চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) সরকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) মাত্র ৫ হাজার ৭১৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকা বা মোট বরাদ্দের মাত্র ২ দশমিক ৩৯ শতাংশ ব্যয় করতে পেরেছে।
সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) প্রকাশিত বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)–এর তথ্যানুযায়ী, বাস্তবায়নের এই হার অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় সবচেয়ে কম।
আইএমইডি কর্মকর্তারা জানান, গত বছরের রাজনৈতিক অস্থিরতার পর এ বছর উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি ফেরার কথা থাকলেও তা আশানুরূপভাবে হয়নি।
এর আগের অর্থবছরে জুলাইয়ের ছাত্র আন্দোলনের কারণে স্থবির অবস্থা থাকা সত্ত্বেও এর চেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করেছিল সংস্থাগুলো।
সেই সময়, অর্থাৎ গত অর্থবছরের একই সময়ে, এডিপি বরাদ্দ থেকে ব্যয় হয়েছিল ৭ হাজার ১৪৩ কোটি ৮ লাখ টাকা, যা ছিল মোট বরাদ্দের ২ দশমিক ৫৭ শতাংশ।
সংস্থার হিসাবে, নিজস্ব তহবিলসহ এডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৯৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।
আইএমইডি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত অর্থবছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র জনতার অভ্যুত্থান ও সরকারের পতনের কারণে কার্যত কোনো উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হয়নি।
তাদের মতে, এ বছর পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক থাকায় এডিপি বাস্তবায়নে গতি আসার কথা ছিল। তবে বাস্তবে এখনো সেই গতি দেখা যাচ্ছে না। সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে বছরের শুরু থেকেই পরিকল্পনা নিয়ে অর্থ ব্যয়ের তাগিদ দেওয়া হলেও সরকার পতনের পর অনেক প্রকল্প থেকে ঠিকাদার সরে গিয়েছিলেন। রাজনৈতিক কারণে বেশিরভাগই এখনো ফিরে আসেননি। ফলে বাস্তবায়ন কার্যক্রম আটকে আছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গত অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়ন হার ছিল সবচেয়ে কম। চলতি অর্থবছরের শুরুতেও একই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। তারা আরও বলেন, ডিসেম্বর পর্যন্ত বাস্তবায়নে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হলেও আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন থাকায় জানুয়ারি থেকে প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি আবারও শ্লথ হয়ে যেতে পারে।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, সরকার এখন প্রকল্প যাচাই-বাছাই করে অর্থ ছাড় করছে। এতে একদিকে সচেতনভাবে খরচ হলেও অন্যদিকে প্রশাসনিক জটিলতা প্রভাব ফেলতে পারে।
আইএমইডির প্রতিবেদনে দেখা যায়, অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে সরকারি তহবিল থেকে খরচ হয়েছে ২ হাজার ৭৪৭ কোটি টাকা, বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান থেকে ২ হাজার ৫০১ কোটি টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন থেকে ব্যয় হয়েছে ৪৬৭ কোটি টাকা।
আইএমইডির তথ্য অনুযায়ী, ২৯ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের জুলাই-আগস্ট সময়ে এডিপি বাস্তবায়ন হার গড়ের চেয়ে কমেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, রেলপথ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন, শিল্প মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয়।
সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে দুই মাসে সর্বাধিক অর্থ খরচ করেছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। তারা ব্যয় করেছে ১ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ১০ দশমিক ৭৫ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ, তাদের ব্যয় ১ হাজার ২৩৭ কোটি টাকা, যা বরাদ্দের ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
এছাড়া সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ১ দশমিক ৪৮ শতাংশ, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ২ দশমিক ১ শতাংশ, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ ৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ, বিদ্যুৎ বিভাগ ২ দশমিক ৫৮ শতাংশ, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ৩ দশমিক ৯৯ শতাংশ, কৃষি মন্ত্রণালয় ২ দশমিক ৬৬ শতাংশ এবং সেতু বিভাগ ১ দশমিক ১৬ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন করেছে।
প্রদা/ডিও