর্নীতি ও ঘুস গ্রহণের’ অভিযোগও আনা হয়েছে। এ মামলার তদন্তে নেমে দুদক এসব তথ্য পেয়েছে।
প্রদা/ডিও