আগামী দুই অর্থবছরে দশটি প্রকল্পে মোট ২.৭৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ প্রস্তাব দিয়ে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে যতগুলো সম্ভব প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়ার জন্য বাংলাদেশকে তাগিদ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনের ঘোষিত রোডম্যাপের প্রেক্ষাপটে এই তাগিদ দেওয়া হলো।
বাংলাদেশ ও ভুটানের জন্য বিশ্বব্যাংকের ডিভিশন ডিরেক্টর জাঁ পেসমে গত ২৬ আগস্ট অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদকে পাঠানো এক চিঠিতে লিখেছেন, ‘প্রস্তাবিত ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের আগে সরকারি নীতিগত সিদ্ধান্তের ওপর ৯০ দিনের একটি স্থগিতাদেশ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রকল্পগুলো প্রস্তুত করার জন্য আমাদের হাতে সময় সীমিত, যা প্রকল্প জট সৃষ্টি করতে পারে।’
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (আইডিএ) ২১তম রিপ্লেনিশমেন্ট (আইডিএ২১) বাস্তবায়নের অংশ হিসাবে পাঠানো এ চিঠিতে এই তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
বিশ্বব্যাংক ২০২৫-২৬ ও ২০২৬-২৭ অর্থবছরে অর্থায়নের জন্য প্রকল্পগুলোর একটি সম্ভাব্য তালিকাও দিয়েছে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) কর্মকর্তারা জানান, বিশ্বব্যাংক আগামী দুই অর্থবছরের জন্য দশটি প্রকল্পে ২.৭৭১ বিলিয়ন ডলারের ঋণ প্রস্তাব আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত করার প্রস্তাব দিয়েছে।
একইসঙ্গে আইডিএ সাইকেলে আগামী তিন অর্থবছরে বাংলাদেশের জন্য ২.১৮৪ বিলিয়ন ডলার এসডিআর বরাদ্দের প্রাথমিক আশ্বাসও দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। তবে আইডিএ২১-এর (যা ১ জুলাই ২০২৫ থেকে ৩০ জুন ২০২৮ পর্যন্ত কার্যকর থাকবে) জন্য চূড়ান্ত বরাদ্দ আগামী মাসে ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সভায় নিশ্চিত করা হবে। তখন বাংলাদেশের বরাদ্দ বাড়তেও পারে।
প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে ফিন্যান্সিয়াল সেক্টর সাপোর্ট প্রজেক্ট-২ (৪০০ মিলিয়ন ডলার), মেট্রো ঢাকা ওয়াটার সিকিউরিটি অ্যান্ড রেজিলিয়েন্স প্রোগ্রাম (৩৫০ মিলিয়ন ডলার) ও ঢাকা মেট্রো লাইন ২ ইনস্টিটিউশনাল স্ট্রেনদেনিং (৭০ মিলিয়ন ডলার)।
এছাড়া দুই বছর মেয়াদি এই অর্থায়নের তালিকায় জবস অ্যান্ড গ্রোথ ডিপিসি-র অধীনে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বাজেট সহায়তা ঋণ ও জ্বালানি আমদানির জন্য ৫০০ মিলিয়ন ডলারের একটি গ্যারান্টিও রয়েছে।
খসড়া তালিকায় থাকা অন্যান্য উল্লেখযোগ্য প্রকল্পগুলো হলো—ডিজিটাল সার্ভিস ট্রান্সফরমেশন ফর অ্যাকসেস অ্যান্ড রেজিলিয়েন্স (৩০০ মিলিয়ন ডলার), স্ট্রেনদেনিং হেলথ ইমার্জেন্সি প্রিপেয়ার্ডনেস, রেসপন্স অ্যান্ড রেজিলিয়েন্স উইথ আ ওয়ান হেলথ অ্যাপ্রোচ (২২৫ মিলিয়ন ডলার) এবং রিকভারি অ্যান্ড অ্যাডভান্সমেন্ট অব ইনফরমাল সেক্টর এমপ্লয়মেন্ট (২০১ মিলিয়ন ডলার)।
এই প্রথমবারের মতো আইডিএ২১-এর অধীনে বাংলাদেশের মূল আইডিএ ঋণের একটি অংশে বাজারভিত্তিক ফ্লোটিং সুদহার থাকবে, যার সর্বোচ্চ সীমা হবে ৫ শতাংশ। আইডিএ-২১ ঋণের শর্তাবলির মধ্যে রয়েছে ২৫ বছরের মেয়াদ এবং পাঁচ বছরের গ্রেস পিরিয়ড। তবে এক্ষেত্রে ফিক্সড-রেটে ঋণ নেওয়ার সুযোগও থাকছে, যদিও তাতে বরাদ্দ ১৫ শতাংশ কমে যাবে।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন উল্লেখ বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকের আইডিএ ‘গ্যাপ’ স্ট্যাটাস থেকে উত্তীর্ণ হয়ে আইডিএ ‘ব্লেন্ড’ দেশের পর্যায়ে পৌঁছেছে। এর ফলে বাংলাদেশের জন্য আইডিএর সহজ শর্তের অর্থায়ন বরাদ্দ কমে যাবে। এসডিআর রেট অনুযায়ী, আগামী তিন বছরে বাংলাদেশের আইডিএ-২১ বরাদ্দ হবে প্রায় ৩.২ বিলিয়ন ডলার, যেখানে আগে এই ধরনের ৪.৫ বিলিয়ন ডলার অর্থায়ন মিলত তিন বছরের জন্য।
‘তবে একইসাথে দেশের জন্য নতুন অর্থায়নের জানালা খুলবে, বিশেষ করে আইবিআরডি থেকে ঋণ নেওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। যদিও আইডিএ-অনলি ব্যবস্থার আওতায় ঋণের খরচ কিছুটা বাড়বে। কিন্তু তারপরও এই হার বাজারের অন্যান্য দ্বিপাক্ষিক বা বাণিজ্যিক ঋণের তুলনায় এখনও অনেক কম। অর্থাৎ বাংলাদেশ এখন কম কনসেশনাল অর্থায়ন পেলেও বৃহত্তর আকারের অর্থায়নের সুযোগ পাচ্ছে আইবিআরডি উইন্ডোর মাধ্যমে। এতে খরচ কিছুটা বাড়লেও, বাজারের তুলনায় এখনও তা তুলনামূলকভাবে সুবিধাজনক,’ বলেন তিনি।
ইআরডি কর্মকর্তারা জানান, আইডিএ২০-এর সঙ্গে এবারের পার্থক্য হলো, আইডিএ২১-এ সব ‘গ্যাপ’ ও ‘ব্লেন্ড’ভুক্ত দেশের জন্য প্রাইভেট সেক্টর উইন্ডোর (পিএসডব্লিউ) অধীনে অর্থায়ন পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
উইন্ডো ফর হোস্ট কমিউনিটি অ্যান্ড রিফিউজিস-এর (ডব্লিউএইচআর) আওতায়, অর্থায়নের ৫০ শতাংশ হবে ঋণ ও বাকি ৫০ শতাংশ হবে অনুদান।
প্রদা/ডিও