দুবার নিলামে বিক্রির চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের (এমপি) শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করা ৩০টি বিলাসবহুল গাড়ি সরকারকে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম বন্দর মিলনায়তনে একটি কর্মশালা শেষে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান সাংবাদিকদের এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা সরকারকে গাড়িগুলে দিয়ে দেব। সরকার এগুলো ব্যবহার করবে। সরকারের পরিবহণ পুলে যাবে।’
২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর ১২তম সংসদের এমপিরা শুল্কমুক্ত সুবিধায় এসব গাড়ি আমদানি করেছিলেন। এই এমপিদের অধিকাংশই ছিলেন আওয়ামী লীগের। ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর ৬ আগস্ট সংসদ ভেঙে দেওয়া হয় এবং এনবিআর শুল্কমুক্ত সুবিধা বাতিল করে। অনেক সাবেক এমপি তাদের গাড়ি বন্দর থেকে খালাস না নিয়েই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান।
মোট ৪২টি গাড়ির মধ্যে চট্টগ্রাম কাস্টমস ২৪টি গাড়ি নিলামে তুলেছিল গত ফেব্রুয়ারিতে। তবে নিলামে প্রতিটি গাড়ির জন্য মাত্র ১ লাখ থেকে ৩.১ কোটি টাকা পর্যন্ত দর উঠেছিল, যা বাজারমূল্য ও সরকার-নির্ধারিত সংরক্ষিত মূল্য ৯.৬৭ কোটি টাকার চেয়ে অনেক কম। সর্বনিম্ন গ্রহণযোগ্য দাম ধরা হয়েছিল সংরক্ষিত মূল্যের ৬০ শতাংশ, অর্থাৎ প্রায় ৫.৮ কোটি টাকা। এর সঙ্গে ২৫ শতাংশ কর যোগ করলে চূড়ান্ত সর্বনিম্ন মূল্য দাঁড়াত ৭.২৫ কোটি টাকা।
কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এই নিলাম থেকে ১৭৫ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের আশা করেছিল।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা দেখেছি, এগুলো যখন নিলাম করলাম, খুবই অল্প দাম পেয়েছি। এখন নিলামের টাকাটা সরকারি কোষাগারে আসবে। কম দামে বিক্রি করলে আবার সরকারকেই এসব গাড়ি অনেক দাম দিয়ে কিনতে হবে। তাই জাতীয় স্বার্থ চিন্তা করে ৩০টি গাড়ি সরাসরি সরকারের পরিবহন পুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
এসব গাড়ি যারা আমদানি করেছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, সাবেক এমপি মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, সানজিদা খানম, মুহাম্মদ শাহজাহান ওমর, সুরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী, অনুপম শাহজাহান জয়, সাজ্জাদুল হাসান, মো. সাদ্দাম হোসেন পাভেল, তারানা হালিম, নাসের শাহরিয়ার জাহিদী, মো. আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।
এমপিদের জন্য শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির এই সুবিধাটি ১৯৮৮ সালে এরশাদ সরকারের আমলে চালু হয়। তারপর থেকে এই সুবিধা এখনও চালু আছে। বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, প্রত্যেক এমপি তার পাঁচ বছরের মেয়াদে একটি গাড়ি আমদানি করতে পারেন।
২০২৪ সালের জানুয়ারির নির্বাচনের পর ৫১ জন এমপি নতুন গাড়ি আমদানির জন্য ঋণপত্র (এলসি) খুলেছিলেন। তবে সরকার পতনের আগে মাত্র ছয়টি গাড়ি খালাস করা হয়েছিল।
আসার ৩০ দিনের মধ্যে বন্দর থেকে খালাস না হলে গাড়ি নিলামযোগ্য হয়ে ওঠে। এছাড়াও চট্টগ্রাম বন্দর চার দিনের গ্রেস পিরিয়ড পার হওয়ার পর থেকে স্টোরেজ ফি আরোপ করে।