অর্থনীতির স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো এখন সময়ের দাবি বলে মনে করছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)। তাদের মতে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রবৃদ্ধির মধ্যে ভারসাম্য আনতে হবে।
মূল্যস্ফীতির চিত্র
সর্বশেষ মাসিক অর্থনৈতিক হালনাগাদে জিইডি জানিয়েছে, টানা অস্থিরতার পর আগস্টে মূল্যস্ফীতি নেমে এসেছে ৮ দশমিক ২৯ শতাংশে—যা ২০২২ সালের জুলাইয়ের পর সর্বনিম্ন। ২০২৪ সালের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে এই হার ছিল দুই অঙ্কে। খাদ্য মুদ্রাস্ফীতি টানা তিন মাস ধরে ৭ দশমিক ৬ শতাংশে স্থিতিশীল রয়েছে, যা গত বছরের জুলাইয়ের ১৪ শতাংশ থেকে উল্লেখযোগ্য উন্নতি।
চালের দাম নির্ভরতা
মূল্যস্ফীতিতে চালের অবদান সবচেয়ে বেশি—আগস্টে ছিল ৪৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ। জিইডির ধারণা, সরকারের পদক্ষেপ যেমন ১৭ লাখ টন বোরো চাল সংগ্রহ, শুল্কমুক্তভাবে ৫ লাখ টন আমদানি এবং সরকারি খাদ্য বিতরণ কর্মসূচি—এসব কারণে চালের দাম কমতে পারে।
বহিঃখাতের ইতিবাচক দিক
রপ্তানি আয়ে স্থিতি বজায় আছে—২০২৫ সালের জুলাইয়ে তা দাঁড়ায় ৪৭৭ কোটি ডলার। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও বেড়ে আগস্টে দাঁড়িয়েছে ৩১ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলার, যা এক বছর আগে ছিল ২৪ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন। ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার ১২১ থেকে ১২২ টাকার মধ্যে স্থিতিশীল। জিইডির মতে, সরকার এখন ঋণ দায় মেটানো ও বাণিজ্যজনিত চাপ সামাল দিতে তুলনামূলক ভালো অবস্থানে রয়েছে।
বিনিয়োগে ধীরগতি
অভ্যন্তরীণ খাতের চিত্র ভিন্ন। ২০২৫ সালের জুনে মোট ঋণ প্রবৃদ্ধি নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৯৭ শতাংশে, যেখানে এক বছর আগে ছিল ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ। এর মধ্যে বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধি সর্বনিম্ন—মাত্র ৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ। জিইডি বলছে, উচ্চ সুদের হার, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং ব্যাংকের সতর্কতা বিনিয়োগে অনাগ্রহ তৈরি করেছে।
অন্যদিকে সরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি জুনে দাঁড়ায় ১৩ দশমিক ০৯ শতাংশে (এক বছর আগে ছিল ৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ)। সরকারের রাজস্ব ঘাটতি ও ব্যয়ের চাপের কারণে ব্যাংক খাত থেকে ধার বাড়ছে, যা বেসরকারি খাতের জন্য জায়গা সংকুচিত করছে।
নীতির মিশ্র প্রভাব
বাংলাদেশ ব্যাংকের সুদহার বাড়ানোর সিদ্ধান্তে একদিকে মূল্যস্ফীতি কমছে ও রিজার্ভ পুনর্গঠিত হয়েছে, অন্যদিকে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি নেমে আসায় কর্মসংস্থান ও প্রবৃদ্ধি হুমকিতে পড়ছে।
আমানতে ধীরগতি
ব্যাংকিং খাতে আমানত প্রবৃদ্ধিও কমেছে। ২০২৫ সালের জুন শেষে তা দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৭৭ শতাংশে, যা এক বছর আগে ছিল ৯ দশমিক ২৫ শতাংশ। প্রবাসী আয়ের প্রবাহ মার্চে কিছুটা স্বস্তি দিলেও জুলাই-আগস্টে গতি কমে গেছে।
জিইডির সতর্কবার্তা
জিইডির মূল্যায়নে, বহিঃখাত শক্তিশালী হলেও অভ্যন্তরীণ খাতে ঝুঁকি রয়ে গেছে। বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ ও রাজস্ব আহরণ বাড়ানো এবং এডিপি বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত না হলে মধ্যমেয়াদে প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা দুর্বল হয়ে পড়তে পারে।
প্রদা/ডিও