ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে নিজের আগের অবস্থান থেকে সরে এসে এক বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ভাষণ দেওয়ার পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি বলেছেন, চাইলে ইউক্রেন রাশিয়ার কাছ থেকে তার ‘মূল ভূখণ্ড’ ফিরে পেতে পারে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) নিজের সামাজিক মাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যালে’ দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, ইউরোপ ও ন্যাটোর সহায়তায় ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর সময়কার মূল সীমান্ত পুনরুদ্ধার করতে পারে। তার ভাষায়, রাশিয়ার অর্থনীতি ভীষণ চাপে রয়েছে, এখনই ইউক্রেনের সময়।
তিনি বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়ার সামরিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতা গভীরভাবে পর্যালোচনা করেই তার এই নতুন অবস্থান। রাশিয়াকে ‘পেপার টাইগার’ আখ্যা দিয়ে ট্রাম্প বলেন, পুতিন ও রাশিয়া ভয়াবহ অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়েছে।
এর আগে ট্রাম্প বারবার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে যুদ্ধ থামাতে ইউক্রেনকে হয়তো কিছু ভূখণ্ড ছাড়তে হতে পারে। ফেব্রুয়ারিতে ওভাল অফিসে উত্তপ্ত আলোচনার সময় তিনি জেলেনস্কিকে বলেছিলেন, এখন তোমাদের হাতে জেতার মতো কার্ড নেই। গত আগস্টে তিনি এমনকি দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চল আংশিকভাবে রাশিয়ার হাতে ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়ার কথাও ভেবেছিলেন বলে খবর বেরিয়েছিল।
কিন্তু মঙ্গলবারের পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, ইউক্রেন ‘হয়তো এর চেয়েও বেশি কিছু পেতে পারে’। যদিও তিনি ক্রিমিয়ার নাম উল্লেখ করেননি। ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখল করে রাশিয়া এবং ২০২২ সালে পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন শুরু করে।
ট্রাম্পের এই অবস্থান পরিবর্তনকে ‘বড় অগ্রগতি’ হিসেবে স্বাগত জানিয়েছেন ভলোদিমির জেলেনস্কি। জাতিসংঘ ভবনে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, যুদ্ধ শেষের পর ইউক্রেনকে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেওয়ার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র আগ্রহী। যদিও কীভাবে সেই সহায়তা আসবে, তা নিয়ে তিনি সুনির্দিষ্ট তথ্য দেননি। সম্ভাব্য সহায়তার মধ্যে অস্ত্র, আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও ড্রোনের কথাও উল্লেখ করেন জেলেনস্কি।
পরে ফক্স নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ট্রাম্পের পোস্ট তাকে বিস্মিত করলেও এটি ইতিবাচক সংকেত। তার ভাষায়, এটি প্রমাণ করে যে ট্রাম্প ও যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ইউক্রেনের পাশে থাকবে। তিনি আরও দাবি করেন, পুতিন বারবার ট্রাম্পকে মিথ্যা বলেছের।
জাতিসংঘে ভাষণেও ট্রাম্প রাশিয়ার সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ন্যাটো সদস্য দেশগুলোর আকাশসীমায় ঢুকে পড়া রুশ যুদ্ধবিমানগুলো গুলি করে নামানো উচিত। সম্প্রতি একাধিকবার ন্যাটোর আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে রুশ যুদ্ধবিমান ও ড্রোন।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, কিছু ন্যাটো দেশ এখনও রুশ জ্বালানি কিনছে, যা দিয়ে তারা নিজেদের বিরুদ্ধে যুদ্ধকে অর্থায়ন করছে।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ বিষয়ে ট্রাম্পের এই অবস্থান তার নীতিতে নাটকীয় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। এতদিন তিনি যুদ্ধ দ্রুত শেষ করতে ‘ভূখণ্ড বিনিময়ের’ সম্ভাবনার কথা বললেও এখন বলছেন, ইউক্রেনই হয়তো তার পূর্ণ ভূখণ্ড ফেরত পেতে পারে।
তবে এর আগে রাশিয়ার বিরুদ্ধে একাধিকবার কঠোর পদক্ষেপের হুমকি দিলেও ট্রাম্প এখনো তা কার্যকর করেননি। মস্কো তার নির্ধারিত সময়সীমা ও নিষেধাজ্ঞার হুমকি উপেক্ষা করলেও কোনো বাস্তব পদক্ষেপ নেয়নি ওয়াশিংটন।
প্রদা/ডিও