চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) দরকার প্রায় ২২ শতকের মতো জায়গা। বাংলাদেশ রেলওয়ের কাছে এই জায়গার জন্য আবেদন করা হয়েছে দেড় বছর আগে। হুকুমদখলের ক্ষতিপূরণের টাকা পয়সা সিডিএ হাতে নিয়ে বসে আছে। অথচ খবর নেই রেলের। রেলওয়ের কাছ থেকে জায়গা না পাওয়ায় চট্টগ্রামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের আগ্রাবাদ থেকে পতেঙ্গামুখী র্যাম্প নির্মাণের কাজ শুরু করতে পারছে না সিডিএ। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ ডিসেম্বরে, হাতে সময় আছে মাত্র তিন মাস। অথচ এখনো জায়গার কোন হিল্লে হয়নি, কাজ শুরু তো দূরের কথা। র্যাম্প নির্মাণ ঝুলে থাকায় প্রকল্পটি নির্ধারিত মেয়াদে শেষ করা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। র্যাম্পটি নির্মাণ করা না গেলে আগ্রাবাদের সাথে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কানেক্টিভিটিতে বড় ধরনের ধস দেখা দেবে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সিডিএ র্যাম্প নির্মাণ না করেই প্রকল্প শেষ করতে বাধ্য হবে বলে উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, রেলওয়ে থেকে জায়গা পাওয়া না যাওয়ায় কয়েক হাজার কোটি টাকার গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পটির উপযোগিতাই মুখ থুবড়ে পড়বে।
সিডিএ’র দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, বন্দরনগরীর যান চলাচলে প্রত্যাশিত গতিশীলতা আনার লক্ষ্যে ৪ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নগরীর ওয়াসা মোড় থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হয়। প্রকল্পটির পুরো অর্থায়ন করে সরকার। এরমধ্যে ৩ হাজার ৭শ’ কোটি টাকা সরকার অনুদান এবং ৫২৪ কোটি ঋণ হিসেবে প্রদান করে। ঋণের টাকা সিডিএ নির্ধারিত মেয়াদ শেষে সরকারকে পরিশোধ করার কথা রয়েছে। ঋণের এই টাকার সংস্থানের জন্য এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে থেকে টোল নেয়া হচ্ছে। কিন্তু যে পরিমান গাড়ি চলাচল করবে বলে শুরুতে প্রত্যাশা করা হয়েছিল বাস্তবে তা চলছে না। এতে করে ঋণ পরিশোধে সিডিএকে বেকায়দায় পড়তে হবে।
সিডিএ’র কর্মকর্তারা জানান, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে যে পরিমান গাড়ি চলাচলের আশা করা হয়েছিল তা না হওয়ার পেছনে একমাত্র কারণ হচ্ছে কানেক্টিভিটি। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে যেভাবে নির্মিত হওয়ার কথা ছিল পরবর্তীতে সেভাবে নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। নগরীর লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়েতে উঠানামার জন্য ১৫টি র্যাম্প নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল সিডিএর। ২০১৭ সালে অনুমোদিত হওয়া এ প্রকল্প থেকে ইতোমধ্যে ছয়টি র্যাম্প বাদ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠানামার জন্য র্যাম্পের সংখ্যা ৯ টিতে নিয়ে আসা হয়েছে। এতে করে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কানেক্টিভিটি বেশ কমেছে। বর্তমানে যে ৯টি র্যাম্প নির্মিত হওয়ার কথা রয়েছে সেগুলোর মধ্যে নতুন আপদ তৈরি হয়েছে আগ্রাবাদের ডেবার পাড়ের র্যাম্প। এই র্যাম্প নির্মাণে অনিশ্চয়তা আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকার কানেক্টিভিটিকে হুমকির মুখে ফেলা হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, আগ্রাবাদ রেলওয়ে ডেবার পাড় থেকে একটি র্যাম্প যুক্ত হবে এক্সপ্রেসওয়েতে। এই র্যাম্প নির্মাণের জন্য সিডিএ বাংলাদেশ রেলওয়ে থেকে ২২ শতক জমি চেয়েছে। কিন্তু দেড় বছরেরও বেশি সময় গত হলেও এই জমি পাওয়া যায়নি। ফলে র্যাম্পটির নির্মাণ কাজই শুরু করা যায়নি। সিডিএ রেলওয়েকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় টাকা পয়সার সংস্থান করে বসে আছে। অথচ রেলওয়ের কোন সাড়া মিলেনি। সিডিএ অভিযোগ করেছে যে, ফাইলটি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায়ও পাঠানো হয়নি। অথচ আগামী ডিসেম্বরেই প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মোহাম্মদ নুরুল করিম জানান, আমরা দেড় বছর আগে জায়গাটি চেয়ে রেলওয়েকে চিঠি দিয়েছি। আজ পর্যন্ত আমরা জায়গাটি পাইনি। এই জায়গা না পাওয়ায় আমরা কাজ শুরু করতে পারছি না। জায়গাটি দ্রুততম সময়ের মধ্যে না পেলে আমাদেরকে এই র্যাম্প নির্মাণ বাদ দিয়েই প্রকল্পের কাজ শেষ করতে হবে। তিনি বলেন, আগামী ডিসেম্বরে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এখন জায়গাটি পেলে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করে আগামী জুনের মধ্যে র্যাম্পটির নির্মাণকাজ শেষ করতে পারতাম। এই র্যাম্প ব্যবহার করে আগ্রাবাদ থেকে পতেঙ্গামুখী যানবাহন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে উঠে নিমতলা, ইপিজেড, পতেঙ্গাসহ সন্নিহিত এলাকায় যাতায়ত করতে পারবে। এই র্যাম্পকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আখ্যা দিয়ে সিডিএ চেয়ারম্যান বলেন, শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি এলাকার কানেক্টিভিটি বাড়ানোর অতি গুরুত্বপূর্ণ এই র্যাম্পটি দ্রুত নির্মাণ করা গেলে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে যান চলাচল বহুলাংশে বেড়ে যেতো।
সিডিএর চিফ ইঞ্জিনিয়ার কাজী হাসান বিন শামস বলেন, আমরা দফায় দফায় যোগাযোগ করেছি। কিন্তু অজ্ঞাতকারণে রেলওয়ে থেকে প্রত্যাশিত সাড়া মিলছে না। বিষয়টি র্যাম্প নির্মাণের ক্ষেত্রে বড় ধরণের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে রেখেছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
প্রদা/ডিও