৭টি প্রকল্প বাস্তবায়নে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ১ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলারের অনমনীয় বা কঠিন শর্তের ঋণ নিচ্ছে সরকার।
গতকাল বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর শেরে-বাংলা-নগরে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ‘স্ট্যান্ডিং কমিটি অন নন-কনসেশনাল লোন’ (এসসিএনএল) কমিটির সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন অর্থ উপদেষ্টা।
বিশ্বব্যাংক বা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) মতো উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে নেওয়া অনমনীয় ঋণ সাধারণত বাজারভিত্তিক সুদ ও শর্তে পাওয়া যায়। এতে অনুদান বা ভর্তুকির বড় কোনো অংশ থাকে না।
আইএমএফের সংজ্ঞা অনুযায়ী, কোনো ঋণের গ্রান্ট উপাদান যদি ২৫ শতাংশের কম হয়, তবে সেটিকে অনমনীয় ঋণ হিসেবে ধরা হয়।
ইআরডি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমানে সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেট (এসওএফআর) বেশি হওয়ায় বাজারভিত্তিক সুদে নেওয়া ঋণের গ্রান্ট উপাদান কমে যাচ্ছে। তবে সুদের হার পরিবর্তন হলে গ্রান্ট উপাদানও সময়ে সময়ে পরিবর্তিত হবে। এতে ঋণের নমনীয়তায় ওঠানামা ঘটবে।
এসসিএনসিএল কমিটির সভায় অনুমোদিত ঋণের মধ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে ৬৪৯ মিলিয়ন ডলারের তিনটি নতুন প্রকল্প রয়েছে। এর মধ্যে ‘নেটওয়ার্ক নর্থওয়েস্ট ডিস্ট্রিবিউশন মডার্নাইজেশন প্রজেক্ট’-এ ৯১ মিলিয়ন ডলার, ‘চট্টগ্রাম-দোহাজারী মিটার গেজ রেলপথকে ডুয়েল গেজ রেলপথে রূপান্তর প্রকল্প’-এ ৫০৮ মিলিয়ন ডলার এবং ‘খুলনা ওয়াটার সাপ্লাই প্রজেক্ট (ফেজ-২)’-এ ১৫৪ মিলিয়ন ডলারের ঋণ নেওয়া হবে।
ইআরডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেলপথ রূপান্তর প্রকল্পে ৫০৮ মিলিয়ন ডলার অর্ডিনারি ক্যাপিটাল রিসোর্সেস (ওসিআর) রেগুলার এবং ১৮০ মিলিয়ন ডলার কনসেশনাল অর্ডিনারি ক্যাপিটাল রিসোর্সেস ঋণ নেওয়ার বিষয়ে খসড়া চুক্তি ও সংশ্লিষ্ট নথির ওপর গত ২৪ আগস্ট ঋণ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
এ ঋণের মেয়াদ ২৫ বছর, গ্রেস পিরিয়ড ৫ বছর। সুদের হার নির্ধারিত হয়েছে এসওএফআর + লেন্ডিং স্প্রেড + ম্যাচুরিটি প্রিমিয়াম হিসেবে। এছাড়া ০.১৫ শতাংশ কমিটমেন্ট ফি দিতে হবে।
ইআরডি প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, চলতি সেপ্টেম্বরের ১৬ তারিখে এসওএফআর হার ৪.৩৯ শতাংশ ধরা হলে এবং ছকে বর্ণিত লেন্ডিং স্প্রেড ও ম্যাচুরিটি প্রিমিয়াম বিবেচনায় প্রস্তাবিত ঋণের গ্রান্ট উপাদান দাঁড়ায় মাত্র ০.৮৬ শতাংশ। ফলে এটি অনমনীয় শর্তের ঋণ হিসেবে গণ্য হচ্ছে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতায় খুলনা পানি সরবরাহ প্রকল্পের (দ্বিতীয় পর্যায়) জন্য এডিবির ১৫৪ মিলিয়ন ডলারের ঋণ প্রস্তাব রয়েছে। এর মধ্যে ১০০ মিলিয়ন নমনীয় ঋণ, ৫০ মিলিয়ন ওসিআর এবং ৪ মিলিয়ন ডলার অনুদান। এ প্রকল্পের ঋণ আলোচনাও (লোন নেগোসিয়েশন) গত ১৫ জুলাই অনুষ্ঠিত হয়।
৫০ মিলিয়ন ডলারের ওসিআর ঋণের মেয়াদ ২৫ বছর, গ্রেস পিরিয়ড ৫ বছর। সুদের হার নির্ধারিত হয়েছে এসওএফআর + লেন্ডিং স্প্রেড + ম্যাচুরিটি প্রিমিয়াম হিসেবে। এছাড়া ০.১৫ শতাংশ কমিটমেন্ট ফি দিতে হবে।
ইআরডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমান এসওএফআর হার ৪.৩৯ শতাংশ বিবেচনায় লেন্ডিং স্প্রেড ও ম্যাচুরিটি প্রিমিয়াম অনুযায়ী এ ঋণের গ্রান্ট উপাদান দাঁড়ায় ১.০৫ শতাংশ। এ কারণে ঋণ প্রস্তাবটি এসসিএনসিএল সভায় উপস্থাপন করা হয় এবং কমিটি এটি অনুমোদন দিয়েছে।
এদিকে বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন নর্দান ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (নেসকো) একটি প্রকল্পে ৯১ মিলিয়ন ডলারের অনমনীয় ঋণ অনুমোদন করা হয়েছে। প্রকল্পটির নাম ‘নেটওয়ার্ক নর্থওয়েস্ট ডিস্ট্রিবিউশন মডার্নাইজেশন প্রজেক্ট’। এ প্রকল্পে মোট ১১৩ দশমিক ৫৮ মিলিয়ন ডলার ঋণের মধ্যে ৯১ মিলিয়ন ওসিআর ঋণ।
ইআরডি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শর্ত অনুযায়ী চলতি সেপ্টেম্বরের ১৬ তারিখে এসওএফআর হার ৪.৩৯ শতাংশ ধরা হলে লেন্ডিং স্প্রেড ০.৫০ শতাংশ এবং ম্যাচুরিটি প্রিমিয়াম ০.১০ শতাংশের ভিত্তিতে ঋণের গ্রান্ট উপাদান দাঁড়ায় ২.৯৪ শতাংশ। যেহেতু এটি ২৫ শতাংশের নিচে, তাই ঋণটি অনমনীয় শর্তের। বুধবার এসসিএনসিএল কমিটির সভায় এ ঋণও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
নতুন তিনটি ঋণ প্রস্তাবের বাইরে আরও চারটি পুরোনো ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করেছে এসসিএনসিএল কমিটি।
তালিকায় রয়েছে ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (আইডিবি) অর্থায়নে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের আওতায় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রকল্প ‘কনস্ট্রাকশন অব ফাইভ ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট ব্রিজেস ইন ময়মনসিংহ ডিভিশন, বাংলাদেশ’। এ প্রকল্পের জন্য নেওয়া হবে ২৪১ দশমিক ৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ।
এ ঋণের মেয়াদ ২০ বছর, গ্রেস পিরিয়ড ৫ বছর। সুদের হার নির্ধারিত হয়েছে এসওএফআর + ০.৬০ শতাংশ কন্ট্র্যাকচুয়াল স্প্রেড + ০.৮০ শতাংশ ফান্ডিং স্প্রেড + ০.৩০ শতাংশ রিস্ক প্রিমিয়াম। এতে মোট মার্কআপ দাঁড়ায় ৫.৮৫৫৯৪ শতাংশ।
ইআরডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৫ মে তারিখে এসওএফআর হার ৪.১৫ শতাংশ ধরে ফরওয়ার্ড লিজের ক্ষেত্রে মার্কআপ রেট দাঁড়ায় ৫.৮৫৫৯৪ শতাংশ এবং গ্রান্ট উপাদান ১০.০৩ শতাংশ। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, লোন অংশটি কনসেশনাল হলেও ফরওয়ার্ড লিজ অংশটি অনমনীয় শর্তের। প্যাকেজ লোন বিবেচনায়ও এটি নন-কনসেশনাল হিসেবে ধরা হয়েছে।
এছাড়া, এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (এআইআইবি) অর্থায়নে ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম-সাবপ্রোগ্রাম ২, ‘ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট ইনক্লুসিভ’ শীর্ষক প্রকল্পে ৪০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাজেট সহায়তা ঋণ বুধবার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
ইউরোপীয় বিনিয়োগ ব্যাংক (ইআইবি) অর্থায়নে ‘ঢাকা এনভায়রনমেন্টালি সাসটেইনেবল ওয়াটার সাপ্লাই (ডিইএসডব্লিউএস)’ প্রকল্পে ৭০ মিলিয়ন ইউরো এবং ‘সৈয়দাবাদ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ফেজ-৩)’ প্রকল্পে ৯০ মিলিয়ন ইউরো ঋণ সহায়তাও একই সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়।
প্রদা/ডিও