বিশ্ববাজারে অ্যালুমিনিয়ামের দাম ক্রমেই ঊর্ধ্বমুখী। সরবরাহ সংকট, বাড়তি চাহিদা এবং যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কনীতির কারণে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, আগামী মাসগুলোতে ধাতব পণ্যটির বাজার পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে উঠতে পারে। খবর ফিনান্সিয়াল টাইমস।
চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে অ্যালুমিনিয়ামের দাম দ্রুত বেড়েছে। শিল্প খাতে বহুল ব্যবহৃত ধাতবটির ওপর ৫০ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এতে ‘মিডওয়েস্ট প্রিমিয়াম’ নামে পরিচিত অতিরিক্ত চার্জ এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। বর্তমানে এই চার্জ প্রতি পাউন্ড ৭০ সেন্ট ছাড়িয়েছে, যা গত এক বছরে ১৭৭ শতাংশ বৃদ্ধি।
এদিকে লন্ডন মেটাল এক্সচেঞ্জে (এলএমই) এপ্রিল থেকে অ্যালুমিনিয়ামের দাম বেড়েছে ১৭ শতাংশ। চীনে উৎপাদন সীমিত রাখা এবং অন্যান্য দেশে পর্যাপ্ত গলন সক্ষমতা না থাকায় বিশ্ববাজারে সরবরাহ ঘাটতি দেখা দিয়েছে। একই সময়ে বৈশ্বিক চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দাম আরো বাড়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এলএমই অনুমোদিত ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার গুদামগুলোতে মজুদ এখন সর্বনিম্ন পর্যায়ের কাছাকাছি। সাংহাই ফিউচার্স এক্সচেঞ্জেও এপ্রিলের পর মজুদ প্রায় অর্ধেকে নেমেছে।
ইতালিভিত্তিক ইউনিক্রেডিট ব্যাংকের বিনিয়োগ কৌশলবিদ টমাস স্ট্রোবেল বলেন, চীনের প্রণোদনা কর্মসূচির কারণে অ্যালুমিনিয়ামের চাহিদা বাড়ছে। তবে উৎপাদন সীমিত থাকায় বছরের শেষ নাগাদ দাম আরও ঊর্ধ্বমুখী হবে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি বাড়ছে, বৈশ্বিক মজুদ হ্রাসের ফলে সরবরাহ সংকট সমাধান হচ্ছে না।
ব্যাংক অব আমেরিকার পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সাল পর্যন্ত বাজারে কিছুটা উদ্বৃত্ত থাকতে পারে। তবে ২০২৬ সালে ঘাটতি তৈরি হলে দাম বেড়ে টনপ্রতি ৩ হাজার ডলারে পৌঁছতে পারে। বর্তমানে দাম টনপ্রতি ২ হাজার ৭০০ ডলারের সামান্য বেশি।
চীনের ক্ষেত্রেও উৎপাদন সীমাবদ্ধতা বড় ভূমিকা রাখছে। ২০১৭ সালে দেশটিতে বার্ষিক উৎপাদনসীমা নির্ধারণ করা হয়েছিল সাড়ে চার কোটি টন। বর্তমানে সে সীমায় পৌঁছে যাওয়ায় চীন অ্যালুমিনিয়ামের নিট আমদানিকারক হয়ে উঠছে। মর্গান স্ট্যানলির গবেষণাপ্রধান র্যাভেল ঝাং জানান, এতদিন অতিরিক্ত সরবরাহ থাকলেও এখন ঘাটতির দিকে বাজার ধাবিত হচ্ছে।
এছাড়া ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর পর ইউরোপে জ্বালানি সংকট দেখা দেয়ায় একাধিক গলন কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। ইন্দোনেশিয়া ও ভারতে নতুন উৎপাদন এখনো পুরোপুরি শুরু হয়নি। ফলে সরবরাহ চাপে পড়েছে। এলএমইর তথ্যমতে, বর্তমানে গুদামে থাকা অ্যালুমিনিয়ামের অর্ধেকই রাশিয়ার উৎপাদিত। তবে পশ্চিমা দেশগুলো তা গ্রহণে অনাগ্রহী হওয়ায় এসব মজুদ এখন মূলত চীনের বাজারে যাচ্ছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বড় বিনিয়োগকারীদের অস্বাভাবিক কার্যক্রমও দাম বাড়াচ্ছে। বর্তমানে একজন ব্যবসায়ী একাই এলএমই গুদামে থাকা অ্যালুমিনিয়ামের ৯০ শতাংশের বেশি নিয়ন্ত্রণ করছেন।
প্রদা/ডিও