সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস ঢালাও দরপতনের পর দ্বিতীয় কার্যদিবস সোমবারও (১৪ সেপ্টেম্বর) দেশের শেয়ারবাজারে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের দরপতন হয়েছে। দাম কমার তালিকায় বেশি প্রতিষ্ঠান থাকার পরও প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মূল্যসূচক বেড়েছে। মূলত বেশিরভাগ ব্যাংকের শেয়ার দাম বাড়ায় সূচকের এ ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মিলেছি। সূচক বাড়লেও কমেছে লেনদেনের পরিমাণ।
অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) দাম কমার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। এরপরও ডিএসই’র মতো এ বাজারটিতেও মূল্যসূচক বেড়েছে। তবে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। ডিএসইতে গত ১৩ আগস্টের পর সর্বনিম্ন লেনদেন হয়েছে।
গত সপ্তাহের মঙ্গলবার ও বুধবার দেশের শেয়ারবাজারে ঢালাও দরপতন হয়। দুদিনে ডিএসই’র প্রধান মূল্যসূচক কমে ১৫৪ পয়েন্ট। এমন পতনের পর বৃহস্পতিবার শেয়ারবাজারে মূল্যসূচকের কিছুটা উত্থান হয়। তবে চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিব রোববার আবারও শেয়ারবাজারে ঢালাও দরপতন হয়।
এ পরিস্থিতিতে সোমবার শেয়ারবাজারে ব্যাপক অস্থিরতা দেখা গেছে। কয়েক দফার উত্থান-পতনের মাধ্যমে লেনদেনের প্রথম তিন ঘণ্টা বাজার ঊর্ধ্বমুখীই থাকে। কিন্তু শেষ দেড় ঘণ্টায় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের দরপতন হয়। অবশ্য এরমধ্যেও দাম বাড়ার ধারা ধরে রাখে বেশিরভাগ ব্যাংক। ফলে দরপতনের তালিকা বড় হলেও মূল্যসূচক বেড়েই দিনের লেনদেন শেষ হয়।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে সব খাত মিলে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ১১৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ১৯৯টির। আর ৬৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। অপরদিকে ২০টি ব্যাংকের শেয়ার দাম বাড়ার বিপরীতে তিনটির দাম কমেছে। বাকি ১৩টি ব্যাংকের শেয়ার দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এদিকে ভালো কোম্পানি বা ১০ শতাংশ অথবা তার বেশি লভ্যাংশ দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৭২টির শেয়ার দাম বেড়েছে। বিপরীতে ১০৯টির দাম কমেছে এবং ৪৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। মাঝারি মানের বা ১০ শতাংশের কম লভ্যাংশ দেওয়া ২১টি কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়ার বিপরীতে ৪৯টির দাম কমেছে এবং ১২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ না দেওয়ার কারণে পচা ‘জেড’ গ্রুপে স্থান হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ২৪টির শেয়ার দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৪১টির এবং ৩১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। আর তালিকাভুক্ত ৩৬টি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৪টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে ১২টির দাম কমেছে এবং ২০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এরপরও ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৬ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৪৭৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৫ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ১৩৫ পয়েন্টে উঠে এসেছে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক দশমিক ৯৬ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ১৮৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
মূল্যসূচক বাড়লেও ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ কমেছে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৭০৬ কোটি ৩২ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৭৩২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। এ হিসেবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন কমেছে ২৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এর মাধ্যমে গত ১৩ আগস্টের পর ডিএসইতে সব থেকে কম লেনদেন হলো।
এ লেনদেনে সব থেকে বড় ভূমিকা রেখেছে টেকনো ড্রাগসের শেয়ার। কোম্পানিটির ২৪ কোটি ৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকার। ২০ কোটি ৬৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ, মিডল্যান্ড ব্যাংক, রবি, প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল, ডমিনেজ স্টিল বিল্ডিং, ফাইন ফুডস এবং এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিল।
অন্য শেয়ারবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৬ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২১৯ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৭০টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১১৬টির এবং ৩৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ১২ কোটি ৩ লাখ টাকা।
প্রদা/ডিও